সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা শাখা-ফন্দিফিকির করে ২ হাজার কোটি টাকা আদায় by মনজুর আহমেদ
সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে হলমার্ক গ্রুপ নামের একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠী নানা কারসাজি ও ফন্দিফিকির করে বের করে নিয়ে গেছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এর ৭০-৮০ ভাগই নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে স্থানীয় ঋণপত্র (এলসি) খুলে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে। কিছু আছে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও চলতি মূলধন-জাতীয় ঋণ।
গত ২৮ মার্চ হলমার্ক গ্রুপ রূপসী বাংলা শাখায় সুতা কিনতে তিনটি প্রতিষ্ঠান—আনোয়ারা স্পিনিং মিলস, ম্যাক্স স্পিনিং মিলস ও স্টার স্পিনিং মিলসের অনুকূলে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার স্থানীয় ঋণপত্র খোলে। বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান তিনটিও একই শাখার গ্রাহক। একই দিনে এই এলসির অর্থ পরিশোধে নিশ্চয়তা (একসেপটেন্স) দেয় হলমার্ক। এর বিপরীতে একই শাখা তিন প্রতিষ্ঠানের (একসেপটেন্স বিল কিনে নিয়ে) হিসাবে টাকা জমাও করে দিয়েছে। এলসির প্রক্রিয়াটি কাগজপত্রের হলেও নির্ধারিত অংশ জমা রেখে (মার্জিন) ব্যাংক তিন কোম্পানির হিসাবে টাকা জমা করে দিয়েছে।
এর কয়েক দিন পর এই তিন প্রতিষ্ঠান থেকে পুরো টাকাই হলমার্ককে দিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ব্যাংকও এই তিন প্রতিষ্ঠানের হিসাব থেকে অর্থ কেটে হলমার্কের হিসাবে জমা করে নতুন নজির তৈরি করেছে।
ব্যাংকটিতে এসব নজিরবিহীন কাজে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ও উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এ কে এম আজিজুর রহমান এবং সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) সাইফুল হাসানের সরাসরি যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে। এভাবে ঋণ দেওয়া এবং স্থানীয় এলসি খুলে (ব্যাংকিং ভাষায় ইনল্যান্ড বিল পারচেজ বা আইবিপি) হাজার কোটি টাকার ব্যাংকের দায় সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতিই অনুসরণ করা হয়নি। হলমার্ক গ্রুপের কর্ণধার হচ্ছেন তানভীর মাহ্মুদ। গ্রুপের কোনো কোনো কোম্পানিতে তিনি নিজে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আর তাঁর স্ত্রী জেসমিন ইসলাম চেয়ারম্যান। জানা যায়, মাত্র ১৫ দিন আগে হলমার্ক স্পিনিং মিলস নামে বিটিএমএ থেকে সদস্যপদ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
তানভীর মাহ্মুদের সঙ্গে কথা বলতে তাঁর মুঠোফোনে খুদেবার্তাও পাঠানো হয়। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমেদ বলেন, ‘হয়তো কিছু অনিয়ম হয়ে থাকতে পারে। সেগুলোর বিষয়ে ব্যাংকের নিরীক্ষা চলছে। আমরা সবকিছু নিয়মিত করে নিতে চাই। ইতিমধ্যেই ঋণের বিপরীতে বেশ কিছু নতুন জামানত রেখেছি।’ তিনি বলেন, তাঁদের গ্রুপে এখন ৩০টি প্রতিষ্ঠান। ৩০ থেকে ৩৫ হাজার লোকবল কাজ করছে।
সোনালী ব্যাংকের নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, রূপসী বাংলা শাখায় হলমার্ক গ্রুপের ফান্ডেড ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি। এর ৭০-৮০ ভাগই একসময় এলসি-জাতীয় বা নন-ফান্ডেড দায় ছিল। অন্যদিকে অনিষ্পন্ন নন-ফান্ডেড (এলসি-জাতীয়) দায়ের পরিমাণ ৭০০ কোটি টাকার মতো।
যোগাযোগ করা হলে রূপসী বাংলা শাখার ব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হলমার্ক গ্রুপ খুব ভালো করছে। আর কিছু সমস্যা থাকতে পারে, সেগুলো নিয়ে সোনালী ব্যাংকের অডিট কাজ করছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নন-ফান্ডেড দায় সম্পর্কে তিনি বলেন, এগুলো সব ব্যাংকেই আছে। হলমার্কের এই দায় থেকে ১০০ কোটি টাকা ইতিমধ্যে আদায়ও হয়েছে।
