যুক্তি তর্ক গল্প-চলচ্চিত্রশিল্প: পূর্ণ সংরক্ষণ নাকি সুস্থ প্রতিযোগিতা? by আবুল মোমেন
ভারতীয় ছবি আমদানির সরকারি সিদ্ধান্ত হওয়ার পর এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বেশ হইচই পড়ে যায়। ভারত-সম্পৃক্ত কোনো বিতর্ককেই জিইয়ে রাখা এ দেশের কোনো সরকারের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হয় না। ফলে দ্রুত সিদ্ধান্তটি বাতিল করা হয়।
যাঁরা ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির বিপক্ষে তাঁদের মধ্যে এ দেশের সুস্থধারার চলচ্চিত্র নির্মাতারা আছেন। ফলে দেশে সুস্থ চলচ্চিত্রের ধারাটিকে গতিশীল ও শক্তিশালী দেখতে চান যাঁরা তাঁদের তো এঁদের অবস্থানটা বিবেচনায় নিতে হবে।
তবে পূর্ণ সংরক্ষণ ব্যবস্থায় (protection) থাকার চেয়ে সুস্থ প্রতিযোগিতার ভেতর দিয়ে বিকশিত হওয়ার মধ্যে গুণমানে পরিণতি লাভের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
পঞ্চাশ-ষাটের দশকে আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পের সূচনালগ্নে মূলধারায় যে উন্নতমানের সব ছবি তৈরি হয়েছে, আজ অবধি মুষ্টিমেয় দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া কোনো পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি সে মান ছুঁতে পারেনি। এর মধ্যে দুটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়: ১. পঞ্চাশ-ষাটের ওই সময়ে ভারতীয়সহ বিদেশি চলচ্চিত্র যথেষ্ট আমদানি হতো এবং বাণিজ্যিক ছবির মান যখন পড়তে শুরু করেছে ও পতন চূড়ান্ত পর্যায়ে গেছে তখন আগাগোড়া প্রটেকশনের মধ্যেই ছিল চলচ্চিত্র। ২. পঞ্চাশ-ষাটের দশকে চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা ও সহিংসতার এত ছড়াছড়ি ছিল না, ফলে সাধারণত সিনেমা তুলনামূলক পরিচ্ছন্ন কাহিনিমূলক হতো যা সপরিবারে উপভোগ্য বিনোদনমাধ্যম হিসেবে সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় খাত ছিল।
এই বাস্তবতা থেকে আমার মনে হয়, দুটো ভাবনা অযৌক্তিক মনে হবে না। প্রথমত, বিনোদনমাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রকে যা সংকটে ফেলে দিয়েছে তার মধ্যে বাসা বাঁধা দুই ব্যাধি—অশ্লীলতা ও সহিংসতা। বাণিজ্যের জন্য কাহিনি, অভিনয়, নির্মিতির শৈল্পিক গুণ সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয়ে এ দুটি উপাদানের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে প্রেক্ষাগৃহের পরিবেশ নষ্ট হলো—নারী, শিশু ও ভদ্রজনের জন্য নিষিদ্ধ এলাকা হয়ে পড়ল। এটা একদিনে হয়নি, দিনে-দিনে ধাপে-ধাপে আমাদের চোখের সামনেই ঘটেছে। এ ঘটনা বন্ধ করতে হতো দুইভাবে: ক. সেন্সরের নিয়মকানুন ঠিক করে তার প্রয়োগ ঘটানো এবং খ. প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্রের মূলধারার দর্শক হিসেবে মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্তকে সপরিবারে ফিরিয়ে আনার জন্য সেখানে কাহিনি, অভিনয় ও শৈল্পিক নির্মিতির সমন্বয়ে তৈরি সুস্থ চলচ্চিত্রকে মূলধারা হিসেবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান। এভাবে প্রেক্ষাগৃহে দর্শক ফিরে আসবে আর চলচ্চিত্রশিল্প সঞ্জীবিত হবে।
