বিশেষ সাক্ষাৎকার : মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম-জামায়াতে ইসলামীর তৎপরতা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল-সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম -সেলিম। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন মোস্তফা হোসেইন
কালের কণ্ঠ : সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীদের তৎপরতা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা হচ্ছে। তাদের এই তৎপরতাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা রাজপথে যেভাবে পুলিশের ওপর হামলা করছে তা কোনোভাবেই রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। হামলার ধরন থেকে স্পষ্ট বলে দেওয়া যায় তারা সুপরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করছে। আর একে যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করা যায়। যুদ্ধে যেমন রিজার্ভ বাহিনী, রাইট ফ্ল্যাংক, লেফট ফ্ল্যাংক, অ্যাটাক, রিট্রিট ইত্যাদি কৌশল অবলম্বন করা হয়, তাদের তৎপরতার স্বরূপও তেমনি। তারা তো শুধু পুলিশ বাহিনীর ওপরই আক্রমণ করেনি, আইনমন্ত্রীকেও হামলা করেছে। তাদের তৎপরতার প্রকৃতি হলো জঙ্গি অ্যাকশনের মতো। এটাকে রাজনৈতিক তৎপরতা বলা যায় না।কালের কণ্ঠ : তারা বলছে তাদের রাজনীতি করতে দেওয়া হচ্ছে না। তারা তাই আন্দোলনে নেমেছে।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : আমি আবারও বলছি, এটা রাজনৈতিক কোনো তৎপরতা নয়। এটা সামরিক কায়দার তৎপরতা। একটা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য তারা এমন করছে। পুলিশ ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে বিশেষভাবে আঘাত করার এই তৎপরতাকে নির্দ্বিধায় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মতো একটি ব্যাপার বলে আখ্যায়িত করা যায়। অবশ্য জামায়াত-শিবিরের কাছ থেকে এ ধরনের তৎপরতায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। হাত-পায়ের রগ কাটা দিয়ে তারা এ দেশে রাজনীতি শুরু করেছিল। এরপর বাংলাভাই, জেএমবি ইত্যাদি বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের জন্ম দিয়েছে ও পরের সশস্ত্র তৎপরতায় মদদ দিয়েছে। ব্রিটিশ আমলে তারা ব্রিটিশের গোলামি করেছে। পাকিস্তানি আমলে করেছে পাকিস্তানিদের গোলামি। পাকিস্তানিদের সমর্থনে তারা আলবদর, রাজাকার বাহিনী সংগঠিত করেছে। ৩০ লাখ মানুষকে ওরা হত্যা করেছে, মানবতাবিরোধী নানা কাজে লিপ্ত হয়েছে। তারা তো কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এটি একটি সন্ত্রাসী দল। আপনি কি মনে করেন একটি গণতান্ত্রিক দেশে সন্ত্রাসীদেরও লালন করতে হবে?
