শিক্ষা-সবার আগে চাই স্বতন্ত্র বেতন স্কেল by নাহিদ নলেজ
আমরা বেশ কিছুদিন ধরে শুনছিলাম, চলতি অর্থবছর থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল দেওয়া হবে; কিন্তু সেটা যদি ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখা হয়, তাহলে শিক্ষকরা এই আচরণকে যা মনে করবেন, তা হচ্ছে নির্বাচনী খেল যে কোনো শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য, রাষ্ট্র পরিচালকরা যেমন মতাদর্শ ধারণ করেন, তেমন মানুষ গড়ে তোলা।
যেমন ধরনের মানুষই শাসক শ্রেণী প্রত্যাশা করুন না কেন সবার আগে চাই সেই মানুষ যারা গড়ে তুলবেন; সেই সব কারিগর সংগ্রহ করা। যেমন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রতি বছর কোচ সংগ্রহ করে এবং তা করতে গিয়ে প্রতি বছর গুনতে হয় কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। ক্রিকেটের বেলায়, ফুটবলের বেলায় এ ব্যাপারটি বুঝলেও শিক্ষার ক্ষেত্রে এটা কেউ বুঝতে চায় না। কেন বুঝতে চায় না? এখানেই ধরা পড়ে শিক্ষার ক্ষেত্রে সত্যিকারের মনোভাব। আমাদের শাসক শ্রেণীর মতাদর্শিক গুরু রবীন্দ্রনাথও তো শান্তিনিকেতনে ছাত্রদের গাছের নিচে পাঠদান করেছেন, উঁচু বেতনের শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। তার মানে, চাইলে গাছের নিচেও যথার্থ শিক্ষা দেওয়া যায়, যদি উপযুক্ত শিক্ষক পাওয়া যায়; কিন্তু উপযুক্ত শিক্ষক কীভাবে পাওয়া যাবে? যদি সামান্য পিয়নের চাকরিতে চলনসই বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় আর সর্বোচ্চ সার্টিফিকেটধারী হয়েও নিম্নধাপের বেতন-ভাতা নিয়ে জীবনযাপন করতে হয়, তাহলে কে আসবে এই পেশায়? কেন বাজার করার সময় 'প্রাইমারি মাস্টার' বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হবেন?
হ্যাঁ, শিক্ষকরা এই বেতন-ভাতায় অবশ্যই সন্তুষ্ট থাকতেন, যদি গণতান্ত্রিক বেতন কাঠামো অর্থাৎ সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের অনুপাত হতো ১ঃ৩; তাহলে শিক্ষকরা হাসতে হাসতে এ দেশের জনগণের অর্থাৎ শ্রমিক-কৃষকের সঙ্গে সম্মানিত জীবনযাপন করতে পারতেন; কিন্তু শাসক শ্রেণী যখন নিচের দিকে ১০০ টাকা বাড়িয়ে নিজেরা ১৫০০ টাকা বাড়িয়ে নেন, তখন কি শিক্ষকগণ ধৈর্যের পারাকাষ্ঠা দেখাবেন? যখন সকলকেই পরিণত করেছেন মজুরিভোগী শ্রমজীবীরূপে?
সংবিধান নিয়ে শাসক শ্রেণীর দুই টিম কত কথাই বলছে, কত সুয়োমোটো রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট; কিন্তু ৩৮ বছর ধরে সংবিধানের একটি ধারা যে লঙ্ঘিত হচ্ছে সেদিকে কোনো নজর পড়ে না। এটি হচ্ছে সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশের ২০(১) নং ধারা। এতে আছে, 'প্রত্যেকের নিকট হইতে যোগ্যতানুসারে প্রত্যেককে কর্মানুযায়ী'_ এই নীতির ভিত্তিতে প্রত্যেকে স্বীয় কর্মের জন্য পারিশ্রমিক লাভ করবেন।
এই নীতি লঙ্ঘিত হওয়ায় প্রতি বছর মেধাবী শিক্ষকরা অর্থাৎ সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী শিক্ষকরা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। অথচ সরকার যে শিক্ষানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে এসব মেধাবী শিক্ষক অন্য পেশায় চলে গেলে শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হবে। অর্থাৎ সরকার যে বছর থেকে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের ঘোষণা দেবে, সেই বছরও যদি স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণা করে তাহলেও অন্তত চার-পাঁচ বছর যষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানের জন্য যোগ্য শিক্ষক পাওয়া যাবে না। চার-পাঁচ বছরে বাংলাদেশের কত লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সেই অঙ্ক কষার দায়িত্ব কোন যাদব পণ্ডিত নেবেন? এই বছর ক'টি শিক্ষা নামের জাতির মেরুদণ্ডটি কি ভাঙাই থাকবে? অবশ্য জাতি বলতে যদি, ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের বোঝায়, তাহলে সমস্যা নেই।
তাছাড়া বেশি কথা বলার প্রয়োজন কি? প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরুষ শিক্ষকদের জন্য নূ্যনতম বিএ পাসের যোগ্যতা রাখা হয়েছে, অন্যান্য চাকরির বিএ পাসধারীর যা বেতন, এখানে তা করা হবে না কেন? অন্যান্য চাকরিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী প্রমোশনের ব্যবস্থা আছে, এখানে কেন দেওয়া হবে না, কেন সংবিধান লঙ্ঘিত হতেই থাকবে?