দ্বিতীয়ত, এখানকার চলচ্চিত্রকে সম্পূর্ণ প্রটেকশন না দিয়ে সুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে গড়ে উঠতে দেওয়া উচিত। প্রটেকশনের ফলেই কিন্তু মুনাফার বাসনায় অশ্লীলতা ও সহিংসতাকে পুঁজি করে শিল্পরুচিবিহীন নির্মাতারা এফডিসিতে জাঁকিয়ে বসেছিলেন। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, সুস্থধারাকেই প্রটেকশন দেওয়া দরকার। সেটা দেওয়ার স্বার্থেই আমরা বলতে পারি, পঞ্চাশ-ষাটের দশকের সুস্থধারার সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা।
তখন প্রচুর বিদেশি ছবি আমদানি হতো। মনে রাখবেন, আমি কেবল ভারতীয় ছবি বা ঢালাওভাবে ভারতীয় ও বিদেশি ছবির কথা বলছি না। আমি বলছি চলচ্চিত্রের বিশ্ববাজার থেকে নীতিমালার ভিত্তিতে নির্বাচিত সুস্থধারার চলচ্চিত্র আমদানি করার কথা। তাতে দুটি উপকার হতে পারে—অশ্লীলতা-সহিংসতার দাপট প্রশমিত হবে এবং দেশের চলচ্চিত্রের সামগ্রিক মান বাড়বে।
বর্তমানে শিক্ষিত রুচিশীল পরিবারের কোনো মানুষের পক্ষে প্রেক্ষাগৃহে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় তাঁরা বস্তুত দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে গিয়ে ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালের ফাঁদে আটকা পড়ছেন। এই সব বানোয়াট কূটকচালে ভরা চক্রান্ত-কুটিলতার কাহিনিজালে আর কুশীলবদের পোশাকি চাকচিক্যে ও বাহ্য স্মার্টনেসের জালে তাঁরা বাঁধা পড়েছেন। এটা তাঁদের দৈনন্দিন খোরাক এবং ভয়ানক নেশার মতো আচ্ছন্ন করে রাখছে। কবে ফিল্ম সোসাইটি করা আমাদের হাজার দেড়েক (সংখ্যাটা মোরশেদ-ফারুকী প্রমুখ প্রতিশ্রুতিশীল নির্মাতাদের লেখা থেকে পেয়েছি) তরুণ নির্মাতা ১৬ কোটি মানুষের দেশে প্রেক্ষাগৃহে নিয়ে আসবেন চাহিদার পরিমাণ সুস্থ চলচ্চিত্র, তার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকলে তত দিনে ভালো দর্শকেরা দলে দলে হিন্দি সিরিয়ালের নেশায় আত্মাহুতি দেবেন।
আমি নিজে চলচ্চিত্র সংসদ করে এসেছি, এখনো যুক্ত আছি এ আন্দোলনে এবং যে হাজার দেড়েক ছেলেমেয়ে তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে, তাদের ওপর আমার আস্থাও আছে। আমার বক্তব্যটা তাদের এবং যেসব দর্শক স্বভাবতই তাদের নির্মিত চলচ্চিত্রের দর্শক হওয়ার কথা তাদেরই জন্য।
প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র দেখার একটা মস্ত বড় প্রাপ্তি হলো, একসঙ্গে বহু মানুষ মিলে আবেগ-অনুভূতি, প্রতিক্রিয়া-ভাবনা এবং স্মৃতির ঐক্যে এক নান্দনিক আনন্দের বন্ধন। বহু মানুষের চিন্তা ও কল্পজগৎ এবং রুচি ও নান্দনিক বোধের যৌথ রসায়ন ঘটিয়ে সমাজে সমরুচি ও সমনান্দনিকতার পরিবেশ তৈরি হয় এভাবে। ঘরে বসে নিজের টিভিতে নাটক/চলচ্চিত্র দেখার দীর্ঘ অভ্যাসের ফলে মানুষ হয়ে পড়ছে exclusivist—নিতান্ত আপনাতে আবদ্ধ মানুষ। প্রযুক্তির এই ব্যবহারগুলোর অনেক সুবিধা আছে নিঃসন্দেহে, কিন্তু সে সুবিধা ব্যক্তির দৈনন্দিন বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেই ব্যবহূত হলে তা সমাজে বিচ্ছিন্নতা, গোপনীয়তা, অপরাধপ্রবণতাসহ নানা অমানবিক বিপর্যয় তৈরি করবে। চলচ্চিত্রের মজা ও সাফল্য হচ্ছে তার প্রেক্ষাগৃহ মাতিয়ে রাখার ক্ষমতা। সেটা কে কতটা শিল্পগত উৎকর্ষের মাধ্যমে করছে তা দিয়ে নির্ণিত হতে হবে।
