মেহেদীবাগে ঢোকা দায় by মিঠুন চৌধুরী

অপ্রশস্ত সড়ক, যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ ও ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতার কারণে মেহেদীবাগে দিনের বেশির ভাগ সময় যানজট লেগেই থাকে। দুপুরে ও সন্ধ্যার পর যানজট তীব্র হয়। একটি বেসরকারি হাসপাতালে আসা রোগী ও দর্শনার্থীদের বহনকারী অতিরিক্ত যানবাহন মেহেদীবাগের যানজটকে স্থায়ী করে রেখেছে বলে ট্রাফিক বিভাগের ধারণা।


সরেজমিনে ঘুরে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, মেহেদীবাগ এলাকার জহুর আহম্মদ চৌধুরী সড়কের আশপাশে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি হয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বহনকারী অধিকাংশ যানবাহন এ সড়কে চলাচল করে। পাশাপাশি প্রবর্তক মোড়, জিইসি মোড় ও পাঁচলাইশ এলাকায় স্বল্প সময়ে পৌঁছাতে অন্য যানবাহনও এই সড়কটি ব্যবহার করে। দুপুরের যানজটটা এ কারণেই হয়ে থাকে।
অন্যদিকে সন্ধ্যায় যানজটের সূত্রপাত হয় সড়কের গোলপাহাড় মোড় এলাকায়। এ সময় এম এম আলী সড়ক, প্রবর্তক মোড়, পাঁচলাইশ এলাকার বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগ নিরূপণ কেন্দ্রে আসা রোগীদের বহনকারী যানবাহন গোলপাহাড় মোড় এলাকা দিয়ে চলাচল করে। চতুর্মুুখী গাড়ি চলাচলের মধ্যে দু-একটি গাড়ি ট্রাফিক আইন অমান্য করলেই শুরু হয়ে যায় যানজট।
পাশাপাশি জহুর আহম্মদ চৌধুরী সড়কের অন্য প্রান্তে বেসরকারি ন্যাশনাল হাসপাতাল (চট্টগ্রাম) প্রাইভেট লিমিটেডের সামনের অংশেও যানজট বেশি হয় সন্ধ্যার দিকে। ফলে পুরো সড়কেই যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।
মেহেদীবাগ এলাকার বাসিন্দা সাইফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, মূল সড়কটা খুব বেশি চওড়া না। গত ১০ বছরে মূল রাস্তার দুই পাশে বেশ কিছু বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া হাসপাতাল, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ বহু স্থাপনা আছে এখানে। এ কারণে গাড়ির চাপ খুব বেশি। তাই দিনের বেশির ভাগ সময় এখানে যানজট লেগেই থাকে।
নগরের সুগন্ধা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা জানে আলম বলেন, দুপুরের কাছাকাছি সময়ে চট্টেশ্বরী সড়কের চিটাগাং গ্রামার স্কুল, দামপাড়ায় বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ এবং এম এম আলী সড়কের বাংলাদেশ এলিমেন্টারি স্কুল ছুটি হয়। শহরের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা সময় বাঁচানোর জন্য এ রাস্তায় চলাচল করেন। এ কারণে যানজট বেশি হয়। গত সোমবার রাত সাড়ে আটটায় ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের চট্টেশ্বরী মোড়সংলগ্ন অংশ থেকেই যানজট। অল্প কিছুদূর হেঁটে গিয়ে দেখা যায় মূল সড়কের ওপর একটি ময়লাবাহী কন্টেইনার বাঁকা করে রাখা। ওই কন্টেইনারটির কারণে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি ধীরে চলাচল করছিল। এর কয়েক গজের মধ্যেই ন্যাশনাল হাসপাতালের ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন প্রবেশ করছে। এ জন্য সড়কের এক পাশে যান চলাচল হাত উঁচিয়ে নিয়ন্ত্রণ করছেন হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষীরা। ওই এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে গাড়ির জটলা।
সড়কের গোলপাহাড় মোড় অংশে দেখা যায়, একটি প্রাইভেট কার কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সিগন্যাল অমান্য করে এম এম আলী সড়কে ঢুকে পড়ছিল। এ নিয়ে প্রাইভেট কার চালক, বিপরীত দিক থেকে আসা একটি রিকশার চালক, যাত্রী ও পথচারীরা বচসায় লিপ্ত হয়েছেন। সেখানেও শুরু হয়ে গেছে যানজট।
হাসপাতালকেন্দ্রিক যানজটের বিষয়ে ন্যাশনাল হাসপাতালের ব্যবস্থাপক নাসিম উদ্দিন নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, মেহেদীবাগে সড়ক এমনিতেই ছোট। যখন গোলপাহাড় মোড়ে যানজট হয় তখন এই সড়কে সমস্যা হয়। রোগী ও দর্শনার্থীদের গাড়ি আমাদের পার্কিংয়ে রাখা হয়। এসব গাড়ি নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষীরা নিয়ন্ত্রণ করে। এতে খুব বেশি সমস্যা হয় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (যানবাহন, উত্তর) এ কে এম এমরান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘যানজটের কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখেছি সন্ধ্যার পর ন্যাশনাল হাসপাতালে রোগী ও দর্শনার্থীদের আনাগোনা বেশি হয়। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে তাঁদের ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তাঁরা নিজেদের লোকবল দিয়ে ওইসব গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেন। বেশি যানজট হলে সড়কে কর্তব্যরত সার্জেন্ট গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। ট্রাফিক আইন না মানায় গোলপাহাড় মোড়ে যানজট বেশি হয়।’

No comments

Powered by Blogger.