পরাগকে রাখা হয় আমিরের বাসায় by রেজোয়ান বিশ্বাস
সব ছক আগেই করা ছিল। সে অনুযায়ী শিশু পরাগ মণ্ডলকে অপহরণের পর নিজ বাসায় নিয়ে যায় আমীর। এরপর পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয় পরাগকে। গ্রেপ্তারকৃত আমিরের স্ত্রী বিউটি ও সহযোগীরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা পুলিশকে এমন তথ্য দিয়েছে।
অভিযুক্তরা আরো বলছে, মুক্তিপণ দিয়ে ব্যবসা করা ছিল আমিরের উদ্দেশ্য।আমিরের স্ত্রী ও রিমান্ডে থাকা আসামিদের তথ্যের ভিত্তিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সহকারী কমিশনার সানোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে অপহরণের ঘটনার বিবরণ দেন। তিনি বলেন, শিশু পরাগ গাড়ির ভেতরে মায়ের পাশে বসে ছিল। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে আমির ও তার সহযোগী আল আমিন ছিল। আরেকটি মোটরসাইকেলে ছিল আরো তিনজন। আমির মোটরসাইকেল থেকে নেমে জোর করে গাড়ির দরজা খুলে অস্ত্রের মুখে পরাগকে মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়। এ সময় বাধা দেওয়া হলে সে অন্যদের গুলি করে। মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে পরাগকে প্রথমে ওই এলাকার আমিরের বাড়িতে নেওয়া হয়। তখন পরাগ খুব কান্নাকাটি করছিল। তাই আমির স্ত্রী বিউটিকে বলে, একটি কক্ষে পরাগকে আটকে রাখতে হবে। এরপর সহযোগীদের পাঠিয়ে বাজার থেকে পাঁচটি ঘুমের ইনজেকশন কিনে আনা হয়। আমিরের স্ত্রী দুই দিনে ইনজেকশনগুলো পরাগের শরীরে পুশ করে। এরপর গত ১৩ নভেম্বর রাত পৌনে ১২টার দিকে ভাতিজা আকাশকে দিয়ে পরাগকে কেরানীগঞ্জের আটিপাড়া এলাকায় ফেলে রেখে আমির পালিয়ে যায়। আকাশ এখনো পলাতক।
এসি সানোয়ার আরো জানান, পরাগকে অপহরণের পর আমির তার সহযোগীদের মাধ্যমে একটি বেসরকারি মোবাইল ফোন কম্পানির ১৩টি সিম কিনে ব্যবহার করে। এগুলো দিয়ে সে সহযোগীদের মাধ্যমে পুলিশ ও র্যাবের খোঁজ রাখত। আমির পরাগকে ছেড়ে দেওয়ার পরদিন ভোরে স্ত্রী, আল আমিন ও এক গৃহপরিচারিকাকে সঙ্গে নিয়ে একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে। আল আমিন মোটরসাইকেল নিয়ে সাভারের উদ্দেশে চলে যায়। সিএনজি অটোরিকশায় করে পালিয়ে জুরাইন এলাকায় তার অপর সহযোগী ফয়সাল ও আলফাজের বাসায় ওঠে আমির। সেখানে তার জন্য আগে থেকেই একটি কক্ষ প্রস্তুত করে রেখেছিল তার সহযোগীরা। ওই কক্ষে থাকা টিভিতে আমির খবর দেখে অপহরণের ঘটনা সম্পর্কে ধারণা নিত।
আমিরের প্রথম স্ত্রীর ভাই মামুনের দেওয়া তথ্য মতে, এক মাস আগে তার বাসায়ই পরাগকে অপহরণ ও বিমল মণ্ডলকে হুমকি দিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করে চীন থেকে ইলেকট্রনিক সামগ্রী এনে আমির ও মামুন একসঙ্গে ব্যবসা করবে।
আমিরের গৃহপরিচারিকা রুমি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবিকে জানায়, পরাগকে ঘুমের মধ্যেই পানি ও হালকা খাবার খাওয়ানো হয়। বিছানায় প্রস্রাব-পায়াখানা করলে রুমি নিজে সেসব পরিষ্কার করেছে। মাঝেমধ্যে পরাগ কষ্টে ছটফট করত এবং ঘুম ভাঙলেই মা মা বলে চিৎকার করত।
আমিরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আল আমিন গতকাল সাংবাদিকদের জানায়, গত জুন থেকে সে আমিরের মোটরসাইকেল চালাত। ঘটনার দিন সকালে আমির তাকে মোটরসাইকেল বের করতে বলে। এরপর আমিরকে সঙ্গে নিয়ে পশ্চিম শুভাড্যার পরাগ অপহরণের স্থানে এসে আরেকটি মোটরসাইকেল দেখতে পায় সে। এ সময় আমির তাকে মোটরসাইকেল ঘুরিয়ে রাখতে বলে পরাগের মা, বোন ও গাড়িচালককে গুলি করে শিশুটিকে নিজের কাছে নিয়ে আবার গাড়িতে এনে বসায়। আল আমিন বলে, 'পরাগের মাথায় পিস্তলের বাঁট দিয়ে আঘাত করে হেলমেট পরিয়ে দিয়ে আমাকে গাড়ি টান দিতে বলে।'
আমির আলি তার ঘনিষ্ঠ রিফাতকে দিয়ে পরাগের বাবার কাছে মুক্তিপণ আদায়ে চাপ দিত বলেও জানায় আল আমিন।
No comments