মন্ত্রীর পাহাড়সম কষ্ট, কবিতা ও জাতীয় শোক! by মাহমুদ মেনন
মন্ত্রী এসে তথ্য দিলেন, ৭৬টি লাশ শনাক্ত করা যায়নি, ২৪টি শনাক্ত হয়েছে, ১১টি লাশ আত্মীয়রা নিয়ে গেছেন। এই ঘোষণা দিতে মন্ত্রীকে কম কষ্ট করতে হয়নি। দীর্ঘ ৫০ কিলোমিটার পথ গাড়ি চেপে পৌঁছাতে হয়েছে আশুলিয়ায়।
নিশ্চিন্তপুরে পৌঁছেই যে নিশ্চিন্ত হয়ে গেলেন তাও নয়। গাড়ি থেকে নেমে মন্ত্রী মহোদয়কে হাঁটতে হলো কোয়ার্টার কিলোমিটার। মন্ত্রীতো যাবেনই, কারণ যে কারখানাটি রাতভর আগুনে পুড়লো তা তো অন্তত একবার নিজ চোখে দেখতে হয়। সরকারের কেউ না কেউ সেখানে না গেলে ব্যাপারটাও ভালো দেখায় না। তাই যেতে তো হবেই। আর কিছু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার বিষয় তো থাকেই!
বেয়াড়া জনগণকে সামলাতে র্যাব-পুলিশকে ধকল কম পোহাতে হয়নি। কিন্তু মন্ত্রীর জন্য রাস্তা ফাঁকা হবে সে তো অনিবার্য। একটু ত্রস্ত পায়েই হাঁটলেন মন্ত্রী। কারখানার সামনে থেকেই চলে যাবেন তাও তো হয় না, তাই একবার ভেতরেও ঢুকলেন। ‘হায় হায় এইভাবে পুড়েছে!!’ ৯ তলা ভবনের ৩য়, চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম তলায় মানুষ পুড়ে কয়লা হয়েছে তার কিছুই না দেখে স্রেফ নিচতলায় পুড়ে যাওয়া সুতোর লট দেখেই মন্ত্রীর এই কষ্টোক্তি।
তবে এতকিছু যে করলেন তাতে মন্ত্রীর স্বস্তির অভাব ছিলো না। কারণ তার সামনে মিডিয়ার ক্যামেরাতো সারাক্ষণই অন। কারখানা দর্শনের পর লাশ দর্শনও হলো ক্যামেরার সামনে। অতঃপর কাব্য দিয়ে শুরু- ‘কিছু কিছু মৃত্যু আছে পালকের মতো হালকা... কিছু কিছু মৃত্যু আছে পাহাড়ের মতো ভারি।’
আমরা জেনে আনন্দিত ১১১টি লাশ মন্ত্রীর কাছে পাহাড়ের মতো ভারি লেগেছে। মন্ত্রী আরো জানালেন, এতো লাশ এতো মৃত্যু সরকারকে ব্যথিত করেছে। সরকার ভাবছে জাতীয় শোক ঘোষণা করার কথা। কারণ তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের জন্য, মন্ত্রীর ভাষায়, ‘দুগ্ধবতী গাভী’। তাই এই গাভী জাতীয় ইস্যু। অতএব এই মৃত্যুতে জাতীয় শোক হতেই পারে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টিতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। ঘোষণা যাই হোক প্রশ্ন এভাবে কয়টি জাতীয় শোক করবে সরকার? কতবার করবে? দুগ্ধবতী গাভীর দুধটাই যে শুরু খায় এই দেশ। তার ভরণ-পোষণ কী করে?
