আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনে ভয়াবহ আগুন- আগুনে ৯ পোশাককর্মীর মৃত্যু

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় গতকাল শনিবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, এ ঘটনায় নয়জন পোশাকশ্রমিক মারা গেছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক লোক। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রচণ্ড ধোঁয়া ও পানির সংকটের কারণে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হয়। রাত একটা ৩৫ মিনিটে এ খবর লেখা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভবনের নিচতলায় ঢুকতে পারলেও অন্য কোনো তলায় পৌঁছাতে পারেননি। দোতলাসহ পুরো ভবনের পেছনের অংশে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল। কারখানার চারপাশে ছিল হাজারো উদ্বিগ্ন স্বজন।
কয়েকজন শ্রমিক দাবি করেছেন, কারখানাটিতে জরুরি নির্গমন পথ ছিল না। তবে মালিকপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে তোবা গ্রুপের তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেড নামের ওই পোশাক কারখানার নয়তলা ভবনের নিচতলার গুদামে আগুন লাগে। ধীরে ধীরে তা নয়তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ওই কারখানায় বিপুলসংখ্যক শ্রমিক কাজ করছিলেন। আগুন দেখে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে এবং দগ্ধ হয়ে শতাধিক আহত হন। অনেকেই আটকা পড়েন ভবনের ভেতরে। প্রাণে বাঁচতে অনেকে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হন।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ঘটনাস্থলে দুই নারী ও এক পুরুষ, স্থানীয় নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চারজন এবং ঢাকায় দুজন মারা গেছেন।
অগ্নিকাণ্ডে তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেডের এই ভবনের পেছনেই শহীদ গাজীর বাড়ির ২৮টি কক্ষ পুড়ে যায়। এই বাড়িতে স্থানীয় বিভিন্ন কারখানার পোশাকশ্রমিকেরা থাকতেন।
নিহত শ্রমিকদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় মিলেছে। তাঁরা হলেন: মরিয়ম, শারমিন, মারুফ, আবদুল কাদের ও জুলেখা। অন্যদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। নিহত আবদুল কাদেরের এক স্বজন জানান, তিন সন্তানের বাবা কাদের এই কারখানার চতুর্থ তলায় অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। আগুন লাগার খবর পেয়ে তিনি লাফিয়ে পড়েন। এতে তাঁর মৃত্যু হয়। কাদেরের গ্রামের বাড়ি নাটোর।
অন্যরাও লাফিয়ে পড়ে মারা গেছেন বলে জানা গেছে। আহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নারী শ্রমিক। অগ্নিদগ্ধ বহু নারী শ্রমিককে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। অন্তত ২৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই কারখানার শ্রমিক মনির হোসেন জানান, সাতটার দিকে আগুন লাগার পরপরই বিপৎসংকেত বাজানো হয়। এ সময় প্রাণভয়ে সবাই তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে আহত হন।
তোবা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সুমন ফারুকের বক্তব্যমতে, কারখানায় আড়াই শ থেকে তিন শর মতো শ্রমিক ছিলেন। বিকেল পাঁচটার দিকে কিছু শ্রমিক কাজ শেষে চলে যান। তবে তৃতীয় তলার ফ্লোর ইনচার্জ কামরুল হাসান জানান, কেবল তাঁর ফ্লোরেই আড়াই শ শ্রমিক ছিলেন। তিনিসহ প্রায় ২০০ জন বের হতে পেরেছেন। অন্যরা আটকা পড়েছেন। তাঁর ভাবি হেনা বেগম ও ভাতিজি রেশমা ভেতরে আটকে পড়েছেন। তাঁদের মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে বলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি জানান।
সোহরাব হোসেন নামের ওই কারখানার এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, চীন থেকে আমদানি করা সাড়ে তিন কোটি টাকার সুতা এক দিন আগেই এনে রাখা হয়েছিল। একতলার গুদামে ওই সুতা ও কাপড় ছিল। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তোবা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেলোয়ার হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার এই কারখানায় অন্য সব কারখানার মালামাল ছিল। ৫০০ টনের বেশি সুতা ছিল। সব শেষ। জানি না, আমার আর আমার কারখানার কর্মীদের ভবিষ্যৎ কী?’ তিনি জানান, ভবনে থাকা প্রায় দুই হাজার মেশিন, একটি ডিজিটাল কাটিং মেশিন ও একটি জেনারেটর পুড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নাঈম মোহাম্মদ শাহিদউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে। তবে তদন্ত ছাড়া কিছু বলা যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.