দায়িত্বশীল হতে হবে সরকারি ও বিরোধী দলকে কার্যকর জাতীয় সংসদ
দেখতে দেখতে নব্বই-পরবর্তী সংসদীয় গণতন্ত্রের বয়স দুই দশক পার হলো। কিন্তু সংসদ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
সরকারি ও বিরোধী দল মিলেই জাতীয় সংসদ। বিরোধী দলের দায়িত্ব হলো সরকারের ভুলত্রুটি, ব্যর্থতা ও দুর্বলতা জনসমক্ষে তুলে ধরা। সরকারি ও বিরোধী দল মিলেই সংসদকে কার্যকর করবে, যুক্তিতর্কের মাধ্যমে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসবে, সেটাই সবাই আশা করে। কিন্তু বিরোধী দল যদি সংসদে না-ই যায়, তাহলে আলোচনা হবে কীভাবে? পরিসংখ্যানমতে, চারটি সংসদের মধ্যে এবারের সংসদেই বিরোধী দলের অনুপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। এটি মোটেই কার্যকর সংসদের পরিচায়ক নয়।জাতীয় সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদ ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের এক অনুষ্ঠানে বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়াকে সংসদে আসার আমন্ত্রণ জানান। জবাবে বিরোধী দলের নেতা ভেবে দেখার কথা বলেছেন। তাঁর এ ভাবনা ইতিবাচক হবে বলে আমরা আশা করি। এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদও সংসদে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। বর্তমান অধিবেশন দীর্ঘমেয়াদি হবে না। বছরের শুরুতে আরেকটি অধিবেশন হবে। সে ক্ষেত্রে বিরোধী দলের উচিত হবে এখনই সংসদে গিয়ে তাদের বক্তব্য রাখা। সংসদে যেকোনো সিদ্ধান্ত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। তবে সংখ্যালঘুদের কথাও সেখানে শুনতে হবে।
প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সংখ্যা ‘উজ্জ্বল অর্জন’ পর্বে একটি লেখায় স্পিকার রাজনীতিতে পরমতসহিষ্ণুতার ওপর জোর দিয়েছেন। সংসদীয় কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হলে প্রতিপক্ষকে অহেতুক আক্রমণ না করে যুক্তির ভাষায় কথা বলতে হবে। দুই দলকেই সহনীয় হতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের সাংসদেরা অনেক সময়ই যুক্তির কথা ভুলে গিয়ে আবেগে চালিত হন। সম্প্রতি টিআইবির জরিপ প্রতিবেদন নিয়ে কিংবা এর আগে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন নিয়েও সাংসদেরা আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করেছেন। সাংসদ হিসেবে কারও অধিকার ক্ষুণ্ন করলে তিনি অবশ্যই এর প্রতিবাদ করবেন; এমনকি আইনি প্রতিকারও চাইতে পারেন। কিন্তু কাউকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া কিংবা গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করার হুমকি কোনোভাবেই সংসদীয় ভাষা হতে পারে না।
জাতীয় সংসদ দেশের সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। এ সংসদে যাঁরা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন, তাঁরাও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। তাঁদের আচরণ ও কথাবার্তায়ও তার প্রতিফলন দেশবাসী আশা করে। মনে রাখতে হবে, তাঁরা যেমন যেকোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জাবাবদিহি চাইতে পারেন, তেমনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁরাও জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নন।
আমরা সবাই যদি নিজ নিজ সীমারেখা মেনে অন্যের সমালোচনা করি এবং সমালোচনা শুনি, তবেই গণতন্ত্র বিকশিত হবে। সরকারি ও বিরোধী—উভয় দলের সক্রিয় ভূমিকার মাধ্যমেই কার্যকর হতে পারে বহু ত্যাগ ও প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া সংসদীয় গণতন্ত্র ও সংসদ। মাননীয় সাংসদেরা কথাটি মনে রাখবেন, আশা করি।
No comments