চরাচর-নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস by সুস্মিতা সাহা
জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে বিধাতার হাতেই নিয়ন্ত্রিত; যদিও চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতি আমাদের জন্ম-মৃত্যুকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করছে এবং এর সুফল আমরা প্রতি মুহূর্তেই ভোগ করছি। তবে সব কিছুরই ভালো-মন্দ দুটি দিক থাকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতি যেমন জন্ম নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করছে, আবার তেমনি ভ্রূণ হত্যার মতো অপরাধেও সহায়তা করছে।
শিশু মাতৃগর্ভে থাকতেই জেনে নেওয়া যায় ছেলে না মেয়ে। শিশুটি ছেলে হবে না মেয়ে, তা মা-বাবা কেউই নির্ধারণ করতে পারেন না; তবু যেহেতু মা শিশুকে গর্ভে ধারণ করেন তাই এর জন্য প্রচলিত ধারণায় মাকেই দায়ী করা হয়। অবশ্য বিজ্ঞান বলে, শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণে ভূমিকা রাখেন বাবা, তবে নিশ্চিতভাবেই তা তার ইচ্ছানির্ভর নয়। তাই বলা চলে বিষয়টি বিধাতা দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত। তবু ভ্রূণ হত্যা করা হয়। আর এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় মায়ের মতামত নেওয়া হয় না। এর মধ্য দিয়েই শুরু হয় নারী নির্যাতন। মেয়েশিশু গর্ভে ধারণ ও জন্ম দেওয়ার অপরাধে মায়ের ওপর নির্যাতন। মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়ার জন্য জন্মলগ্ন থেকে যে অবহেলা শুরু হয়, তা চলে জীবনভর আর পাশাপাশি যুক্ত হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।আজ আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। দক্ষিণ আমেরিকার ডমিনিকান রিপাবলিকের স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ১৯৬০ সালের ২৫ নভেম্বর প্যাট্রিয়া, মারিয়া তেরেসা ও মিনার্ভা মিরাবেল নামে তিন বোনকে হত্যা করা হয়। নারীর ওপর এই নির্যাতন বিশ্বের নারী সমাজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফলে ১৯৮১ সালে দক্ষিণ আমেরিকার নারীদের এক সম্মেলনে ২৫ নভেম্বরকে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিভিন্ন নারী আন্দোলনকারী সংগঠন ১৯৮১ সাল থেকে এই দিনটিকে যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বসহকারে পালন করে আসছে। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘে নারীর প্রতি সহিংসতা বিলোপ-সংক্রান্ত একটি বিলে উল্লেখ করা হয়েছিল, 'যেকোনো ধরনের কাজ, যা নারীর দৈহিক বা মানসিক ক্ষতির কারণ হয়, অথবা সামাজিক ও ব্যক্তিজীবনে নারীর স্বাধীনতাকে হরণ করে, তা-ই নারীর প্রতি সহিংসতা বা নির্যাতনের মধ্যে পড়ে।' বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় নারী নির্যাতনের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর গৃহীত এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করে। বাংলাদেশেও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, গ্রহণ করা হয়েছে নানা রকম আইনি ব্যবস্থা। কিন্তু কোনো কিছুই নির্যাতন বন্ধ করতে পারছে না। আইনের সঠিক বাস্তবায়ন, সর্বোপরি মানসিকতার পরিবর্তন ছাড়া নারী নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ জন্য আমাদের সবাইকে একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে।
সুস্মিতা সাহা
No comments