পবিত্র আশুরা-অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে

আজ পবিত্র আশুরা। মহররম মাসের দশম দিন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র, চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.) ও খাতুনে জান্নাত ফাতেমা জোহরা (রা.)-এর ছেলে হজরত ইমাম হোসেন (রা.) অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে এই দিনে কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন।

এই দিনে ইয়াজিদ বাহিনী ইমাম হোসেন (রা.)-এর পরিবারবর্গ এবং সঙ্গীদেরও হত্যা করেছিল। ফোরাত নদীর কূল আটকে দিয়ে পিপাসার্ত নর-নারী-শিশুদের হত্যাকাণ্ডের স্মরণে মহররমের ১০ তারিখে পবিত্র আশুরা পালন করা হয়। এ ছাড়া যুগে যুগে অনেক ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে এই দিনে। আদি মানব হজরত আদম (আ.) আজকের এই দিনে পৃথিবীতে আগমন করেন এবং এই দিনেই তাঁর তওবা কবুল হয় বলে উল্লেখ আছে। হজরত মুসা (আ.) ফেরাউন বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পান মহররমের ১০ তারিখে। এ ছাড়া মহিমান্বিত এই দিনে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে বলে ইসলামের ইতিহাসে উল্লেখ আছে।
১০ মহররম অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময় ঘটনা ঘটলেও সর্বশেষ কারবালায় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার স্মরণেই বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে দিনটি পালিত হয়ে আসছে। এ দিনেই অশুভ শক্তি ইসলাম ধর্মের ওপর আঘাত হেনেছিল, নিয়েছিল প্রতারণার আশ্রয়। আরবে উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা আমির মুয়াবিয়ার ছেলে ইয়াজিদ ইসলামের প্রকৃত অনুসারীদের ধ্বংস ও পদানত করার জন্য চক্রান্ত করেছিল। সেদিন ধর্ম ও সত্যের জন্য হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ইয়াজিদের বিপুল বাহিনীর কাছে মাথানত না করে যুদ্ধ করে শাহাদাতবরণ করেছিলেন। তিনি সেদিন ন্যায় ও আদর্শের জন্য চরম আত্মত্যাগের যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা অনুকরণীয়। সেদিনের সেই আদর্শ বিস্মৃত হওয়া চলবে না। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এই দিনটিকে স্মরণ করেই লিখেছেন- 'ত্যাগ চাই, মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না।'
প্রাচীনকাল থেকেই পবিত্র আশুরা পালিত হয়ে আসছে। ইসলামের এক কঠিন পরীক্ষার দিন এই আশুরা। ন্যায় ও ধর্মকে সমুন্নত রাখতে দুঃখ-বেদনা সহ্য করতে, এমনকি আত্মাহুতি দিতেও পিছপা না হওয়ার শিক্ষা দেয় ১০ মহররম। পবিত্র আশুরার শিক্ষাই হচ্ছে অন্যায় ও অসত্যের কাছে মাথানত না করা।
আজকের এই দিনে প্রকৃত ধার্মিক ও ইমানদার মুসলমানদের সত্য উপলব্ধি করতে হবে, সব অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এটাই আশুরার প্রকৃত শিক্ষা। সব ধরনের পঙ্কিলতা দূরে সরিয়ে নতুন আলোয় আলোকিত করতে হবে জীবন। ১০ মহররমের ত্যাগের গৌরবময় দীপ্তি আমাদের অন্তর উদ্ভাসিত করুক, অনুপ্রাণিত করুক ঈর্ষা ও দ্বেষমুক্ত সমাজ গঠনে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রত্যেক নাগরিক দেশের প্রতি কর্তব্য পালনে উদ্বুদ্ধ হবে- পবিত্র আশুরার দিনে এটাই আমাদের প্রার্থনা।