বিশ্বজুড়ে বাংলা, বিশ্বজুড়ে প্রথম আলো- মনে হয় কুলিয়ারচরেই আছি by কাউসার খান

থাকি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে, কিন্তু মনে হয় কুলিয়ারচরেই আছি, এর প্রধান কারণ প্রথম আলো। প্রথম আলোর ওয়েব দিয়েই সকাল হতে না-হতেই চট করে ঘুরে আসি দেশে দেশে—পুরো বাংলাদেশে। এ-পাতা ও-পাতা ঘুরে ঘুরে ভুলে যাই কোথায় আমি—দেশে, না বিদেশে।
বিদেশ থেকে বাড়ি ফেরার সাংঘাতিক এক রোগ আছে আমার। বছরে অনেকবার দেশে আসি শুধু শক্তি নিয়ে আবার ফিরে যাওয়ার জন্য। এ নিয়ে আমার মহলে প্রচণ্ড দুর্নামও আছে কিন্তু আমি জানি, এ দুর্নাম আরও বেড়ে যেত, যদি-না ওয়েবে প্রথম আলো থাকত।
এখন স্মার্টফোনের কল্যাণে প্রথম আলো পকেটেই থাকে। যেমন সকালে দেখি তেমন সারা দিনই দেখতে থাকি প্রথম আলোর সর্বশেষ খবরগুলো। কিন্তু যখন স্মৃতিকাতর হই, মনে পড়ে, ১২ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় আসার প্রথম দিনগুলোয় যেদিন প্রথম নেটে প্রথম আলো দেখেছিলাম, কতটা রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম! মনে হয়েছিল, এই তো দেশেই আছি, দেশের সঙ্গেই আছি অথচ ছিলাম যোজন যোজন দূরে। কী শান্ত অনুভূতি। এই সিডনিতে বসে প্রথম আলো পড়া একটা দারুণ খবর হিসেবে তখন এখানে-সেখানে, বাঙালি পরিবেশে বলে বেড়িয়েছি।
এখন প্রথম আলো পড়াটা একটা অভ্যাস, একটা নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা ছাড়া চলেই না। সারাক্ষণ লেগে থাকি ওর পেছনে। তবে আমার প্রিয় শিশির ভট্টাচার্য্যের কার্টুন অনেকটা কমই থাকে ইদানীং। এটা খুব মিস করি।
ফিচার পাতাগুলোর মাঝে ‘ছুটিরদিনে’, ‘রস+আলো’, ‘আনন্দ’, ‘প্রজন্ম ডট কম’, ‘সাহিত্য সাময়িকী’ বেশি পড়ি। আমি রাশিতে একদমই বিশ্বাস করি না কিন্তু কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখনী ঢঙের কারণে খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি তাঁর রাশিকথন। আর আমি পত্রিকা বের হওয়ার আগে থেকেই বরণ করে নিয়েছিলাম প্রথম আলোকে। তখন আমাদের কুলিয়ারচরের সাজ্জাদ প্রথম আলোয় যোগ দিয়েছিল। ও-ই প্রথম আলোর স্টিকার ও অন্য প্রচারসামগ্রী নিয়ে এসেছিল তখন। প্রথম দেখাতেই লোগো, বিন্যাস ভালো লেগেছিল। সেই থেকে দেখে যাচ্ছি, পড়ে যাচ্ছি, একইভাবে যেমনি দেশে থাকতে, তেমনি বিদেশে এসেও প্রথম আলোর প্রতি ভালোবাসা কমেনি, বরং বেড়েছে।
একটা সময় ছিল প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, একুশে টেলিভিশন আমাকে স্বপ্ন দেখাত। সময়ের উত্থান-পতনে প্রথম আলো এখনো স্বপ্ন দেখায় বদলে যাওয়া বাংলাদেশের। আমার বিশ্বাস, প্রথম আলোর হাত ধরে আমাদের বদলে যাওয়ার দিন বেশি দূরে নেই। আমি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অভিবাসন আইনজীবী হিসেবে কাজ করি। কাজের চাপে যখন ক্লান্তি আসে, তখন যে কারণে আমি স্বস্তি পাই, তা হলো, আর কিছুক্ষণ পরই তো অবসর, আর অবসর মানেই প্রিয় পত্রিকার কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ।
বদলে দিতে যেমন অগ্রগামী, মানের দিক থেকেও প্রথম আলো নিঃসন্দেহে একটি বিশ্বমানের সংবাদপত্র। আমি সিডনি মর্নিং হেরাল্ডও দেখি, বিশ্বের অন্যতম সেরা পত্রিকাগুলোর একটি এটি। ভাষা ও জাতীয় ইস্যুগুলো ছাড়া প্রথম আলোর উপস্থাপন, শৈলী, সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে কোনো অংশেই কম নয় ওই বিশ্বসেরা পত্রিকা থেকে। বরং কখনো কখনো সামর্থ্য বিবেচনায় বেশিই মনে হয় প্রথম আলোর আয়োজন। পত্রিকা যে শুধু সংবাদ পরিবেশক নয়, এটি একটি আন্দোলনও, ভালো কিছু করার, মুক্ত কিছু করার—প্রথম আলো তার প্রমাণ। পত্রিকাটির সামাজিক আন্দোলন ও দায় আমাকেও আন্দোলিত করে একটা ভালো কিছু করার, মুক্ত কিছু করার জন্য। যে বিশ্বে আমার বসবাস, তাঁদের কেউ কেউ মাঝেমধ্যে যদিও প্রথম আলোর জাতীয় সংবাদ পরিবেশন এবং এর বিশ্লেষণ নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন। কিন্তু আমি জানি, এত শত মতপ্রকাশের মাঝে ভিন্নতা থাকে, থাকবেই। আমি বিশ্বাস করি, প্রথম আলো যা কিছু ভালো তার সঙ্গেই থাকে এবং থাকবে।
তাই প্রথম আলো আমার কাছে মা, মাটি ও দেশের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম। দূর প্রবাসে বসে এর মধ্য দিয়েই অনুভব করি এই প্রিয়তম সম্পদগুলোকে। জয়তু প্রথম আলো।
কাউসার খান
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
kawsark@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.