অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ-তাঁর সেবা থেকে বঞ্চিত হবে দেশ
আরেক কৃতী সন্তানকে হারাল দেশ। গত মঙ্গলবার বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এই মানুষটির বহুমুখী অভিজ্ঞতাকে দেশ কাজে লাগিয়েছে বিভিন্ন সময়, বিভিন্নভাবে।
মেধা ও দক্ষতা দিয়ে তিনি একের পর এক অর্জন করেছেন অনেক সম্মান। মেধাবী শিক্ষার্থী মোজাফ্ফর আহমদ শিক্ষায়ও সেই স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর কর্মজীবন ছিল বর্ণাঢ্য। সরকারি চাকরি করেছেন লোভনীয় পদে, কলেজে শিক্ষকতা করেছেন নিজের পছন্দের পেশা শিক্ষকতাকে বাছাই করতে গিয়ে। তার পরের কর্মজীবন বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, একজন চিন্তাবিদ ও অর্থনীতিবিদ হিসেবে তিনি কিভাবে নিজেকে শাণিত করেছেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর পরই পরিকল্পনা কমিশনে যোগদানের মাধ্যমে জাতি গঠনে অবদান রেখেছেন তিনি। বিভিন্ন পথ বেয়ে অবশেষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত পরিবারের সদস্য হিসেবে সমাজের জন্য তাঁর ব্যাপক করণীয় আছে বলে তিনি সব সময়ই মনে করতেন। এর প্রমাণও আমরা তাঁর কর্মজীবনে বারবার পেয়েছি। তাঁর পেশাগত অভিজ্ঞতাগুলো জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে পথচলায় সহযোগিতা করেছে। শুধু পরামর্শ দেওয়াই নয়, নিজে কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার উদাহরণ তিনি রেখেছেন। একসময় তিনি মনে করেছেন, সরকারে থাকতে পারলে হয়তো জনকল্যাণে অধিকতর ভূমিকা রাখা যাবে। সেই চিন্তায় তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন। তাঁর বিস্তৃত অভিজ্ঞতা তাঁকে প্রশাসন ও রাজনীতিতে স্বচ্ছতা আনার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে অনুপ্রেরণা জোগায়। এ কারণেই ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের প্রধান হতে তাঁকে দেখা যায়। সুজন নামের নাগরিক সংগঠন প্রতিষ্ঠায়ও তাঁর অবদান স্বীকার্য। একজন সচেতন মানুষ হিসেবে বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসা উচিত- এই চিন্তা করে তিনি পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। এমন একজন মানুষের মৃত্যু গোটা জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে চিহ্নিত হলো। বাঙালির জাতীয় দুর্যোগকালে আর কোনো দিন তাঁর সুচিন্তিত মতামত ও পথনির্দেশনা পাওয়া যাবে না। একজন গবেষক হিসেবে তাঁর ইচ্ছা ছিল নবীজি (সা.)-এর তুলনামূলক স্টাডি করবেন। একই সঙ্গে কোরআন শরিফ অনুবাদের ওপর তিনি কাজ করবেন বলেও ইচ্ছা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যু সব ইচ্ছা শেষ করে দিয়ে গেছে। তাঁর এই মৃত্যু অকাল প্রয়াণ না হলেও দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্রান্তিকালে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণ করার মতো নয়। তাঁর মৃত্যুতে আমরা শোক প্রকাশ করছি। তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।
No comments