অস্ত্রবিরতির দুই দিন না যেতেই গাজায় ইসরায়েলের গুলি
অস্ত্রবিরতি কার্যকরের দুই দিন না যেতেই গতকাল শুক্রবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে গাজা সীমান্তে একজন ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত ও নয়জন আহত হয়েছেন। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন দাবি করে বলেছে, এর ফলে অস্ত্রবিরতির শর্ত ভঙ্গ হয়নি।
এদিকে, অস্ত্রবিরতির পর গাজা ও ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। মানুষের কোলাহল আর গাড়ির জটলায় আবারও মুখরিত হতে শুরু করেছে দুই জনপদের পথঘাট।সূত্র জানায়, গাজার কয়েক ব্যক্তি গতকাল ইসরায়েলি সীমান্তে একটি সাঁজোয়া যানের ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করতে যান। এ সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে একজন নিহত হন। ইসরায়েল দাবি করেছে, গাজা থেকে বেশ কয়েকজন তাঁদের দেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন। তখন আকাশে ফাঁকা গুলি চালিয়ে তাঁদের নিবৃত্ত করা হয়।
গতকালের ঘটনার পর অস্ত্রবিরতি চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ও স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ-সংশয় আরও জোরালো হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এহুদ বারাক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, অস্ত্রবিরতির শর্ত ভঙ্গ করা হলে আবারও হামলা চালানো হবে। তিনি বলেন, এই অস্ত্রবিরতি নয় দিন, নয় সপ্তাহ কিংবা এর বেশি সময় ধরেও কার্যকর থাকতে পারে। তবে অস্ত্রবিরতির শর্ত ভঙ্গ করা হলে আবারও সামরিক হামলা শুরু করা হবে।
আর হামাস-প্রধান খালেদ মেশাল ইসরায়েলের উদ্দেশে বলেছেন, ‘তোমরা শর্ত মানলে আমরাও মানব। আর তোমরা না মানলে আমাদের হাতে রাইফেল তো রয়েছেই।’
এদিকে রাশিয়া বলেছে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার সংকট সমাধানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ—এই চারটি পক্ষকে আরব দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই লাভরভ মনে করেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় বর্তমান কাঠামোতে পরিবর্তন আনা দরকার।
ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাসের একজন প্রতিনিধি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কেননা এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আনতে আরও বেশি আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
অস্ত্রবিরতিকে ‘বিজয়’ হিসেবে উল্লেখ করে হামাস সরকার বৃহস্পতিবার গাজায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। গাজা শহরের কেন্দ্রস্থলে আয়োজন করে এক বিশাল সমাবেশের। এতে অংশ নেওয়া লোকজন হইহুল্লোড় করে এবং কেউ কেউ আকাশে ফাঁকা গুলি ছুড়ে অস্ত্রবিরতি চুক্তি উদ্যাপন করেছে।
গাজায় পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে হাজারো মানুষের উদ্দেশে হামাস সরকারের প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল হানিয়াহ বলেন, ‘অস্ত্রবিরতি বলবৎ হওয়ার পর থেকে যাঁরাই এর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছে, তাঁদের অভিবাদন জানাই। আমি সবাইকে চুক্তি মেনে সেই অনুযায়ী কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি অস্ত্রবিরতির বিষয়ে মধ্যস্থতা করার জন্য মিসরের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুরসিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
হানিয়াহর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতাহ আন্দোলনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রী হানিয়াহকে এই ‘বিজয়ের’ জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।
গাজায় পথে পথে ফিলিস্তিনিরা এখনো উল্লাস করছে। ১৪ নভেম্বর পাল্টাপাল্টি হামলা শুরুর পর প্রাণে বাঁচতে যাঁরা চার দেয়ালে আটক ছিলেন, তাঁরা সবাই রাস্তায় নেমে এসেছেন। ঘাড়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে আসেন অনেক অভিভাবক। ওই সব শিশুর মুখে ছিল সবুজ বর্ণের ‘হামাস’ ও হলুদ বর্ণে ‘ফাতাহ’ লেখা। অনেকের হাতে ছিল দুটি সংগঠনেরই পতাকা। হামাস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এ রকম মেলবন্ধন খুব কমই দেখা যায়।
ইউসুফ জাদিদাহ (৬০) নামের এক গাজাবাসী বলেন, সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো, ফিলিস্তিনি জনগণ এক হয়েছে। আমার কাছে এই ভয়াবহ যুদ্ধের সেরা ও সবচেয়ে সুন্দর প্রাপ্তি হচ্ছে এটাই।’
আট দিন ধরে চলা সংঘর্ষে ১৬২ জন ফিলিস্তিনি ও পাঁচজন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। বিবিসি ও এএফপি।
No comments