শুরুর মতো শেষটাও যেন ভালো হয়-চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন

তফসিল ঘোষণার পর থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্বাচনী আমেজ লক্ষ করা গেলেও অন্যান্য বারের মতো হই-হুল্লোড় নেই, নেই রাস্তা বন্ধ করে মিছিল-সমাবেশ। এতে নির্বাচনী প্রচারের পুরোনো ধারণাও অনেকটা বদলে গেছে।


প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি পালনে যে কড়াকড়ি আরোপ করেছে, তা সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় আগের মতো বাস-ট্রাক ভর্তি করে লোক জড়ো করার অসুস্থ মহড়া এবার লক্ষ করা যায়নি। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় প্রার্থীদের সঙ্গে পাঁচজনের বেশি সমর্থক থাকতে পারবেন না বলে নির্বাচন কমিশন যে বিধান জারি করেছে, তাও তাঁরা মেনে নিয়েছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘন হতে পারে—এই আশঙ্কায় তাঁরা প্রকাশ্যে কোনো সমাবেশেও যোগ দিচ্ছেন না, এটাও ভালো লক্ষণ।
কথা হলো, এ ধারা শেষ পর্যন্ত অক্ষুণ্ন থাকবে কি না। ভোট গ্রহণ পর্যন্ত প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চললে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে একটি অনুসরণীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান অসম্ভব নয়। তবে সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হতে হবে। কোনো প্রকার গাফিলতির অবকাশ নেই।
নির্বাচনী বিধিমালা-২০১০-এর ৪ নম্বর ধারায় বলা আছে, ‘কোন প্রার্থী ভোট গ্রহণের নির্ধারিত তারিখের ২১ দিন পূর্বে কোন প্রকার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারিবেন না।’ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে ১৭ জুন। প্রতীক বরাদ্দের পর সময় থাকবে মাত্র ১৪-১৫ দিন। এতে প্রার্থীরা প্রচারের সময় কিছুটা কম পেলেও তাঁদের আর্থিক সাশ্রয়ও হবে। জনগণকেও দুর্ভোগ পোহাতে হবে কম। ব্যস্ততম মহানগরে সভা-সমাবেশ হলে তার ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকেই। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সভা-সমাবেশই নির্বাচনী প্রচারণার একমাত্র উপায় নয়; বেতার-টিভির মাধ্যমেও প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারেন।
আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হওয়ার পরও প্রার্থী-সমর্থকেরা সংযত ও সহনশীল আচরণ করবেন—এটাই সবাই আশা করেন। উসকানিমূলক বক্তৃতা-বিবৃতি থেকেও তাঁদের বিরত থাকতে হবে। কেবল প্রচারণা নয়, সব ক্ষেত্রেই নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। অতীতে নির্বাচনের নামে পেশিশক্তি ও অঢেল অর্থের ব্যবহার লক্ষ করা গেছে। জবরদস্তিভাবে নির্বাচনী ফল পাল্টে দেওয়ার নজিরও কম নেই। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তার পুনরাবৃত্তি ঘটুক, তা কেউ চায় না। নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনের সময় পুলিশ, বিডিআরের পাশাপাশি স্বল্প সময়ের জন্য সেনাসদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত সঠিক বলে মনে করি। তবে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ও নির্ভয়ে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেই নিশ্চয়তাও নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.