কালের কণ্ঠ : তাহলে কি জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : সত্যি কথা বলতে কি আইনগতভাবে জামায়াত অনেক আগেই নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি গোষ্ঠী। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে তৎকালীন রেসকোর্স নামে খ্যাত ময়দানে পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করে। সেখানে লেখা ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অফিসার ও সৈনিকরা তাদের সব অক্সিলারি বাহিনীসহ নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করল। অক্সিলারি বাহিনী কারা? তারা হলো একদিকে আলবদর, রাজাকার, প্যারামিলিটারি বাহিনী, আর অন্যদিকে রাজনৈতিক অক্সিলারি শক্তি তথা জামায়াতে ইসলামী ইত্যাদি। সুতরাং স্বাক্ষর করেই তারা আত্মসমর্পণ করেছে। একই সঙ্গে দেশের ভেতরে তৎপরতা চালানোর অধিকারও হারিয়েছে। যদি আত্মসমর্পণের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে এ দেশের মাটিতে সেনানিবাস তৈরি করার আইনি অধিকার না থাকে তাহলে জামায়াতের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। আর এ কারণেই ১৬ ডিসেম্বর থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে এ দেশে।
কালের কণ্ঠ : কিন্তু সংবিধান পরিবর্তন করে তো তাদের রাজনৈতিক অধিকার দেওয়া হয়েছে।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : আত্মসমর্পণের দলিলে উল্লেখ থাকার কারণেই বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদটিতে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ঘোষণা এসেছে। সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ধর্মের নাম যুক্ত করে এ দেশের রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ থাকবে। জামায়াত যে নিষিদ্ধ তা সাংবিধানিকভাবে উল্লেখ আছে। তবে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ৩৮ অনুচ্ছেদটি পরিবর্তন করেন। পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ এ কথা স্পষ্টভাবে আমাদের সুপ্রিম কোর্ট গত বছর বলে দিয়েছেন। সুতরাং জামায়াতকে বৈধতা দেওয়াটা অবৈধ কাজ। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ৩৮ অনুচ্ছেদটি ৭২-এর সংবিধানের মতো করে পরিবর্তন করেনি। এতে করে জামায়াতের মতো সাম্প্রদায়িক দল এ দেশের রাজনীতি করার অধিকার পায়। কিন্তু আগেই বলেছি, পূর্বেই সংবিধান পরিবর্তন-সংক্রান্ত রায় ঘোষিত হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। আর সে কারণেই ৭২-এর সংবিধান অনুযায়ী এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামীর বৈধতা দেওয়ার বিষয়টিও অবৈধ।
কালের কণ্ঠ : সরকারের ভূমিকাকে কিভাবে দেখছেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা এক অর্থে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করছে। বৈরী শক্তির যুদ্ধ আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গঠন করা হয়ে থাকে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে হামলা হলে যে প্রতিরোধ আশা করা যায়, ভেতর থেকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কেউ যুদ্ধ পরিচালনা করলে সেই রকম শক্তিশালী প্রতিরোধ কি প্রয়োজন নয়? অথচ অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে। পুলিশেও জামায়াতের অনুপ্রবেশ ঘটেছে এ কথা বলে পার পাওয়া যাবে না। বাজারে অনেক ষড়যন্ত্রের থিউরি কাজ করছে। আমেরিকানরা জামায়াতের অফিস সফর করবে বলে খবর প্রচার করে জামায়াতের প্রতি তাদের সমর্থনের সিগন্যাল দিয়েছে। শক্ত হাতে জঙ্গি আক্রমণ দমন করার পরামর্শ না দিয়ে তারা সংলাপের মাধ্যমে জামায়াতের সঙ্গে মতপার্থক্য নিরসনের জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে।