কই ৯তলা গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে তো ছিলো না কোনো ইমার্জেন্সি এক্সিট। কারখানার সামনে দাঁড়িয়ে সে নিয়ে তো একবারও বিষ্ময় প্রকাশ করলেন না মন্ত্রী। আসলে কি মন্ত্রী জানেন না প্রতিটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে ইমার্জেন্সি এক্সিট থাকা বাঞ্ছনীয়। এবং এটি কম্পøায়ান্সের অংশ। শুনেছি নন কম্পø্যায়ান্সের অভিযোগ নাজরিন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির বিরুদ্ধে আগে থেকেই ছিলো। সে দিকটা ঘেটে দেখা তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব হয়নি। তবে এটিতো অবশ্যই সত্য, এই কারখানা ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টরের লাইসেন্স নিয়ে, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফায়ার লাইসেন্স নিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলো। কারণ, এগুলো না হলে রপ্তানি সামগ্রী উৎপাদন ও তা রপ্তানি করার সুযোগ থাকার কথা নয়।
এসব কারণেই কি মন্ত্রী বললেন অন্তর্ঘাতের কথা! কোনো সাংবাদিকের প্রশ্নোত্তরে নয়, নিজে থেকেই তিনি বললেন, “এই অগ্নিকা- অন্তর্ঘাতমূলক কী না তা খতিয়ে দেখা হবে।” জানতে চাওয়া হলো মাননীয় মন্ত্রী কী ধরনের অন্তর্ঘাতের কথা বলছেন। কোনো সন্দেহ রয়েছে কি না? হয়তো পাল্টা প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তাই উত্তরটি গোছানো হলো না। বললেন, না সেরকম নয়, কেউ কেউ এখানে অভিযোগ করছেন তো সেই জন্য বলা।
যাই হোক হতে পারে অন্তর্ঘাত, সে সন্দেহ তো রয়েছেই। রাতভর আগুনে পুড়লো কারখানা। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ৯ ঘণ্টায়ও আগুন নেভাতে পারলেন না। কারখানার ভেতরের শেষ দাহ্যবস্তুটিতে পুড়িয়ে আর তার সঙ্গে শতাধিক তাজা দেহপ্রাণ পুড়িয়ে দিয়ে দানব আগুন হয়তো নিজেই নিভেছে। মন্ত্রী না হয় ১৬ ঘণ্টা পরে এসেছেন। কিন্তু আগুন লাগার দেড় ঘণ্টার মধ্যে বাংলানিউজসহ মিডিয়ার যেসব কর্মী সেখানে হাজির হয়েছিলেন তারা তো অসহায়ের মতো দেখেছেন, জ্বলছে আগুন। রাত যত গভীর হচ্ছিলো আগুনের তীব্রতা ততই বাড়ছিলো। তারা শুনেছেন ফটাস-ফটাস শব্দে ফুটছে গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকদের মাথার খুলি। বাতাসে পোড়া লাশের গন্ধ নিয়ে তারা তো রাতভর জানিয়েছিলেন সেই বিভীষিকার কথা।
মন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলো, এত সময় কেনো লাগলো আগুন নেভাতে? তারও উত্তরে তিনি জানালেন- বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। উদ্ধার কাজ শেষ হলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটিই তদন্ত করে বের করবে অন্তর্ঘাতের বিষয়টি। তারাই দেখবে নেভানোর সময় কেনো এত বেশি লাগলো।
তবে মন্ত্রী কিন্তু জানাতে ভুললেন না, হতাহতের ঘটনায় সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু কত দেবে তার উত্তর দিতে পারলেন না। বললেন- এটি জানানো হবে। আর কাকে দেবেন ক্ষতিপূরণ? যেখানে লাশই শনাক্ত করা গেলো না। সরকারের তথ্যেই ৭৬টি লাশ কয়লা। চেনার উপার নেই। আর প্রত্যক্ষদর্শীদের বা উদ্ধারকারী কর্মীদের ভাষায় -তারা ফ্লোরে যা পেয়েছেন তা আস্ত লাশ নয়। অনেক লাশের গলিত দলা। তাহলে কে মারা গেলো- কতজন মারা গেলো- তা কিভাবে নির্ধারণ করা হবে? সরকার কী শ্রমিকদের রেজিস্ট্রার খাতাটি পাবে? কারখানার মালিকের সঙ্গে সরকারের কোনো পক্ষের কী কথা হয়েছে? কিংবা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কি খুঁজছে দেলোয়ার হোসেন নামের সেই মালিককে? বিজিএমইএ’র কাছেই বা তার ব্যাপারে কি তথ্য আছে? এসব জানা এখন সত্যিই জরুরি।
তবে এতকিছু যে করলেন তাতে মন্ত্রীর স্বস্তির অভাব ছিলো না। কারণ তার সামনে মিডিয়ার ক্যামেরাতো সারাক্ষণই অন। কারখানা দর্শনের পর লাশ দর্শনও হলো ক্যামেরার সামনে। অতঃপর কাব্য দিয়ে শুরু- ‘কিছু কিছু মৃত্যু আছে পালকের মতো হালকা... কিছু কিছু মৃত্যু আছে পাহাড়ের মতো ভারি।’
আমরা জেনে আনন্দিত ১১১টি লাশ মন্ত্রীর কাছে পাহাড়ের মতো ভারি লেগেছে। মন্ত্রী আরো জানালেন, এতো লাশ এতো মৃত্যু সরকারকে ব্যথিত করেছে। সরকার ভাবছে জাতীয় শোক ঘোষণা করার কথা। কারণ তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের জন্য, মন্ত্রীর ভাষায়, ‘দুগ্ধবতী গাভী’। তাই এই গাভী জাতীয় ইস্যু। অতএব এই মৃত্যুতে জাতীয় শোক হতেই পারে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টিতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। ঘোষণা যাই হোক প্রশ্ন এভাবে কয়টি জাতীয় শোক করবে সরকার? কতবার করবে? দুগ্ধবতী গাভীর দুধটাই যে শুরু খায় এই দেশ। তার ভরণ-পোষণ কী করে?
