নতুন সিমে মুক্তিপণ by সজল জাহিদ
মোবাইল সিমের সঠিক নিবন্ধনের যন্ত্রণা (!) এড়াতে দক্ষিণাঞ্চলের জলদস্যুরা চমৎকার পদ্ধতি বাতলে নিয়েছে। এবার কুয়াকাটা গিয়ে এ বিষয়ক নতুন অভিজ্ঞতা পেয়েছি। একের পর এক নতুন সিম সাগরের জলদস্যুরা পেয়ে যাচ্ছে, বিনা বাধায়; তাদের যত চাহিদা।
কিন্তু এর একটিতেও নিবন্ধনের ক্ষেত্রে তাদের নাম বা ছবি থাকছে না। জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি বা অন্য কোনো শনাক্তকারী পরিচয়পত্র তো আরও পরের কথা।কীভাবে কাজগুলো তারা করছে এর বয়ান থাকছে এই লেখায়।
হরহামেশা সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া বোটে জলদস্যুর আক্রমণ হয়। আক্রমণ হলেই তুলে নেওয়া হয় মাঝিকে। বোটের নেতৃত্বে থাকেন মাঝি। কখনও কখনও সঙ্গে বোটের মালিক প্রতিনিধি বা আরও কিছু লোক নেওয়া হলে অন্য জেলেদেরও বোটের সঙ্গে নিয়ে যায় দস্যুরা। তাদের অবধারিত গন্তব্য গভীর সুন্দরবন। সুন্দরবন থেকে সাধারণত এই দস্যুরা আর কোনো কাজেই বের হয় না। কিন্তু তাদের যোগাযোগের মাধ্যম কী হবে? অবধারিতভাবে সেটি মোবাইল ফোন।
মোবাইলে নিয়মিত একটি সিম ব্যবহার করলে তারা ধরা পড়ে যেতে পারে, এ বিষয়ে তারা যথেষ্ট সচেতন। সে কারণে কয়েক দিন পরপর সিম বদলাতে হয়। বদলাতে হয় মোবাইল হ্যান্ডসেটও। জেলেদের বা মাঝিকে তুলে নিলে মুক্তিপণ অবধারিত। মুক্তিপণবিহীন মুক্তি আজ পর্যন্ত কেউ পায়নি। মুক্তিপণের তালিকায় টাকার সঙ্গে সঙ্গে এখন নিয়মিত আইটেম হয়ে গেছে মোবাইল সিম। আবার কখনও ৮-১০টি নম্বর পাঠিয়ে সেখানে মোটা অঙ্কের ব্যালান্স দিতে বলা হয়।
কুয়াকাটায় গিয়ে আলিপুর বন্দরে বেশ কয়েকজন মাঝির সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন সেলিম মাঝি মাত্র মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। এক লাখ ৪০ হাজার টাকার বাইরে জলদস্যুদের পাঁচটি নতুন মোবাইল সিম এবং প্রতিটি সিমে আরও এক হাজার টাকা করে ব্যালান্স যোগ করে দিতে হয়েছে।
প্রশ্নের পর প্রশ্ন করেছি সেলিমকে। জেনেছি, ইচ্ছা করে জলদস্যুরা মুক্তিপণ হিসেবে সিম নেয়; কখনও তাদের নম্বর ট্র্যাক করলে বা নির্দিষ্ট নম্বর ধরে পরিচয় খুঁজতে গেলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে সঠিক তথ্য না পায়।
এই বন্দরেরই মোল্লা গদির মালিক জলিল মোল্লা যা জানালেন, তাতে বোঝা গেল তারাও শান্তিতে নেই। মাঝে মধ্যেই তাদের নম্বর জানিয়ে রিচার্জ দিতে বলা হয়। তারাও তা দিতে বাধ্য। ব্যবসা চালাতে হলে নাকি দিতেই হবে। নইলে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে।
No comments