তাহলে আমজনগণকে এই নান্দনিক বোধে সাড়া দিতে পারার জায়গায় আসতে বা আনতে হবে। এটাই হলো সুস্থ চলচ্চিত্র নির্মাতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। প্রটেকশন তাঁকে চ্যালেঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করে নেয় এবং অন্য আরেক ধরনের, হয়তো নির্দোষ, স্বেচ্ছাচারিতার বা উৎকেন্দ্রিকতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
একটা বিষয়ে সবাই একমত হতে পারি। সব মানুষ, শিক্ষিত-শিক্ষাবঞ্চিত-নির্বশেষে, গল্প ভালোবাসেন, বস্তুত মানুষের মধ্যে আছে গল্প শোনার অনন্ত তৃষ্ণা। দ্বিতীয়ত, কিছুদিন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পর মানুষ ভালো ও মন্দ অভিনয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে এবং অভিনয়ের গুণ বিচারেই নট-নটীর ভক্ত হয়ে যায়। তৃতীয়ত, মানুষ সুরেলা গান ভালোবাসে, বাংলা তো গানের দেশ, এ আমরা আরও ভালো জানব। চতুর্থত, মানুষের পাঁচ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হলো দর্শনেন্দ্রিয়, বলা হয়, ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে মানুষ যতটা গ্রহণ করে তার ৮৫ শতাংশ আসে দৃষ্টির মাধ্যমে, বাকি চারটি মিলে ১৫ শতাংশ। ফলে চলচ্চিত্র দৃশ্যগতভাবে আকর্ষণীয় হলে তা দর্শককে মুগ্ধ করে ধরে রাখে।
এই চারটি সাধারণ ও প্রাথমিক সূত্র ধরে এগোলে আম-মানুষের জন্য বিনোদনের খোরাক জোগানো সম্ভব। এর কিছু আমরা সাম্প্রতিককালে হুমায়ূন আহমেদ, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বা তৌকির আহমেদ এবং আরও কারও কারও চলচ্চিত্রে দেখেছি।
দেশের চলচ্চিত্রের বাজারটা আদতে অনেক বড়। আমাদের ভ্রান্ত নীতি ও উদ্ভ্রান্ত কর্মকাণ্ডের ফলে তা কেবল ছোট হয়ে যায়নি, ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এখন আমি বলব, সরকার সরাসরি নিজে বিনিয়োগ করে (শিক্ষা, সংস্কৃতি, তথ্যসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে), নির্মাতাকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে, ট্যাক্স মওকুফ করে সুস্থ চলচ্চিত্রের দেশীয় ধারাটিকে বেগবান করে তুলতে পারে। সেই ১৯৫৭-৫৮ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পথের পাঁচালীকে শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র ধরে নিয়ে স্কুলে স্কুলে প্রদর্শন করা হয়েছিল, ১৬৬৪ সালে ঢাকায় চলচ্চিত্র উৎসবে সত্যজিৎ রায়ের মহানগর-এর শোতে ছাত্র-ছাত্রীদের টিকিট পেতে সাহায্য করা হয়েছিল।
