ওকিনাওয়া সমস্যার শেষ কবে? by রোকেয়া রহমান
এমনিতে হূদ্যতাপূর্ণ জাপান-মার্কিন সম্পর্কে এক কাঁটার নাম ওকিনাওয়া। পরস্পরের গুরুত্বপূর্ণ এ দুই মিত্রের মধ্যে প্রায়ই বিব্রতকর পরিস্থিতির সূত্রপাত করে এই ছোট কিন্তু তীক্ষ্ন কাঁটাটি। ওকিনাওয়া থেকে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি প্রত্যাহার বা অন্তত কমিয়ে নেওয়া জাপানের ভোটারদের খুশি করার সবচেয়ে অব্যর্থ কৌশলগুলোর একটি।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ক্ষমতায় আসা ইউকিয়ো হাতোইয়ামাও নির্বাচনী প্রচারণায় সে কৌশলই অবলম্বন করেন। ৩১ মের মধ্যে ক্যাম্প ফুতেনমা নামে একটি বড় ঘাঁটি সরিয়ে নেওয়ার সময়সীমা ঘোষণা করেন তিনি। দ্বীপ থেকে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি কমানোর অঙ্গীকার করায় তাঁর দল ডিপিজের চারজন এমপি নির্বাচিত হন ওকিনাওয়া থেকে।
কিন্তু গত ৪ মে ওকিনাওয়ায় তাঁর প্রথম সফরে হাতোইয়ামা ঘোষণা দেন, ফুতেনমা ঘাঁটি পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়া এ মুহূর্তে একেবারেই অসম্ভব। এটি জাপানের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। তিনি দ্বীপবাসীর কাছে গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, জাপানের প্রয়োজনেই ফুতেনমার একটি অংশ বর্তমান স্থানেই রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ও হতাশ ওকিনাওয়াবাসী। এর প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ভঙ্গে অনেকের মতো আশাহত হয়েছেন ওকিনাওয়ার ইংরেজি ভাষার শিক্ষক জাজুয়ে নাকামুরা হুবার। হুবার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণায় আমি প্রচণ্ড হতাশ হয়েছি। অথচ মনে হয়েছিল গত ৬৫ বছরের মধ্যে তিনিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি আমাদের দুঃখ বুঝতে পেরেছেন এবং ওকিনাওয়ার মার্কিন ঘাঁটিকে জাতীয় আলোচ্যসূচিতে এনেছেন।’
অধ্যাপক হুবার বলেন, জাপানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটির ৭৪ শতাংশই ওকিনাওয়ায়। অথচ দ্বীপটির আয়তন জাপানের মোট আয়তনের মাত্র এক শতাংশ । তিনি বলেন, ‘এটা কোনো অর্থেই ঠিক নয়। ওকিনাওয়া আমাদের জন্য একটি কারাগার।’
জাপানে মোতায়েন মার্কিন সেনারা কোনো অপরাধ করলে তার বিচার পাওয়া কঠিন ব্যাপার। কারণ জাপান-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি অনুযায়ী সামরিক ঘাঁটি এলাকায় জাপানি আইন মার্কিন নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। শিক্ষক হুবার অভিযোগ করেন, ক্যাম্প ফুতেনমা ওকিনাওয়ার একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার কাছে বলে বাচ্চারা রাতে ঘুমাতে পারে না। চুক্তিতে নিষেধ থাকলেও প্রতিদিনই মার্কিন হেলিকপ্টারগুলো রাতের বেলা বাড়ির ওপর দিয়ে উড়ে যায়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। তাঁরা এখানে থাকেন না। কাজেই আমাদের দুঃখ বুঝতেও পারেন না তাঁরা।’
ওকিনাওয়াবাসী স্বীকার করেন, মার্কিন ঘাঁটি থাকাতে এখানে লোকজনের আয়-রোজগার বেড়েছে। ঘাঁটিগুলো নানা ধরনের চাকরি সৃষ্টি করেছে। গড়ে উঠেছে অনেক রেস্তোরাঁ, বিপণিকেন্দ্র ও পানশালা। তবে সার্বিকভাবে তা কোনো কল্যাণ বয়ে আনছে না বলেই তাঁদের দাবি। বাঁধ, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সমুদ্র সৈকতগুলো হারাচ্ছে স্বাভাবিক সৌন্দর্য।
কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সুয়েমাতসু কন্দোর মতে, প্রধানমন্ত্রীর আর কোনো বিকল্প নেই। সেজন্য ওকিনাওয়া থেকে মার্কিন ঘাঁটি সরাতে পারছেন না। জাপানের চারপাশে রয়েছে চীন ও উত্তর কোরিয়া। উভয় দেশেরই পরমাণু অস্ত্র আছে। কন্দো বলেন, তবে প্রধানমন্ত্রী হাতোইয়ামা একটি ভুল করেছেন এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে, যা তিনি কখনো পূরণ করতে পারবেন না।
