বিএনপিকে কঠোর কর্মসূচি দিতে চাপ জামায়াতের by মোশাররফ বাবলু ও শফিক সাফি
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ডাকা ২৮ নভেম্বরের জনসভা থেকে সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে বিএনপিকে নানাভাবে চাপ দিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি বিষয়টি ভেবে দেখবে বলে জানিয়েছে। দুই দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তবে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি নন সংশ্লিষ্ট নেতারা।জানা গেছে, পুলিশের ওপর জামায়াত-শিবিরের সাম্প্রতিক সময়ের হামলা ও তাণ্ডবের পরিপ্রেক্ষিতে এসবের দায় বিএনপি নেবে না বলে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জানিয়ে দেওয়ার পর জামায়াত কঠোর আন্দোলনের চাপ বাড়িয়েছে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের উদ্যোগে ঢাকায় ওই জনসভা হবে। জনসভা থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা। ২৮ নভেম্বরের আগে প্রথমে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র নেতারা আলোচনা করে কর্মসূচি ঠিক করবেন। পরে জোটের অন্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তা চূড়ান্ত করা হবে বলে বিএনপি সূত্রে জানা যায়। ওই জনসভায় প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, জামায়াত যেসব কর্মসূচির প্রস্তাব বিএনপির কাছে তুলে ধরেছে, সেসবের মধ্যে রয়েছে- ঢাকার প্রবেশপথ অবরোধ, দেশব্যাপী গণঅনশন, সচিবালয়ের সামনে অবস্থান, সারা দেশে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাও, বিভাগীয় পর্যায়ে সভা-সমাবেশ এবং নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা। এ ছাড়া তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় হলে তাৎক্ষণিকভাবে সারা দেশে হরতাল আহ্বান, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগরী, জেলা শহর ও উপজেলা শহরে গণমিছিল করার প্রস্তাবও দিয়েছে জামায়াত।
তবে বিএনপি সূত্রে জানা যায়, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে এক দফা আন্দোলন নিয়েই সামনে এগোবে দলটি। তাদের লক্ষ্য আগামী নির্বাচন। নির্বাচনী জনসভা যেভাবে করা হয়, সেই ধাঁচে বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ করবেন খালেদা জিয়া। দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাবেন তিনি। ২৮ নভেম্বরের জনসভা থেকে এ রকম কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তিনি। মানবপ্রাচীর এবং টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত মানববন্ধনসহ কিছু ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচিও থাকতে পারে। বেশি জনসম্পৃক্ততার বিষয়টি বিবেচনা করেই এ ধরনের কর্মসূচির কথা ভাবছে দলটি। ঢাকায় সদরঘাট থেকে উত্তরা, আর যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলী পর্যন্ত 'মানবপ্রাচীর' গড়ে তোলার কর্মসূচি দিতে পারে বিএনপি। ডিসেম্বর থেকেই শুরু হবে কর্মসূচি। মার্চে গিয়ে আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার চিন্তা আছে তাদের। একই সময়ে সংগঠন শক্তিশালী করা এবং নির্বাচনের জন্য দলকে প্রস্তুত রাখার কর্মসূচিও হাতে রাখবে দলটি। ঢাকাসহ সারা দেশে আসনভিত্তিক সমাবেশ করার কথা ভাবছে বিএনপি। এর আগে আসনভিত্তিক একটি নির্বাচনী জরিপ চালাবে তারা। এরই মধ্যে দলের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচনে আসনের সীমানা নির্ধারণের জন্য চিঠিও দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনে।
বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জামায়াতের অবস্থা খুবই খারাপ। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন চায় জামায়াত-শিবির। এরই মধ্যে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জামায়াতের দুই নেতা। গত সপ্তাহে গুলশানের একটি হোটেলে বিএনপির আরেক শীর্ষস্থানীয় নেতার সঙ্গেও জামায়াত নেতারা বৈঠক করেন। উভয় বৈঠকেই ২৮ নভেম্বরের জনসভা থেকে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জামায়াত।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ১৮ দলীয় জোটের বৈঠক হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আমার সঙ্গে জামায়াতের নেতাদের পৃথক কোনো বৈঠক হয়নি। আর জামায়াতের পক্ষ থেকে আমাদের ওপর কোনো চাপও নেই।'
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিএনপির ওপর কোনো দল চাপ সৃষ্টি করছে কি না জানি না। ১৮ দলীয় জোটের শরিক দল জামায়াত। এখানে চাপের কোনো বিষয় নয়। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে।'
জামায়াত চাপ সৃষ্টি করছে কি না জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক তাসনিম আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিএনপিকে চাপ দেওয়ার কিছু নেই। আমরা ১৮ দলীয় জোটের শরিক দল। জনসভার আগে জোটের সঙ্গে বৈঠক করেই কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে বিএনপি।'
সূত্রে জানা যায়, গত ২২ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সম্পাদক ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ও ঢাকা মহানগরীর সহকারী সম্পাদক ডা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ গুলশানে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জামায়াত নেতারা সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিষয়টি ভেবে দেখবেন বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।
No comments