আমরা বেশ কিছুদিন ধরে শুনছিলাম, চলতি অর্থবছর থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল দেওয়া হবে; কিন্তু সেটা যদি ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখা হয়, তাহলে শিক্ষকরা এই আচরণকে যা মনে করবেন, তা হলো_ নির্বাচনী খেল। আর প্রতিটি খেলারই কিন্তু শেষ আছে।
নাহিদ নলেজ : সংগঠক ও শিক্ষক
nahiduttar@yahoo.com
হ্যাঁ, শিক্ষকরা এই বেতন-ভাতায় অবশ্যই সন্তুষ্ট থাকতেন, যদি গণতান্ত্রিক বেতন কাঠামো অর্থাৎ সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের অনুপাত হতো ১ঃ৩; তাহলে শিক্ষকরা হাসতে হাসতে এ দেশের জনগণের অর্থাৎ শ্রমিক-কৃষকের সঙ্গে সম্মানিত জীবনযাপন করতে পারতেন; কিন্তু শাসক শ্রেণী যখন নিচের দিকে ১০০ টাকা বাড়িয়ে নিজেরা ১৫০০ টাকা বাড়িয়ে নেন, তখন কি শিক্ষকগণ ধৈর্যের পারাকাষ্ঠা দেখাবেন? যখন সকলকেই পরিণত করেছেন মজুরিভোগী শ্রমজীবীরূপে?
সংবিধান নিয়ে শাসক শ্রেণীর দুই টিম কত কথাই বলছে, কত সুয়োমোটো রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট; কিন্তু ৩৮ বছর ধরে সংবিধানের একটি ধারা যে লঙ্ঘিত হচ্ছে সেদিকে কোনো নজর পড়ে না। এটি হচ্ছে সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশের ২০(১) নং ধারা। এতে আছে, 'প্রত্যেকের নিকট হইতে যোগ্যতানুসারে প্রত্যেককে কর্মানুযায়ী'_ এই নীতির ভিত্তিতে প্রত্যেকে স্বীয় কর্মের জন্য পারিশ্রমিক লাভ করবেন।
এই নীতি লঙ্ঘিত হওয়ায় প্রতি বছর মেধাবী শিক্ষকরা অর্থাৎ সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী শিক্ষকরা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। অথচ সরকার যে শিক্ষানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে এসব মেধাবী শিক্ষক অন্য পেশায় চলে গেলে শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হবে। অর্থাৎ সরকার যে বছর থেকে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের ঘোষণা দেবে, সেই বছরও যদি স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণা করে তাহলেও অন্তত চার-পাঁচ বছর যষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানের জন্য যোগ্য শিক্ষক পাওয়া যাবে না। চার-পাঁচ বছরে বাংলাদেশের কত লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সেই অঙ্ক কষার দায়িত্ব কোন যাদব পণ্ডিত নেবেন? এই বছর ক'টি শিক্ষা নামের জাতির মেরুদণ্ডটি কি ভাঙাই থাকবে? অবশ্য জাতি বলতে যদি, ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের বোঝায়, তাহলে সমস্যা নেই।
তাছাড়া বেশি কথা বলার প্রয়োজন কি? প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরুষ শিক্ষকদের জন্য নূ্যনতম বিএ পাসের যোগ্যতা রাখা হয়েছে, অন্যান্য চাকরির বিএ পাসধারীর যা বেতন, এখানে তা করা হবে না কেন? অন্যান্য চাকরিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী প্রমোশনের ব্যবস্থা আছে, এখানে কেন দেওয়া হবে না, কেন সংবিধান লঙ্ঘিত হতেই থাকবে?
আমরা বেশ কিছুদিন ধরে শুনছিলাম, চলতি অর্থবছর থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল দেওয়া হবে; কিন্তু সেটা যদি ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখা হয়, তাহলে শিক্ষকরা এই আচরণকে যা মনে করবেন, তা হলো_ নির্বাচনী খেল। আর প্রতিটি খেলারই কিন্তু শেষ আছে।
নাহিদ নলেজ : সংগঠক ও শিক্ষক
nahiduttar@yahoo.com
No comments