আদালতে ভাঙচুরের মামলা-অভিযুক্ত আইনজীবীরা আত্মগোপনে

রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা ও জামায়াত সমর্থক আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর অভিযুক্তরা আত্মগোপন করেছেন। গতকাল বুধবার যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাঁরা কেউ আদালতে যাননি। এমনকি অনেকে বাসা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।


এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন গতকাল বিকেলে সাংবাদিকদের জানান, মামলায় অভিযুক্ত সব আইনজীবীর আজ হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিনের আবেদন জানানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
গত মঙ্গলবার বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা ঢাকার আদালত এলাকায় মিছিল করে ভাঙচুর চালান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ওই দিনই কোতোয়ালি থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা করে। মামলায় ২৯ জন আইনজীবীর নাম উল্লেখ করে বলা হয়, আদালত ভবনের জানালা ভাঙচুরের সময় আরো ৭০ জন অজ্ঞাতপরিচয় আইনজীবী ছিলেন।
কোতোয়ালি থানার এসআই মো. মকবুল হোসেন দ্রুত বিচার আইনে এ মামলা করেন। যাঁদের আসামি করা হয়েছে তাঁরা হলেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা অ্যাডভোকেট মো. বোরহান উদ্দিন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব সানাউল্লাহ মিয়া, বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ফোরাম নেতা মো. মহসীন মিয়া, খোরশেদ আলম, গোলাম মোস্তফা খান, ইকবাল হোসেন, ওমর ফারুক ফারুকী, আবদুর নূর ভুঁইয়া বাবলু, আ. খালেক মিলন, জালাল আহমেদ দোলন, হেলাল উদ্দিন, নূরুজ্জামান (১), জীবন, মাসুদ রানা (নরসিংদী), মাহমুদুর রহমান রোমেল, মজিবর, দিদার (ছোট), দিদার (বড়), নুরুজ্জামান (২), হেলাল, কামাল হোসেন, মনির, ফারদিন, জ্যাকব, এরশাদুল হক জর্জ, জামাল আলী মিয়া, পাপ্পু ও মিলন।
এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২২ মে সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শতাধিক আইনজীবী আদালত বর্জন করে কালো ব্যাজ ধারণ করেন এবং কালো পতাকা হাতে নিয়ে জজ আদালত, মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত প্রাঙ্গণ ও আদালতের করিডরগুলোতে মিছিল-সমাবেশ করেন। তাঁরা বিভিন্ন সময়ে আদালতের প্রবেশপথে অবস্থান নিয়ে বিচারপ্রার্থী, আসামিদের গাড়ি আনা-নেওয়া ও বিচারিক কার্যক্রমে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটান। তাঁরা মহানগর দায়রা আদালত ও জেলা জজ আদালত ভবনে জঙ্গি মিছিল করেন। এ সময় তাঁরা আদালতের এজলাস ও অফিস কক্ষের বিভিন্ন দরজায় লাথি ও ধাক্কা মারেন। মিছিলকারীরা মহানগর দায়রা আদালতের নাজিরের কক্ষের জানালার কাচ ও জেলা জজ আদালতে সাঁটলিপিকারের কক্ষের জানালা ভাঙচুর করেন। মিছিলকারীরা বিচারপ্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখান ও পুরো আদালত এলাকায় তাণ্ডবের মাধ্যমে জনমনে ত্রাসের সৃষ্টি করেন। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটান।
এজাহারে আরো বলা হয়, অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ তালুকদার, মহসীন মিয়া, খোরশেদ আলম, গোলাম মোস্তফা ও ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় এজাহার নামীয় আইনজীবীসহ আরো ৭০ জনের বেশি আইনজীবী এসব কর্মকাণ্ড ঘটান।
গতকালের আদালতপাড়া : গতকাল ঢাকার আদালতপাড়ায় আইনজীবীদের উপস্থিতি ছিল কম। বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের আদালত প্রাঙ্গণে তেমন দেখা যায়নি। গ্রেপ্তারের ভয়ে তাঁরা আদালতে যাননি বলে জানা গেছে।
আরো জানা গেছে, যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তাঁরা আত্মগোপন করেছেন। আদালতপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, এজাহারে ৭০ জন অজ্ঞাতপরিচয় আইনজীবীর কথা উল্লেখ থাকায় সতর্কতামূলক অনেক আইনজীবী আদালত এলাকায় যাননি। কয়েকজন আদালতপাড়ায় বিভিন্ন চেম্বারে বসলেও দুপুরের পরপরই চলে যান। গতকাল পুলিশকে কয়েকটি চেম্বারে আসামিদের খোঁজ করতে দেখা গেছে। তবে কাউকে পাওয়া যায়নি। বুধবার রাতে অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চালানোর কথা জানান কোতোয়ালি থানার ওসি সালাউদ্দিন।
গতকাল দুপুরের দিকে হঠাৎ করে কয়েকজন আইনজীবীকে মামলা দায়েরের প্রতিবাদে একটি মিছিল করতে দেখা যায়। বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা ও আজিজুল হক খান বাচ্চুর নেতৃত্বে এ মিছিলটি হয়। কিছুক্ষণ পর তাঁরা মিছিল শেষ করে চলে যান।
অন্যদিকে আদালত প্রাঙ্গণে মঙ্গলবারের ভাঙচুরের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা গতকাল মিছিল ও সমাবেশ করেন। তাঁরা দোষীদের শাস্তি দাবি করেন।

No comments

Powered by Blogger.