থাইল্যান্ড-জ্বলন্ত আগুনে বাতাস দেওয়া-গার্ডিয়ানের সম্পাদকীয়

গত বুধবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। থাই সেনাবাহিনী যখন সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের অবরোধ মাড়িয়ে তাদের সুরক্ষিত আস্তানায় ঢুকে পড়ে, তখন যে এমনটা ঘটতে যাচ্ছে তা সবাই আন্দাজ করতে পেরেছিল।


ভারী গোলাবর্ষণ আর কখনো কখনো এলোপাতাড়ি গুলির ফলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। আরও রক্তপাত হওয়া রুখতে বিক্ষোভকারী নেতারা আত্মসমর্পণ করেন এবং তাঁদের সমর্থকদের কাছে মিনতি করেন, যেন তারাও এ পথ পরিত্যাগ করে আর নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যায়। কিন্তু শিগগিরই সমর্থকেরা তাঁদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
পরাজিতের দলে থাকা রণমুখো কর্মীরা তাদের রাগ ঝেড়েছে স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্যাংক, একটি ডিপার্টমেন্ট স্টোর কমপ্লেক্স, দুটি সরকারপন্থী সংবাদপত্র ও একটি টেলিভিশন স্টেশন ভাঙচুর করে। এসব বিক্ষোভকারীর কেউ কেউ আবার সশস্ত্র ছিলেন। সরকার ও লাল শার্ট পরা বিক্ষোভকারীদের মধ্যে দেনদরবারে একটি সমাধানে পৌঁছার কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব হয়েছিল গত সপ্তাহে, কিন্তু এই সপ্তাহে মধ্যস্থতার নতুন প্রচেষ্টাকে সরকার যে কায়দায় প্রত্যাখ্যান করেছে, একই কায়দায় সেই সমঝোতায় পৌঁছার পথও রুদ্ধ হয়ে যায়। বুধবার যে রক্তাক্ত পরিস্থিতি দেখা গেছে, তাতে বিক্ষোভকারীদের শিবির গুঁড়িয়ে দিয়ে তারপর তাদের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত সরকার—সরকার পক্ষের এই দাবি অর্থহীন। ছয় সপ্তাহ ধরে ব্যাংককের কেন্দ্রস্থল অচল করে রেখেছিল যে বিক্ষোভকারীরা, তাদের জন্য এই ঘটনা ছিল সার্বিক পরাজয়। এত কিছুর পর কি আর সংলাপ হতে পারে! গত সোমবার স্নাইপারের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে লাল শার্ট পরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেওয়া জেনারেল খাত্তিয়া সাবাসদিপলের। তিনি লাল শার্ট পরা বিক্ষোভকারীদের প্রধান সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই চূড়ান্ত শোডাউন যে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে, তা টের পাওয়া যাচ্ছিল। সেনাবাহিনীর এই বলপ্রয়োগ দুই রাজনৈতিক শিবিরের মধ্যে বিরাজমান রাজনৈতিক উত্তেজনা শুধুু বাড়তেই পারে।
ভোটাধিকার বঞ্চিত গণতন্ত্রকামী কর্মী এবং যে অভিজাতবর্গ নির্বাচনকে পাশ কাটিয়ে যায় ও নিয়মিত সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায়, তাদের মধ্যে চিরাচরিত যে লড়াই, সেটির মতো নয় এই লড়াই। লাল শার্টের আড়ালে নির্বাসনে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার প্রবল উপস্থিতি। এই প্রবল প্রতাপশালী প্রধানমন্ত্রী সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। রক্ত বিসর্জন দিতে সমর্থকদের আহ্বান জানাতে তাঁর অতি উৎসাহ, কিন্তু নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলতে তিনি নারাজ। লাল শার্ট পরা শিবিরের প্রধান শক্তি ছিলেন থাকসিন, কিন্তু একমাত্র শক্তি ছিলেন না। এই বিক্ষোভ অপরিহার্যভাবেই শহুরে ও গ্রামীণ গরিবদের সমর্থন কাড়তে সমর্থ হয়েছে। সামরিক বাহিনীর হিসাব অনুযায়ী, ৭০ শতাংশ বিক্ষোভকারী ব্যাংকক ও তার আশপাশের প্রদেশ থেকে আসা। এরা থাকসিনের শক্তিকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কৃষক নয়। আর হ্যাঁ, এই বিক্ষোভ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ঘাটতি বিষয়েও।
লাল শার্ট পরা শিবিরকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী আপিসিত ভেজ্জাজিওয়ার সরকারের জন্য একটি সাময়িক বিজয়। যখন লাশ বাড়তে থাকবে, আর খুনের প্রত্যক্ষদর্শী বয়ান বেরিয়ে আসতে থাকবে, তখন তো নিঃসন্দেহে এই সংঘাতের এটাই শেষ লড়াই হবে না।
গার্ডিয়ান পত্রিকা থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ: আহসান হাবীব।

No comments

Powered by Blogger.