জামায়াতরা আগাগোড়াই মার্কিনপন্থী সংগঠন। সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক সব সময় ছিল এবং এখনো আছে। সাম্রাজ্যবাদ এ ধরনের সংগঠনকে লালন করে থাকে। তাদের ষড়যন্ত্রমূলক কৌশল হিসেবেই এটা তারা করে থাকে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরকে সর্প হয়ে দংশন করে ওঝা হয়ে ঝাড়ে বলে আখ্যায়িত করেছে। এটা সর্বাধিক প্রযোজ্য মার্কিনিদের ক্ষেত্রে। কিন্তু ভাসুরের নাম নিতে নেই। যে কারণে দুটি দলই তাদের নাম নিচ্ছে না। কারণ তারাও মেইড ইন আমেরিকা মার্কা দল। 'সংলাপের মাধ্যমে মতবিরোধ দূর কর'- এ রকম পরামর্শ তারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেও দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধকে ধ্বংস করে পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের লক্ষ্যেই তারা এই পরামর্শ দিয়েছিল। যখন ট্রাইবুন্যালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় হওয়ার মুহূর্ত এসেছে এই সময় তাদের এ পরামর্শ একাত্তরের সেই দুরভিসন্ধিমূলক পরামর্শকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।
কালের কণ্ঠ : সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট মিয়ানমার সফর করে গেছেন। আঞ্চলিক রাজনীতিতে কি প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : মিয়ানমার ঘুরে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তাঁর বক্তৃতা-বিবৃতিতে এই অঞ্চলে মার্কিন স্ট্র্যাটেজির বেশ কিছু বিষয়ও প্রকাশ হয়ে পড়েছে। ওবামাকে ধন্যবাদ তিনি সব কথা গোপন রাখার চেষ্টা করেননি। মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করা এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকার সামরিক উপস্থিতি বিপুলভাবে বৃদ্ধি করার স্ট্র্যাটেজির একটি অংশ। এই অঞ্চলই এখন আমেরিকার মনোযোগের প্রধান ফোকাসের জায়গা। এই এলাকায় চীনের প্রভাবকে মোকাবিলা করাই তাদের প্রধান মাথাব্যথার বিষয়। অন্যান্য দেশের মতো মিয়ানমারকেও সেই স্ট্র্যাটেজির অংশীদার করতে চায়। মিয়ানমারের প্রচুর সম্পদ রয়েছে। বিদেশি বহুজাতিক কম্পানিগুলো যাতে সে ক্ষেত্রে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে (আসলে শোষণের) অবাধ সুযোগ পায় সেটাই মার্কিন সরকারের আগ্রহের বিষয়। এসব বিষয় মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি মিয়ানমারকে পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগস্থলের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আমেরিকার আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রতিযোগিতা লাগিয়ে দেওয়ার কৌশলই অবলম্বন করেছে আমেরিকা।
কালের কণ্ঠ : মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি রোহিঙ্গা সমস্যার সঙ্গে বাংলাদেশকেও জড়িয়েছেন। তাঁর এই বক্তব্যকে কিভাবে দেখছেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। দুঃখজনক হচ্ছে, মিয়ানমারের নেত্রী এবং নোবেল লরিয়েট অং সান সু চি রোহিঙ্গা সমস্যাকে তাঁদের নিজেদের দেশের সমস্যা না ভেবে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মিয়ানমারে জাতিগত সমস্যা রয়েছে। সেই আলোকে তাদেরই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। ওবামা তাত্তি্বকভাবে কিছু কথা বললেও সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলেননি, ফলে সমস্যাটা ঝুলেই থাকল। ফলে সেখানকার বিভিন্ন মহলের মতো আমেরিকানরাও বিষয়টিকে ব্যবহার করার সুবিধা চাইতে পারে। ফলে আঘাতপ্রাপ্ত হবে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও বাংলাদেশ।
কালের কণ্ঠ : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক ভারত সফরকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন আপনি?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : খালেদা জিয়ার ভারত সফর যদি নতুন দিগন্তের উন্মোচন নাও করত এর পরও আমি এই সফরকে ইতিবাচকই বলতাম। এ কথা ঠিক সে দেশের শাসকগোষ্ঠীও সেখানকার সাধারণ মানুষকে শোষণ করে থাকে। বাংলাদেশের মানুষের দিক থেকেও তাদের দৃষ্টি ফেরাবে না। বাংলাদেশেও রয়েছে শোষক ও শোষিত। ভারতেও তাই। কিন্তু এর পরও দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করা খুবই প্রয়োজন। সেটা কেবল সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস, বিচ্ছিন্নতাবাদ, দারিদ্র্য বিমোচন ইত্যাদি সাধারণ সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যেই নয়, এই অঞ্চলে সহযোগিতার ধারাকে গভীরতর করার জন্যও প্রয়োজন। পশ্চিমা দেশগুলো ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইত্যাদি