আদালতপাড়ায় বিশৃঙ্খলা-এ ধরনের কর্মকাণ্ড সমর্থনযোগ্য নয়

এবার বিশৃঙ্খলা আদালতপাড়ায়। একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক আইনজীবীরা আদালতে বিচারকের এজলাসে কালো পতাকা ছুড়ে মেরেছেন। জানালার কাচ ভাঙচুর করেছেন। আদালতে উপস্থিত ভিন্নমতের সমর্থক আইনজীবীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও হয়েছে তাঁদের।


বিচারক একপর্যায়ে এজলাস ছেড়ে উঠে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এভাবে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে আদালতের বিচারকাজে। আদালতে এই পরিবেশ একেবারেই অনভিপ্রেত।
বিক্ষুব্ধ হওয়ার অধিকার সবারই আছে। ক্ষোভ প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হলে সেটা ভিন্ন কথা। সরকারের সব কাজ সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারবে না, এটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে রাজনৈতিক অনেক সিদ্ধান্ত অনেকের ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ হতেই পারে। সরকারের নানা কাজে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি যেমন ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছে, তেমনি ক্ষোভ প্রকাশ করছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের দলগুলো। এর মধ্যে হরতাল হয়েছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো গণ-অনশন করেছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি, বিশেষ করে হরতালের সময় সহিংস ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। এই সহিংসতার জের ধরে রাজনীতি দিন দিন সংঘাতময় হয়ে উঠছে। এর উত্তাপ ছড়াচ্ছে সারা দেশে। দেশজুড়ে বিক্ষোভের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিরোধী দলের সংঘাতের খবর যেমন এসেছে, তেমনি এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক সংঘাতের খবরও। সাম্প্রতিক হরতালের আগে গাড়ি পোড়ানো ও সচিবালয়ে বোমা হামলা মামলায় বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হলে বিএনপি ও সমমনা দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। গত গণ-অনশন যেমন শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হলো, তাতে মনে হচ্ছিল, দ্বন্দ্ব-বিরোধ থাকলেও রাজনৈতিক সংঘাত বোধ হয় এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে। অন্তত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির উদ্ভব হবে না। বিশেষ করে দেশের সাধারণ মানুষ ও নাগরিক সমাজ যখন হরতালের মতো বিশৃঙ্খল ও বিধ্বংসী একটি রাজনৈতিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে সোচ্চার, তখন রাজনৈতিক দলগুলো ইতিবাচক কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হবে- এটাই কাম্য ছিল। কিন্তু আদালত ভাংচুর ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘটনাটি কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
সম্প্রতি বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার নিয়ে দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা ক্ষুব্ধ। বিএনপি সমর্থক এক আইনজীবী নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে নোয়াখালীতে হরতালও হয়েছে। তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। যে কেউ ক্ষুব্ধ হলে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতেই পারে। কিন্তু সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে গিয়ে অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করবে কেন? বিচারক তাঁর এজলাসে বিচার কাজ করবেন। আদালতে অন্য আইনজীবীরাও নিজেদের কাজ করবেন। নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষোভ জানাতে গিয়ে আদালতের কাজে বাধার সৃষ্টি করা, বিচারপ্রার্থীদের বাধার সম্মুখীন করা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়।
বিনা উস্কানিতে আদালতের পরিবেশ নষ্ট করা কেন? এ প্রশ্নটাই এখন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। আদালত, তা সে উচ্চ আদালতই হোক বা নিম্ন আদালত- এটাই হচ্ছে সর্বসাধারণের শেষ আশ্রয়। সেই আশ্রয়কে বিব্রত করার চেষ্টা কেন? এর পেছনে কি কোনো অশুভ শক্তির ইন্ধন আছে? নাকি নিছকই রাজনীতিকে উত্তপ্ত করে তোলার অপচেষ্টা? বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা জরুরি। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের কাছে অনুরোধ, আদালতের পবিত্রতা রক্ষা করুন। আদালতকে অন্তত রাজনীতির কুরুক্ষেত্র বানাবেন না।

No comments

Powered by Blogger.