আজ আমরা কেন বুঝব না, একালে একজন ছাত্র অন্তত ব্যাটলশিপ পোটেমকিন, রাশোমন, পথের পাঁচালী, স্টপ জেনোসাইড-এর মতো চলচ্চিত্র না দেখে নিজেকে কীভাবে শিক্ষিত বলে দাবি করবে! আমাদের শিক্ষার খোলনলচে বদলানোর সময় স্কুলেই চলচ্চিত্রের ধ্রুপদী শিখরস্পর্শী রূপ সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সব শিল্প সম্পর্কেই এ কথা বলব। স্কুলেই ছাত্ররা ‘মোনালিসা’, ‘গ্যোর্নিকা’, ‘সানফ্লাওয়ার’, জয়নুলের ‘দুর্ভিক্ষ সিরিজ’, সুলতানের ‘নবান্ন’, কামরুলের ‘তিন কন্যা’ ইত্যাদি দেখার অভিজ্ঞতা পাবে (আজকাল অত্যাধুনিক মুদ্রণে তা শস্তাতেই সম্ভব), একইভাবে সাহিত্য, সংগীতেও তাদের পরিচয় হবে ধ্রুপদী শ্রেষ্ঠ কৃতির সঙ্গে। কেবল বাঙালির বা বাংলাদেশিদের সৃষ্টির মধ্যে পরিচয় সীমাবদ্ধ হলে তার জানা ও বোধ উভয়ই খণ্ডিত হবে এবং খণ্ডিত থেকে বিকৃতির জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা খুবই জোরালো।
ফলে চলচ্চিত্রের দরজাটা খুলতে হবে। কথাটা ভারতীয় ছবি বলব না, বলব বিদেশি ছবি, বিশ্বের ছবিকে আবাহন করতে হবে। কিন্তু সেটা কোনো অবস্থাতেই ঢালাওভাবে নয়, আমাদের কোন ছবি, কোন ধরনের ছবি দরকার সেটা তো আমরাই নির্ধারণ করব।
তাহলে চলচ্চিত্রসংক্রান্ত একটা নীতিমালা আমাদের থাকা দরকার। প্রথমে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করে ওয়েবসাইটে ছেড়ে উন্মুক্ত মতামত আহ্বান করা হবে। নির্ধারিত সময়ের পরে প্রাপ্ত সব মতামত বিবেচনা করে খসড়া প্রণয়ন কমিটি আবার বসে চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করবে। এবার এটি নিয়ে তারা সেন্সর বোর্ড, চলচ্চিত্র সংসদ প্রতিনিধি, চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি, সরকার নির্বাচিত একটি প্রতিনিধিত্বমূলক উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় করে চূড়ান্ত খসড়াকে চূড়ান্ত রূপ দেবে।
এই নীতিমালায় তিনটি কথা বিশেষভাবে ঘোষণা করা হবে—চলচ্চিত্র একটি নান্দনিক শিল্পমাধ্যম, সুস্থ বিনোদনের মাধ্যম এবং শিক্ষামূলক মাধ্যম। এই আলোকে সরকার চলচ্চিত্রশিল্পকে পৃষ্ঠপোষকতা দেবে, চলচ্চিত্রের বাজার ঢেলে সাজাবে এবং সুস্থধারার চলচ্চিত্রের প্রতি দর্শকদের আকৃষ্ট করার জন্য বেসরকারি চলচ্চিত্রকর্মীদের সহযোগিতা নেবে এবং দেবে। আমাদের আজকের সাংস্কৃতিক সংকট ও সৃজনশীলতার বন্ধ্যত্ব ঘুচিয়ে মেধা-মননের উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে জাতির প্রজ্ঞা-পরিণতি অর্জনে চলচ্চিত্র ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। এ কথা রুশ বিপ্লবের কর্ণধার ভ্লাদিমির লেনিন ঠিকই উপলব্ধি করেছিলেন, আধুনিক ভারতের রূপকার জওহরলাল নেহরু বুঝেছিলেন, ফরাসি দেশে ঐতিহ্যগতভাবে এই শিল্পের প্রতি সরকারের উদার সহযোগিতা রয়েছে। একসময়কার কমিউনিস্ট দেশসমূহে অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ঘটলেও তাঁদের সংস্কৃতিচর্চার ধারা ছিল মানবিক ও উন্নত, আর তাতে চলচ্চিত্র সব সময় অত্যন্ত উচ্চস্থান পেয়ে এসেছিল। তাই সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের চলচ্চিত্রের গড়পড়তা মান ছিল অনেক উচ্চ। আর তাদের ছবি অনেক সময় একটু খোলামেলা হলেও সহিংসতা ও অশ্লীলতার স্থান তাতে ছিল না। সেখান থেকেও আমাদের শিক্ষা নেওয়ার আছে। যেকোনো বিষয় নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, তবে বিতর্ক যেন ইস্যুকে সমস্যা আর সমস্যাকে জটিল করে না তোলে। বিতর্ক ও আলোচনার লক্ষ্য হওয়া উচিত সমাধান। সমাধানের কথাই আমাদের ভাবতে হবে। কারণ চলচ্চিত্রের মধ্যে জাতির সাংস্কৃতিক মুক্তি ও জাগরণের অমিত সম্ভাবনার বীজ নিহিত আছে। তাই সমাধান, তাই পরিকল্পনা, তাই যথাসময় কর্মসূচি গ্রহণ এত জরুরি।