গঠন করে যদি সারা বিশ্বকে শোষণ করার জন্য কাছাকাছি আসতে পারে, তা মোকাবিলা করার জন্য বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো কেন একই মাত্রার সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারবে না। দক্ষিণ এশিয়া এ ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। আর এই সম্পর্ক কেবল সরকারি প্রয়োগের ওপরই নির্ভর করে না। দেশগুলোর জনগণের মধ্যেও রাজনৈতিক ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলেও বলতে হবে খালেদা জিয়ার ভারত সফর অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ।
কালের কণ্ঠ : এই সফরে কি তাদের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : এবারের ভারত সফরের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হচ্ছে দলটির পূর্ব পরিচয়। তারা ইতিপূর্বে কট্টর ভারতবিরোধী বলে পরিচিত ছিল। এই দলের নেত্রী বলেছেন অতীত ভুলে সামনের দিকে তাকাতে হবে। তিনি ভারতীয় জঙ্গি গোষ্ঠী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দেওয়া হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কানেকটিভিটি বা ট্রানজিট সম্পর্কেও তিনি ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। সাম্প্রদায়িকতা লুকিয়ে থাকার যে কথা বিএনপির নামের সঙ্গে মানুষ যুক্ত করত, সেই মনস্তত্ত্ব থেকে বেরিয়ে আসার কারণে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতাবাদের দুর্বলতাকেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
কালের কণ্ঠ : খালেদা জিয়ার ভারত সফরের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়াকে কিভাবে দেখছেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : আমার মনে হয় আওয়ামী লীগ বিচলিত হয়ে পড়েছে যেন। বেফাঁস কিছু মন্তব্য তারা করেছে। এই প্রতিক্রিয়া তারা না জানালেও পারত। ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক কারো জমিদারির বিষয় নয়। কেউ একই সুরে কথা বললে একচেটিয়াত্ব মুছে যাবে, এমন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ না করাই ভালো।
কালের কণ্ঠ : সরকারের চতুর্থ বছর শেষ প্রায়। তাদের কাজের মূল্যায়ন করবেন কিভাবে?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : সামগ্রিক বিচারে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ। অধিকাংশ প্রতিশ্রুতি তারা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ছোট ঘটনা থেকে বড় ঘটনা- সব ক্ষেত্রেই অপশাসনের উৎপাতে মানুষ দিশেহারা। ঘুষ, দুর্নীতি, দলবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ডেসটিনির স্ক্যান্ডাল, বেপরোয়া লুটপাট প্রভৃতি ঘটনা মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলছে। মাইক্রো অর্থনীতির পাশাপাশি ম্যাক্রো অর্থনীতিও প্রবল সংকটে। সরকারের কাছে জনগণের স্বার্থ নিরাপদ নয়। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসনের কথা মানুষ এখনো ভুলে যায়নি। একদিকে আপদ, অন্যদিকে বিপদ। ফুটন্ত কড়াই থেকে বাঁচার জন্য জ্বলন্ত চুলায় ঝাঁপ দিয়ে মানুষ বাঁচতে পারবে না। জনগণ ফাঁপড়ে পড়েছে।
কালের কণ্ঠ : তাহলে কি কোনো উপায় নেই?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : নিশ্চয়ই উপায় আছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুঃশাসন থেকে বাঁচতে হলে বামপন্থী প্রগতিশীল, দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির একটি বিকল্প রাজনৈতিক বলয় গড়ে তোলা দরকার। জনগণ সে ধরনের সৎ ও নীতিবান রাজনৈতিক শক্তির জন্য অপেক্ষায় আছে।
কালের কণ্ঠ : জনগণের সেই অপেক্ষার পালা শেষ করার মতো প্রস্তুতি কি আছে আপনাদের?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : সেই শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলার জন্য কমিউনিস্ট পার্টি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাসদের সঙ্গে মিলে আমরা ইতিমধ্যে নেমে পড়েছি। অন্যান্য বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তিকেও আমরা আহ্বান জানিয়েছি। রাজপথের সংগ্রামকেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : আপনাকেও ধন্যবাদ।
No comments