দীঘি ভরাট-শহরে কি শুধুই ইমারত?
পটুয়াখালীর পৌর এলাকায় চার একর জমির ওপর অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় আগে খননকৃত দৃষ্টিনন্দন দীঘিটি হয়তো আর দেখা যাবে না। সরকারি মালিকানাধীন একটি দীঘি হঠাৎ নাম বদলে কোনো হাসপাতাল বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম ধারণ করবে।
পটুয়াখালী শহরের কেন্দ্রস্থলে বহু সরকারি অফিস পরিবেষ্টন করে থাকা দীঘিটি অনেক কারণেই সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয়। বিশেষত কংক্রিটের নাগরিক জীবনে খানিকটা স্বস্তি ছিল এটি। পরিবেশ-প্রতিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছিল এই দীঘি। কিন্তু একটি হাসপাতাল করার প্রয়োজন মেটানোর দায় পড়েছে দীঘিটির ঘাড়েই। এভাবে আমাদের কত খাল-বিল, নদী-নালা মানুষের বসতিসহ নানা প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে স্বাভাবিকতা হারিয়েছে অথবা অস্তিত্ব বিলীন হয়ে কালের গহ্বরে ঠাঁই নিয়েছে, তার হিসাব কি আমরা রাখি! ফসলি জমিতে ইটভাটার কাহিনী তো গণমাধ্যমে হরহামেশাই প্রকাশ পায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংবাদ প্রকাশের পর কিছুদিন সরকারি সংশ্লিষ্ট দফতরের তৎপরতা দেখা যায়। সময় গড়িয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে এসব নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য আর শোনা যায় না। হাতেগোনা কয়েকটি ক্ষেত্রে গণমাধ্যম এবং নাগরিক আন্দোলন সক্রিয় ছিল বলেই ওগুলো এখনও পুরোপুরি দখলদারির খাতায় তুলে নিতে পারেনি। পটুয়াখালীর দীঘিটি কোনো ঘোষণা বা সার্কুলার জারি না করেই নাগরিক সমাজের অগোচরে যেভাবে তড়িঘড়ি ভরাট করা চলছে, তাতে মনে হয় বিষয়টি নিয়ে কোনো ধরনের প্রতিবাদ, আপত্তি জানানোর সময়ও দিতে নারাজ ভরাটকারী কর্তৃপক্ষ। মেডিকেল কলেজ নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানোর সময় সরকারি কর্তা ব্যক্তিদের দীঘিটি ভরাট করা ঠিক হবে কি-না তা উপলব্ধি করা উচিত ছিল। এভাবে দীঘি ভরাটের জন্য যে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র লাগে, সে বিষয়টি নিশ্চয়ই কর্মকর্তারা অবগত ছিলেন। তারপরও তারা ছাড়পত্রের তোয়াক্কা না করেই মেডিকেল কলেজ প্রকল্পের মধ্যে দীঘিটি কেন অন্তর্ভুক্ত করতে গেলেন? এই জায়গা ছাড়া আর সরকারি সম্পত্তি কি পাওয়া যেত না মেডিকেল কলেজ করার জন্য? পটুয়াখালী শহরে মেডিকেল কলেজের প্রয়োজনীয়তা আমরা অস্বীকার করছি না। আমাদের আপত্তিটা দীঘি ভরাট করা নিয়ে। শহরের সৌন্দর্য, পরিবেশ-প্রতিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, সুপেয় পানীয় জলের প্রয়োজন মেটানো এবং শহরের মাটির নিচের পানির স্তর ঠিক রাখার জন্য এ ধরনের জলাধারগুলো রক্ষা করা সরকারের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকদেরও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সরকারের উচিত, এসব বিবেচনায় পটুয়াখালী শহরের ঐতিহ্যবাহী দীঘিটি ভরাট কাজ অবিলম্বে বন্ধ করা।
No comments