আবুল মোমেন: কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক।
তবে পূর্ণ সংরক্ষণ ব্যবস্থায় (protection) থাকার চেয়ে সুস্থ প্রতিযোগিতার ভেতর দিয়ে বিকশিত হওয়ার মধ্যে গুণমানে পরিণতি লাভের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
পঞ্চাশ-ষাটের দশকে আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পের সূচনালগ্নে মূলধারায় যে উন্নতমানের সব ছবি তৈরি হয়েছে, আজ অবধি মুষ্টিমেয় দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া কোনো পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি সে মান ছুঁতে পারেনি। এর মধ্যে দুটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়: ১. পঞ্চাশ-ষাটের ওই সময়ে ভারতীয়সহ বিদেশি চলচ্চিত্র যথেষ্ট আমদানি হতো এবং বাণিজ্যিক ছবির মান যখন পড়তে শুরু করেছে ও পতন চূড়ান্ত পর্যায়ে গেছে তখন আগাগোড়া প্রটেকশনের মধ্যেই ছিল চলচ্চিত্র। ২. পঞ্চাশ-ষাটের দশকে চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা ও সহিংসতার এত ছড়াছড়ি ছিল না, ফলে সাধারণত সিনেমা তুলনামূলক পরিচ্ছন্ন কাহিনিমূলক হতো যা সপরিবারে উপভোগ্য বিনোদনমাধ্যম হিসেবে সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় খাত ছিল।
এই বাস্তবতা থেকে আমার মনে হয়, দুটো ভাবনা অযৌক্তিক মনে হবে না। প্রথমত, বিনোদনমাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রকে যা সংকটে ফেলে দিয়েছে তার মধ্যে বাসা বাঁধা দুই ব্যাধি—অশ্লীলতা ও সহিংসতা। বাণিজ্যের জন্য কাহিনি, অভিনয়, নির্মিতির শৈল্পিক গুণ সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয়ে এ দুটি উপাদানের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে প্রেক্ষাগৃহের পরিবেশ নষ্ট হলো—নারী, শিশু ও ভদ্রজনের জন্য নিষিদ্ধ এলাকা হয়ে পড়ল। এটা একদিনে হয়নি, দিনে-দিনে ধাপে-ধাপে আমাদের চোখের সামনেই ঘটেছে। এ ঘটনা বন্ধ করতে হতো দুইভাবে: ক. সেন্সরের নিয়মকানুন ঠিক করে তার প্রয়োগ ঘটানো এবং খ. প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্রের মূলধারার দর্শক হিসেবে মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্তকে সপরিবারে ফিরিয়ে আনার জন্য সেখানে কাহিনি, অভিনয় ও শৈল্পিক নির্মিতির সমন্বয়ে তৈরি সুস্থ চলচ্চিত্রকে মূলধারা হিসেবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান। এভাবে প্রেক্ষাগৃহে দর্শক ফিরে আসবে আর চলচ্চিত্রশিল্প সঞ্জীবিত হবে।
দ্বিতীয়ত, এখানকার চলচ্চিত্রকে সম্পূর্ণ প্রটেকশন না দিয়ে সুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে গড়ে উঠতে দেওয়া উচিত। প্রটেকশনের ফলেই কিন্তু মুনাফার বাসনায় অশ্লীলতা ও সহিংসতাকে পুঁজি করে শিল্পরুচিবিহীন নির্মাতারা এফডিসিতে জাঁকিয়ে বসেছিলেন। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, সুস্থধারাকেই প্রটেকশন দেওয়া দরকার। সেটা দেওয়ার স্বার্থেই আমরা বলতে পারি, পঞ্চাশ-ষাটের দশকের সুস্থধারার সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা।