অনেক আগেই মার্কিন অভিযাত্রীদের নজরে পড়েছিল ওকিনাওয়া। তাঁরা দ্বীপটিকে বর্ণনা করেছেন প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যমণি হিসেবে। কারণ তাইপে, সাংহাই, হংকং, সিউল, ম্যানিলা ও টোকিওর মতো এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সব কেন্দ্রই এ দ্বীপপুঞ্জের এক হাজার ৫০০ মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে পড়ে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় কোনো গোলযোগের সূত্রপাত হলে এবং যুক্তরাষ্ট্র তাতে হস্তক্ষেপ করতে চাইলে ওকিনাওয়া থেকে তা করা অনেক সহজ। কোরীয় উপদ্বীপে বিমানে গুয়াম থেকে যেতে লাগে পাঁচ ঘণ্টা। হাওয়াই থেকে ১১ ঘণ্টা আর যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকে পাক্কা ১৬ ঘণ্টা। কিন্তু ওকিনাওয়া থেকে এটি মাত্রই দুই ঘণ্টার উড়াল।
মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের ধারণা, ওকিনাওয়ার ঘাঁটিগুলো ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকারেরই প্রমাণ। ওকিনাওয়ায় শক্তিশালী ও দৃশ্যমান মার্কিন উপস্থিতি সবার কাছে তুলে ধরার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল হাসিলে সক্ষম হবে। কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, এ এলাকা থেকে রাতারাতি উপস্থিতি গুটিয়ে নিলে আঞ্চলিক মিত্ররা মনে করতে পারে এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় যুক্তরাষ্ট্রর অঙ্গীকারে ভাটা পড়েছে।
এর পরও বাস্তবতার বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র ক্রমে জাপান থেকে সেনা কমিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় স্থানান্তর, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে মোতায়েন মার্কিন সেনার সংখ্যা বাড়ানো এবং ভিয়েতনামের সমুদ্রসীমায় জাহাজ মোতায়েনের মাধ্যমে ভারসাম্যের পরিকল্পনা করছে গত কয়েক বছর ধরে।
মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে ওকিনাওয়াবাসীর অসন্তোষ রীতিমতো ক্ষোভের বারুদে পরিণত হয় ১৯৯৫ সালের এক ঘটনায়। তিন সেনা ১২ বছর বয়সী একটি মেয়েকে অপহরণ করে ধর্ষণ করলে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে সেখানকার মানুষ। এরপরই মার্কিন উপস্থিতি কমিয়ে আনার জন্য দীর্ঘ আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
ফুতেনমা ঘাঁটি ওকিনাওয়ার কম ঘনবসতিপূর্ণ একটি এলাকায় সরিয়ে নিতে ২০০৬ সালে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তি সই করে। ওই চুক্তিতে আরও বলা হয়েছিল, ২০১৪ সালের মধ্যে ওকিনাওয়া থেকে আট হাজার সেনাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় ভূখণ্ড গুয়ামে সরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হাতোইয়ামা হয়তো আরও বড় ধরনের রদবদলের আশায় আপাতত ওই চুক্তি পর্যালোচনার কথা বলছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্টতই হতাশ ও বিরক্ত করেছে।
হাতোইয়ামার রাজনৈতিক দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অব জাপানের সমর্থন এরই মধ্যে পড়তির দিকে। একটি জনমত জরিপে ৬০ শতাংশ লোক বলেছে, ফুতেনমা ঘাঁটি সরিয়ে নেওয়ার সময়সীমা রাখতে না পারলে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। এই গ্রীষ্মে দেশের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের নির্বাচন। এ অবস্থায় তিনি ওকিনাওয়ার ভোটার তথা দেশবাসীর সমর্থন, না যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রুকুটি—কোনটিকে বেশি গুরুত্ব দেবেন, তা দেখার জন্য আর কিছুদিন অপেক্ষা করতেই হবে।
ওকিনাওয়া এক ঝলকে
ওকিনাওয়া প্রিফেকচারের ১৪০টির বেশি দ্বীপের মধ্যে ‘জাপানের হাওয়াই’ হিসেবে খ্যাত ওকিনাওয়াই বৃহত্তম।
দৈর্ঘ্য ৬৭ মাইল আর প্রস্থ জায়গাভেদে দুই থেকে ১৭ মাইল।
আয়তন: ৪৫৪ বর্গমাইল।
জনসংখ্যা: ১৩ লাখ ৮৪ হাজার ৭৬২