কই ৯তলা গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে তো ছিলো না কোনো ইমার্জেন্সি এক্সিট। কারখানার সামনে দাঁড়িয়ে সে নিয়ে তো একবারও বিষ্ময় প্রকাশ করলেন না মন্ত্রী। আসলে কি মন্ত্রী জানেন না প্রতিটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে ইমার্জেন্সি এক্সিট থাকা বাঞ্ছনীয়। এবং এটি কম্পøায়ান্সের অংশ। শুনেছি নন কম্পø্যায়ান্সের অভিযোগ নাজরিন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির বিরুদ্ধে আগে থেকেই ছিলো। সে দিকটা ঘেটে দেখা তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব হয়নি। তবে এটিতো অবশ্যই সত্য, এই কারখানা ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টরের লাইসেন্স নিয়ে, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফায়ার লাইসেন্স নিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলো। কারণ, এগুলো না হলে রপ্তানি সামগ্রী উৎপাদন ও তা রপ্তানি করার সুযোগ থাকার কথা নয়।
এসব কারণেই কি মন্ত্রী বললেন অন্তর্ঘাতের কথা! কোনো সাংবাদিকের প্রশ্নোত্তরে নয়, নিজে থেকেই তিনি বললেন, “এই অগ্নিকা- অন্তর্ঘাতমূলক কী না তা খতিয়ে দেখা হবে।” জানতে চাওয়া হলো মাননীয় মন্ত্রী কী ধরনের অন্তর্ঘাতের কথা বলছেন। কোনো সন্দেহ রয়েছে কি না? হয়তো পাল্টা প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তাই উত্তরটি গোছানো হলো না। বললেন, না সেরকম নয়, কেউ কেউ এখানে অভিযোগ করছেন তো সেই জন্য বলা।
যাই হোক হতে পারে অন্তর্ঘাত, সে সন্দেহ তো রয়েছেই। রাতভর আগুনে পুড়লো কারখানা। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ৯ ঘণ্টায়ও আগুন নেভাতে পারলেন না। কারখানার ভেতরের শেষ দাহ্যবস্তুটিতে পুড়িয়ে আর তার সঙ্গে শতাধিক তাজা দেহপ্রাণ পুড়িয়ে দিয়ে দানব আগুন হয়তো নিজেই নিভেছে। মন্ত্রী না হয় ১৬ ঘণ্টা পরে এসেছেন। কিন্তু আগুন লাগার দেড় ঘণ্টার মধ্যে বাংলানিউজসহ মিডিয়ার যেসব কর্মী সেখানে হাজির হয়েছিলেন তারা তো অসহায়ের মতো দেখেছেন, জ্বলছে আগুন। রাত যত গভীর হচ্ছিলো আগুনের তীব্রতা ততই বাড়ছিলো। তারা শুনেছেন ফটাস-ফটাস শব্দে ফুটছে গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকদের মাথার খুলি। বাতাসে পোড়া লাশের গন্ধ নিয়ে তারা তো রাতভর জানিয়েছিলেন সেই বিভীষিকার কথা।
মন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলো, এত সময় কেনো লাগলো আগুন নেভাতে? তারও উত্তরে তিনি জানালেন- বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। উদ্ধার কাজ শেষ হলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটিই তদন্ত করে বের করবে অন্তর্ঘাতের বিষয়টি। তারাই দেখবে নেভানোর সময় কেনো এত বেশি লাগলো।
তবে মন্ত্রী কিন্তু জানাতে ভুললেন না, হতাহতের ঘটনায় সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু কত দেবে তার উত্তর দিতে পারলেন না। বললেন- এটি জানানো হবে। আর কাকে দেবেন ক্ষতিপূরণ? যেখানে লাশই শনাক্ত করা গেলো না। সরকারের তথ্যেই ৭৬টি লাশ কয়লা। চেনার উপার নেই। আর প্রত্যক্ষদর্শীদের বা উদ্ধারকারী কর্মীদের ভাষায় -তারা ফ্লোরে যা পেয়েছেন তা আস্ত লাশ নয়। অনেক লাশের গলিত দলা। তাহলে কে মারা গেলো- কতজন মারা গেলো- তা কিভাবে নির্ধারণ করা হবে? সরকার কী শ্রমিকদের রেজিস্ট্রার খাতাটি পাবে? কারখানার মালিকের সঙ্গে সরকারের কোনো পক্ষের কী কথা হয়েছে? কিংবা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কি খুঁজছে দেলোয়ার হোসেন নামের সেই মালিককে? বিজিএমইএ’র কাছেই বা তার ব্যাপারে কি তথ্য আছে? এসব জানা এখন সত্যিই জরুরি।
No comments