তখন প্রচুর বিদেশি ছবি আমদানি হতো। মনে রাখবেন, আমি কেবল ভারতীয় ছবি বা ঢালাওভাবে ভারতীয় ও বিদেশি ছবির কথা বলছি না। আমি বলছি চলচ্চিত্রের বিশ্ববাজার থেকে নীতিমালার ভিত্তিতে নির্বাচিত সুস্থধারার চলচ্চিত্র আমদানি করার কথা। তাতে দুটি উপকার হতে পারে—অশ্লীলতা-সহিংসতার দাপট প্রশমিত হবে এবং দেশের চলচ্চিত্রের সামগ্রিক মান বাড়বে।
বর্তমানে শিক্ষিত রুচিশীল পরিবারের কোনো মানুষের পক্ষে প্রেক্ষাগৃহে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় তাঁরা বস্তুত দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে গিয়ে ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালের ফাঁদে আটকা পড়ছেন। এই সব বানোয়াট কূটকচালে ভরা চক্রান্ত-কুটিলতার কাহিনিজালে আর কুশীলবদের পোশাকি চাকচিক্যে ও বাহ্য স্মার্টনেসের জালে তাঁরা বাঁধা পড়েছেন। এটা তাঁদের দৈনন্দিন খোরাক এবং ভয়ানক নেশার মতো আচ্ছন্ন করে রাখছে। কবে ফিল্ম সোসাইটি করা আমাদের হাজার দেড়েক (সংখ্যাটা মোরশেদ-ফারুকী প্রমুখ প্রতিশ্রুতিশীল নির্মাতাদের লেখা থেকে পেয়েছি) তরুণ নির্মাতা ১৬ কোটি মানুষের দেশে প্রেক্ষাগৃহে নিয়ে আসবেন চাহিদার পরিমাণ সুস্থ চলচ্চিত্র, তার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকলে তত দিনে ভালো দর্শকেরা দলে দলে হিন্দি সিরিয়ালের নেশায় আত্মাহুতি দেবেন।
আমি নিজে চলচ্চিত্র সংসদ করে এসেছি, এখনো যুক্ত আছি এ আন্দোলনে এবং যে হাজার দেড়েক ছেলেমেয়ে তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে, তাদের ওপর আমার আস্থাও আছে। আমার বক্তব্যটা তাদের এবং যেসব দর্শক স্বভাবতই তাদের নির্মিত চলচ্চিত্রের দর্শক হওয়ার কথা তাদেরই জন্য।
প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র দেখার একটা মস্ত বড় প্রাপ্তি হলো, একসঙ্গে বহু মানুষ মিলে আবেগ-অনুভূতি, প্রতিক্রিয়া-ভাবনা এবং স্মৃতির ঐক্যে এক নান্দনিক আনন্দের বন্ধন। বহু মানুষের চিন্তা ও কল্পজগৎ এবং রুচি ও নান্দনিক বোধের যৌথ রসায়ন ঘটিয়ে সমাজে সমরুচি ও সমনান্দনিকতার পরিবেশ তৈরি হয় এভাবে। ঘরে বসে নিজের টিভিতে নাটক/চলচ্চিত্র দেখার দীর্ঘ অভ্যাসের ফলে মানুষ হয়ে পড়ছে exclusivist—নিতান্ত আপনাতে আবদ্ধ মানুষ। প্রযুক্তির এই ব্যবহারগুলোর অনেক সুবিধা আছে নিঃসন্দেহে, কিন্তু সে সুবিধা ব্যক্তির দৈনন্দিন বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেই ব্যবহূত হলে তা সমাজে বিচ্ছিন্নতা, গোপনীয়তা, অপরাধপ্রবণতাসহ নানা অমানবিক বিপর্যয় তৈরি করবে। চলচ্চিত্রের মজা ও সাফল্য হচ্ছে তার প্রেক্ষাগৃহ মাতিয়ে রাখার ক্ষমতা। সেটা কে কতটা শিল্পগত উৎকর্ষের মাধ্যমে করছে তা দিয়ে নির্ণিত হতে হবে।
