কেইপিজেডের অলস ভূমি-দেশের স্বার্থে এর সর্বোত্তম ব্যবহার চাই
স্যামসাং, সনি করপোরেশন, সুমিতোমা করপোরেশনের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। কিন্তু বিনিয়োগ উপযোগী জায়গা দিতে না পারায় তারা প্রায় সবাই ফিরে গেছে।
অথচ ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় কোরিয়ার ইয়ংওয়ান করপোরেশনকে একটি এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড) করার জন্য নামমাত্র মূল্যে প্রায় আড়াই হাজার একর জমি দিয়ে রাখা হয়েছে, যেখানে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তারা প্রায় কিছুই করেনি। কথা ছিল প্রথম ১০ বছরে সেখানে ২০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ আসবে, ক্রমান্বয়ে তা হাজার কোটি ডলারে পৌঁছবে। দেশের এক লাখ মানুষ সেখানে কাজের সুযোগ পাবে। বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। ১৬ বছরে সেখানে মাত্র একটি পাঁচতলা অফিস ভবন ও চারটি আধাপাকা ঘর নির্মিত হয়েছে, যার একটিতে চালু হয়েছে একটি জুতার কারখানা। অথচ কথা ছিল সেখানে ২০ ও ৪০ চাকাবিশিষ্ট ট্রেইলার চলার উপযোগী রাস্তা তৈরি হবে, কাস্টমস বন্ডেড দেয়াল, কাস্টম হাউস, কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার ও ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এসবের কিছুই করা হয়নি। অন্যদিকে দেশের প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা একের পর এক পাহাড় কেটে সাফ করে দিচ্ছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশ পর্যন্ত উপেক্ষিত হচ্ছে। কোরিয়ান কম্পানিটির প্রতি আমাদের এমন অনৈতিক দুর্বলতা কেন? সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী কেইপিজেডের এসব অনিয়ম অবগত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন বলে জানা গেছে। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর এই ক্ষোভ যথার্থ এবং তাঁর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অথচ প্রায় ১৬ কোটি জনসংখ্যার ক্ষুদ্র দেশে সবার কর্মসংস্থানের জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ তথা ব্যাপক শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু জমি দিতে না পারায় যদি গুরুত্বপূর্ণ সব বিদেশি বিনিয়োগ ফিরে যায়, তাহলে দেশের শিল্পায়নের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের শঙ্কা প্রকাশ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। দেশের আটটি সরকারি ইপিজেডে যেখানে মোট জমির পরিমাণ দুই হাজার ৫৮৬ একর, সেখানে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে আড়াই হাজার একর জমি কেন দেওয়া হলো- সেটাই আমাদের প্রশ্ন। তার পরও যে প্রতিষ্ঠান ১৬ বছর ধরে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না, দেশের প্রচলিত আইন ভঙ্গ করছে, তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন- তাও আমাদের বোধগম্য নয়। দেশের স্বার্থে এবং শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে অবিলম্বে কেইপিজেডের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।
দেশে বিদ্যুতের চরম দুরবস্থার মধ্যেও বেশ কিছু বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ উপযুক্ত জায়গার অভাবে শুরু করা যাচ্ছে না। অথচ দেশের শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করার জন্য বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। আমরা মনে করি, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কেইপিজেডকে দেওয়া কিছু জমির লিজ বাতিল করে সেখানে অবিলম্বে একটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে। বিদ্যুতের অভাব পূরণ হলে সেটিও বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে। আমরা মনে করি, বিপুল জনসমর্থন পাওয়া বর্তমান সরকার দেশ ও মানুষের স্বার্থে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে কোনো রকম দ্বিধা করবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিপুল জনসংখ্যার দেশে প্রতি ইঞ্চি জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করাটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
No comments