ভাষা: আদি ওকিনাওয়ানদের ভাষা উচিনাগুচি। তবে অধিকাংশই জাপানি ভাষায় কথা বলে।
নিকট ইতিহাস: ওকিনাওয়া তথা জাপানে মার্কিন সামরিক উপস্থিতির সূচনা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। ১৯৫১ সালে একটি চুক্তির মধ্য দিয়ে ওকিনাওয়ার মালিকানা পায় যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৭২ সালে জাপানকে ওকিনাওয়ার নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু গত ৪ মে ওকিনাওয়ায় তাঁর প্রথম সফরে হাতোইয়ামা ঘোষণা দেন, ফুতেনমা ঘাঁটি পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়া এ মুহূর্তে একেবারেই অসম্ভব। এটি জাপানের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। তিনি দ্বীপবাসীর কাছে গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, জাপানের প্রয়োজনেই ফুতেনমার একটি অংশ বর্তমান স্থানেই রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ও হতাশ ওকিনাওয়াবাসী। এর প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ভঙ্গে অনেকের মতো আশাহত হয়েছেন ওকিনাওয়ার ইংরেজি ভাষার শিক্ষক জাজুয়ে নাকামুরা হুবার। হুবার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণায় আমি প্রচণ্ড হতাশ হয়েছি। অথচ মনে হয়েছিল গত ৬৫ বছরের মধ্যে তিনিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি আমাদের দুঃখ বুঝতে পেরেছেন এবং ওকিনাওয়ার মার্কিন ঘাঁটিকে জাতীয় আলোচ্যসূচিতে এনেছেন।’
অধ্যাপক হুবার বলেন, জাপানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটির ৭৪ শতাংশই ওকিনাওয়ায়। অথচ দ্বীপটির আয়তন জাপানের মোট আয়তনের মাত্র এক শতাংশ । তিনি বলেন, ‘এটা কোনো অর্থেই ঠিক নয়। ওকিনাওয়া আমাদের জন্য একটি কারাগার।’
জাপানে মোতায়েন মার্কিন সেনারা কোনো অপরাধ করলে তার বিচার পাওয়া কঠিন ব্যাপার। কারণ জাপান-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি অনুযায়ী সামরিক ঘাঁটি এলাকায় জাপানি আইন মার্কিন নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। শিক্ষক হুবার অভিযোগ করেন, ক্যাম্প ফুতেনমা ওকিনাওয়ার একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার কাছে বলে বাচ্চারা রাতে ঘুমাতে পারে না। চুক্তিতে নিষেধ থাকলেও প্রতিদিনই মার্কিন হেলিকপ্টারগুলো রাতের বেলা বাড়ির ওপর দিয়ে উড়ে যায়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। তাঁরা এখানে থাকেন না। কাজেই আমাদের দুঃখ বুঝতেও পারেন না তাঁরা।’
ওকিনাওয়াবাসী স্বীকার করেন, মার্কিন ঘাঁটি থাকাতে এখানে লোকজনের আয়-রোজগার বেড়েছে। ঘাঁটিগুলো নানা ধরনের চাকরি সৃষ্টি করেছে। গড়ে উঠেছে অনেক রেস্তোরাঁ, বিপণিকেন্দ্র ও পানশালা। তবে সার্বিকভাবে তা কোনো কল্যাণ বয়ে আনছে না বলেই তাঁদের দাবি। বাঁধ, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সমুদ্র সৈকতগুলো হারাচ্ছে স্বাভাবিক সৌন্দর্য।
কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সুয়েমাতসু কন্দোর মতে, প্রধানমন্ত্রীর আর কোনো বিকল্প নেই। সেজন্য ওকিনাওয়া থেকে মার্কিন ঘাঁটি সরাতে পারছেন না। জাপানের চারপাশে রয়েছে চীন ও উত্তর কোরিয়া। উভয় দেশেরই পরমাণু অস্ত্র আছে। কন্দো বলেন, তবে প্রধানমন্ত্রী হাতোইয়ামা একটি ভুল করেছেন এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে, যা তিনি কখনো পূরণ করতে পারবেন না।
অনেক আগেই মার্কিন অভিযাত্রীদের নজরে পড়েছিল ওকিনাওয়া। তাঁরা দ্বীপটিকে বর্ণনা করেছেন প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যমণি হিসেবে। কারণ তাইপে, সাংহাই, হংকং, সিউল, ম্যানিলা ও টোকিওর মতো এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সব কেন্দ্রই এ দ্বীপপুঞ্জের এক হাজার ৫০০ মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে পড়ে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় কোনো গোলযোগের সূত্রপাত হলে এবং যুক্তরাষ্ট্র তাতে হস্তক্ষেপ করতে চাইলে ওকিনাওয়া থেকে তা করা অনেক সহজ। কোরীয় উপদ্বীপে বিমানে গুয়াম থেকে যেতে লাগে পাঁচ ঘণ্টা। হাওয়াই থেকে ১১ ঘণ্টা আর যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকে পাক্কা ১৬ ঘণ্টা। কিন্তু ওকিনাওয়া থেকে এটি মাত্রই দুই ঘণ্টার উড়াল।
মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের ধারণা, ওকিনাওয়ার ঘাঁটিগুলো ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকারেরই প্রমাণ। ওকিনাওয়ায় শক্তিশালী ও দৃশ্যমান মার্কিন উপস্থিতি সবার কাছে তুলে ধরার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল হাসিলে সক্ষম হবে। কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, এ এলাকা থেকে রাতারাতি উপস্থিতি গুটিয়ে নিলে আঞ্চলিক মিত্ররা মনে করতে পারে এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় যুক্তরাষ্ট্রর অঙ্গীকারে ভাটা পড়েছে।
এর পরও বাস্তবতার বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র ক্রমে জাপান থেকে সেনা কমিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় স্থানান্তর, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে মোতায়েন মার্কিন সেনার সংখ্যা বাড়ানো এবং ভিয়েতনামের সমুদ্রসীমায় জাহাজ মোতায়েনের মাধ্যমে ভারসাম্যের পরিকল্পনা করছে গত কয়েক বছর ধরে।
মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে ওকিনাওয়াবাসীর অসন্তোষ রীতিমতো ক্ষোভের বারুদে পরিণত হয় ১৯৯৫ সালের এক ঘটনায়। তিন সেনা ১২ বছর বয়সী একটি মেয়েকে অপহরণ করে ধর্ষণ করলে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে সেখানকার মানুষ। এরপরই মার্কিন উপস্থিতি কমিয়ে আনার জন্য দীর্ঘ আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
ফুতেনমা ঘাঁটি ওকিনাওয়ার কম ঘনবসতিপূর্ণ একটি এলাকায় সরিয়ে নিতে ২০০৬ সালে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তি সই করে। ওই চুক্তিতে আরও বলা হয়েছিল, ২০১৪ সালের মধ্যে ওকিনাওয়া থেকে আট হাজার সেনাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় ভূখণ্ড গুয়ামে সরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হাতোইয়ামা হয়তো আরও বড় ধরনের রদবদলের আশায় আপাতত ওই চুক্তি পর্যালোচনার কথা বলছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্টতই হতাশ ও বিরক্ত করেছে।
হাতোইয়ামার রাজনৈতিক দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অব জাপানের সমর্থন এরই মধ্যে পড়তির দিকে। একটি জনমত জরিপে ৬০ শতাংশ লোক বলেছে, ফুতেনমা ঘাঁটি সরিয়ে নেওয়ার সময়সীমা রাখতে না পারলে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। এই গ্রীষ্মে দেশের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের নির্বাচন। এ অবস্থায় তিনি ওকিনাওয়ার ভোটার তথা দেশবাসীর সমর্থন, না যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রুকুটি—কোনটিকে বেশি গুরুত্ব দেবেন, তা দেখার জন্য আর কিছুদিন অপেক্ষা করতেই হবে।
ওকিনাওয়া এক ঝলকে
ওকিনাওয়া প্রিফেকচারের ১৪০টির বেশি দ্বীপের মধ্যে ‘জাপানের হাওয়াই’ হিসেবে খ্যাত ওকিনাওয়াই বৃহত্তম।
দৈর্ঘ্য ৬৭ মাইল আর প্রস্থ জায়গাভেদে দুই থেকে ১৭ মাইল।
আয়তন: ৪৫৪ বর্গমাইল।
জনসংখ্যা: ১৩ লাখ ৮৪ হাজার ৭৬২
ভাষা: আদি ওকিনাওয়ানদের ভাষা উচিনাগুচি। তবে অধিকাংশই জাপানি ভাষায় কথা বলে।
নিকট ইতিহাস: ওকিনাওয়া তথা জাপানে মার্কিন সামরিক উপস্থিতির সূচনা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। ১৯৫১ সালে একটি চুক্তির মধ্য দিয়ে ওকিনাওয়ার মালিকানা পায় যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৭২ সালে জাপানকে ওকিনাওয়ার নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
No comments