তাহলে আমজনগণকে এই নান্দনিক বোধে সাড়া দিতে পারার জায়গায় আসতে বা আনতে হবে। এটাই হলো সুস্থ চলচ্চিত্র নির্মাতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। প্রটেকশন তাঁকে চ্যালেঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করে নেয় এবং অন্য আরেক ধরনের, হয়তো নির্দোষ, স্বেচ্ছাচারিতার বা উৎকেন্দ্রিকতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
একটা বিষয়ে সবাই একমত হতে পারি। সব মানুষ, শিক্ষিত-শিক্ষাবঞ্চিত-নির্বশেষে, গল্প ভালোবাসেন, বস্তুত মানুষের মধ্যে আছে গল্প শোনার অনন্ত তৃষ্ণা। দ্বিতীয়ত, কিছুদিন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পর মানুষ ভালো ও মন্দ অভিনয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে এবং অভিনয়ের গুণ বিচারেই নট-নটীর ভক্ত হয়ে যায়। তৃতীয়ত, মানুষ সুরেলা গান ভালোবাসে, বাংলা তো গানের দেশ, এ আমরা আরও ভালো জানব। চতুর্থত, মানুষের পাঁচ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হলো দর্শনেন্দ্রিয়, বলা হয়, ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে মানুষ যতটা গ্রহণ করে তার ৮৫ শতাংশ আসে দৃষ্টির মাধ্যমে, বাকি চারটি মিলে ১৫ শতাংশ। ফলে চলচ্চিত্র দৃশ্যগতভাবে আকর্ষণীয় হলে তা দর্শককে মুগ্ধ করে ধরে রাখে।
এই চারটি সাধারণ ও প্রাথমিক সূত্র ধরে এগোলে আম-মানুষের জন্য বিনোদনের খোরাক জোগানো সম্ভব। এর কিছু আমরা সাম্প্রতিককালে হুমায়ূন আহমেদ, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বা তৌকির আহমেদ এবং আরও কারও কারও চলচ্চিত্রে দেখেছি।
দেশের চলচ্চিত্রের বাজারটা আদতে অনেক বড়। আমাদের ভ্রান্ত নীতি ও উদ্ভ্রান্ত কর্মকাণ্ডের ফলে তা কেবল ছোট হয়ে যায়নি, ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এখন আমি বলব, সরকার সরাসরি নিজে বিনিয়োগ করে (শিক্ষা, সংস্কৃতি, তথ্যসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে), নির্মাতাকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে, ট্যাক্স মওকুফ করে সুস্থ চলচ্চিত্রের দেশীয় ধারাটিকে বেগবান করে তুলতে পারে। সেই ১৯৫৭-৫৮ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পথের পাঁচালীকে শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র ধরে নিয়ে স্কুলে স্কুলে প্রদর্শন করা হয়েছিল, ১৬৬৪ সালে ঢাকায় চলচ্চিত্র উৎসবে সত্যজিৎ রায়ের মহানগর-এর শোতে ছাত্র-ছাত্রীদের টিকিট পেতে সাহায্য করা হয়েছিল।
আজ আমরা কেন বুঝব না, একালে একজন ছাত্র অন্তত ব্যাটলশিপ পোটেমকিন, রাশোমন, পথের পাঁচালী, স্টপ জেনোসাইড-এর মতো চলচ্চিত্র না দেখে নিজেকে কীভাবে শিক্ষিত বলে দাবি করবে! আমাদের শিক্ষার খোলনলচে বদলানোর সময় স্কুলেই চলচ্চিত্রের ধ্রুপদী শিখরস্পর্শী রূপ সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সব শিল্প সম্পর্কেই এ কথা বলব। স্কুলেই ছাত্ররা ‘মোনালিসা’, ‘গ্যোর্নিকা’, ‘সানফ্লাওয়ার’, জয়নুলের ‘দুর্ভিক্ষ সিরিজ’, সুলতানের ‘নবান্ন’, কামরুলের ‘তিন কন্যা’ ইত্যাদি দেখার অভিজ্ঞতা পাবে (আজকাল অত্যাধুনিক মুদ্রণে তা শস্তাতেই সম্ভব), একইভাবে সাহিত্য, সংগীতেও তাদের পরিচয় হবে ধ্রুপদী শ্রেষ্ঠ কৃতির সঙ্গে। কেবল বাঙালির বা বাংলাদেশিদের সৃষ্টির মধ্যে পরিচয় সীমাবদ্ধ হলে তার জানা ও বোধ উভয়ই খণ্ডিত হবে এবং খণ্ডিত থেকে বিকৃতির জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা খুবই জোরালো।
