অবহেলিত মানুষের প্রতি মনোযোগ- কর্মসূচির প্রতিটি পয়সার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে
আমাদের এই প্রিয় বাংলাদেশে আমাদেরই সঙ্গে যুগ যুগ ধরে বাস করছেন কয়েকটি পেশার মানুষ, যাঁরা সমাজের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন। তাঁদের জীবন ও জীবিকা এককথায় মানবেতর। সংবিধানের নির্দেশিত মৌলিক অধিকারগুলো যে তাঁদের বেলায়ও সমানভাবে প্রযোজ্য, এ কথা যেন ভুলে থাকতেই ভালোবাসে আমাদের সমাজ।
আমাদের শিক্ষার আলো ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ঝলক পৌঁছে না তাঁদের কাছে।সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় হিসাব করে দেখেছে, সমাজের একদম প্রান্তসীমায় বসবাসরত এসব মানুষের সংখ্যা মোট প্রায় ৬৩ লাখ। বেদে, হরিজন ও দলিত—মোটা দাগে এই তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করে মন্ত্রণালয় দেখেছে, বেদের সংখ্যা প্রায় আট লাখ, হরিজন ১৫ লাখ আর দলিতের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। বেদে সম্প্রদায়ের বাস প্রধানত ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, ঝিনাইদহ, যশোর, বরিশাল, ঝালকাঠি জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে। তবে হরিজন ও দলিত হিসেবে যাঁদের বর্ণনা করা হচ্ছে, তেমন জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে সারা দেশেই। হরিজনরা ভদ্র সমাজের কাছে ‘অস্পৃশ্য’, দলিত মানে দলন বা নিষ্পেষণের শিকার। সামাজিক মর্যাদা অনেক দূরের বিষয়, রুটি-রুজির সংগ্রামেও তাঁরা পর্যুদস্ত। বিশেষত বেদে সম্প্রদায়ের মধ্যে ৯৮ শতাংশ মানুষই বাস করেন দারিদ্র্যসীমার নিচে।
এই প্রান্তসীমার মানুষেরা সাধারণত সংবাদমাধ্যমেও জায়গা পান না। বড় কোনো বিপর্যয়ের শিকার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরেই থেকে যান। শনিবারের সংবাদপত্রগুলোতে তাঁরা জায়গা পেয়েছেন সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বদান্যতায়। এ মন্ত্রণালয় দেশজুড়ে ‘বেদে, দলিত ও হরিজন সম্প্রদায়ের জীবন উন্নয়ন’ নামে অভিনব এক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, যেমনটি এর আগের কোনো সরকার কখনোই করেনি। এক বছরের জন্য পরীক্ষামূলক এই কর্মসূচির জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ১০ কোটি টাকা। ২১ হাজার ৩৫০ জন মানুষের জন্য ব্যয় করা হবে এ অর্থ। নগদ এককালীন আর্থিক অনুদানের পাশাপাশি থাকবে নানা বিষয়ের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, ঋণ ও ভাতা পাওয়ার সুযোগ।
এমন শুভ কর্মসূচি গ্রহণের জন্য সরকার ধন্যবাদ পেতে পারে। এখন সবচেয়ে জরুরি কর্তব্য হলো, এ কর্মসূচির প্রতিটি পয়সার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা।
No comments