ফলে চলচ্চিত্রের দরজাটা খুলতে হবে। কথাটা ভারতীয় ছবি বলব না, বলব বিদেশি ছবি, বিশ্বের ছবিকে আবাহন করতে হবে। কিন্তু সেটা কোনো অবস্থাতেই ঢালাওভাবে নয়, আমাদের কোন ছবি, কোন ধরনের ছবি দরকার সেটা তো আমরাই নির্ধারণ করব।
তাহলে চলচ্চিত্রসংক্রান্ত একটা নীতিমালা আমাদের থাকা দরকার। প্রথমে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করে ওয়েবসাইটে ছেড়ে উন্মুক্ত মতামত আহ্বান করা হবে। নির্ধারিত সময়ের পরে প্রাপ্ত সব মতামত বিবেচনা করে খসড়া প্রণয়ন কমিটি আবার বসে চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করবে। এবার এটি নিয়ে তারা সেন্সর বোর্ড, চলচ্চিত্র সংসদ প্রতিনিধি, চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি, সরকার নির্বাচিত একটি প্রতিনিধিত্বমূলক উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় করে চূড়ান্ত খসড়াকে চূড়ান্ত রূপ দেবে।
এই নীতিমালায় তিনটি কথা বিশেষভাবে ঘোষণা করা হবে—চলচ্চিত্র একটি নান্দনিক শিল্পমাধ্যম, সুস্থ বিনোদনের মাধ্যম এবং শিক্ষামূলক মাধ্যম। এই আলোকে সরকার চলচ্চিত্রশিল্পকে পৃষ্ঠপোষকতা দেবে, চলচ্চিত্রের বাজার ঢেলে সাজাবে এবং সুস্থধারার চলচ্চিত্রের প্রতি দর্শকদের আকৃষ্ট করার জন্য বেসরকারি চলচ্চিত্রকর্মীদের সহযোগিতা নেবে এবং দেবে। আমাদের আজকের সাংস্কৃতিক সংকট ও সৃজনশীলতার বন্ধ্যত্ব ঘুচিয়ে মেধা-মননের উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে জাতির প্রজ্ঞা-পরিণতি অর্জনে চলচ্চিত্র ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। এ কথা রুশ বিপ্লবের কর্ণধার ভ্লাদিমির লেনিন ঠিকই উপলব্ধি করেছিলেন, আধুনিক ভারতের রূপকার জওহরলাল নেহরু বুঝেছিলেন, ফরাসি দেশে ঐতিহ্যগতভাবে এই শিল্পের প্রতি সরকারের উদার সহযোগিতা রয়েছে। একসময়কার কমিউনিস্ট দেশসমূহে অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ঘটলেও তাঁদের সংস্কৃতিচর্চার ধারা ছিল মানবিক ও উন্নত, আর তাতে চলচ্চিত্র সব সময় অত্যন্ত উচ্চস্থান পেয়ে এসেছিল। তাই সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের চলচ্চিত্রের গড়পড়তা মান ছিল অনেক উচ্চ। আর তাদের ছবি অনেক সময় একটু খোলামেলা হলেও সহিংসতা ও অশ্লীলতার স্থান তাতে ছিল না। সেখান থেকেও আমাদের শিক্ষা নেওয়ার আছে। যেকোনো বিষয় নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, তবে বিতর্ক যেন ইস্যুকে সমস্যা আর সমস্যাকে জটিল করে না তোলে। বিতর্ক ও আলোচনার লক্ষ্য হওয়া উচিত সমাধান। সমাধানের কথাই আমাদের ভাবতে হবে। কারণ চলচ্চিত্রের মধ্যে জাতির সাংস্কৃতিক মুক্তি ও জাগরণের অমিত সম্ভাবনার বীজ নিহিত আছে। তাই সমাধান, তাই পরিকল্পনা, তাই যথাসময় কর্মসূচি গ্রহণ এত জরুরি।
আবুল মোমেন: কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক।
No comments