এলসি দায়: স্থানীয় এলসি খুলে যে দায় সৃষ্টি করা হয়েছে তা হয়েছে এভাবে: হলমার্ক সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখায় সুতা কিনতে ঋণপত্র খুলেছে। বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান একই শাখার গ্রাহক। এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মালমাল সরবরাহ করার প্রমাণাদি ক্ষেত্রবিশেষে দেওয়া হয়েছে আবার দেওয়া হয়নি, কিন্তু ক্রেতা প্রতিষ্ঠান হলমার্কের পক্ষে একই শাখা মূল্য পরিশোধে ব্যাংক নিশ্চয়তা বা একসেপটেন্স দিয়েছে। এই একসেপটেন্স বিলের বিপরীতে অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে বিক্রেতাকে।
আবার জানা যায়, রূপসী বাংলা শাখায় অভ্যন্তরীণ বিল কেনার ক্ষেত্রে ম্যাক্স স্পিনিং ও আনোয়ারা স্পিনিং মিলসকে কাগজপত্র ছাড়াই কেবল ভাউচারের মাধ্যমেই বিপুল অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। ২০১২ সালের মার্চ পর্যন্ত এমন বকেয়া অর্থের পরিমাণ হয়েছে ম্যাক্স স্পিনিংয়ের ৫২৫ টাকা ও আনোয়ারা স্পিনিংয়ের ৪৬০ কোটি টাকা। আবার এই বিল কিনতে শাখা ব্যবস্থাপক নানা ধরনের কৌশলও করেছেন, যাতে কোনোভাবেই এটি খেলাপি দায় না হয়। এ ক্ষেত্রে একটি হিসাব বন্ধ করে নতুনভাবে আরেক হিসাব খুলে এই দায় সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তথ্যটি সবার জানা: সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখায় হলমার্ক গ্রুপকে এভাবে ঋণ ও ঋণপত্র খুলে পরবর্তী সময়ে ফান্ডেড দায় সৃষ্টির বিষয়টি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ ঢাকার বিভিন্ন বড় শাখার জানা ও আলোচিত বিষয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
আবার স্থানীয় এলসি খুলে অর্থ বের করার কাজে হলমার্ক গ্রুপ অন্তত ১০টি ব্যাংককে জড়িয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে বেসরকারি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের বেশ কয়েকটি শাখা, বিশেষত ইস্কাটন, মতিঝিল, নারায়ণগঞ্জ শাখা এবং রাষ্ট্র খাতের অগ্রণী ব্যাংকের আমিনকোর্ট শাখা। জানা যায়, এই ব্যাংকগুলো একপর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অর্থ আদায়ে সালিসি দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক একদফা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে ২৮ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ কেটে ব্যাংকগুলোকে পরিশোধও করেছে।
রপ্তানি আয়ের সঙ্গে অসংগতি: গত ডিসেম্বরে হলমার্ক গ্রুপের রপ্তানির বিপরীতে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখায় প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট (পিসি) বা প্রাক্-জাহাজীকরণ অর্থায়নের পরিমাণ ছিল ২৩৬ কোটি টাকা। মার্চ শেষে এটি কমে হয়েছে ১৯০ কোটি টাকার মতো। এই পিসি অর্থায়নের সুদের হার সরকার-নির্ধারিত ৭ শতাংশ। প্রশ্ন উঠেছে, হলমার্ক কীভাবে এত টাকা অত্যন্ত কম সুদের ঋণ পেতে পারে। পিসি দেওয়া হয় মোট রপ্তানি মূল্যের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশের ওপর মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংকের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ২৩৬ কোটি টাকা পিসি পেতে হলে আড়াই হাজার কোটি টাকার রপ্তানি থাকতে হবে। যেখানে দেশের সবচেয়ে বড় পোশাক রপ্তানিকারক গোষ্ঠীর বার্ষিক রপ্তানির পরিমাণ এক হাজার ৭০০ কোটি টাকার মতো।
রূপসী বাংলা শাখার ব্যবস্থাপক আজিজুর রহমানও স্বীকার করেন যে অনেক বেশি পিসি দেওয়া হয়েছিল। তবে তিনি দাবি করেন, অনেক সময় শ্রমিক অসন্তোষ কিংবা হঠাৎ কোম্পানির টাকা প্রয়োজন হলে ব্যাংকগুলো এই জাতীয় ঋণ বেশি দিয়ে থাকে।
পোশাক রপ্তানির বিপরীতে সরকার নগদ সহায়তা দেয়। ব্যাক টু ব্যাক অর্থাৎ রপ্তানির বিপরীতে বিদেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রেও কর ছাড় দেওয়া হয়। এ জন্য রপ্তানিতে কী পরিমাণ কাপড়-সুতা লাগবে, তার একটি ঘোষণা অর্থাৎ ইউটিলাইজেশন ডিক্লিয়ারেশন বা ইউডি থাকতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের মে মাস থেকে হলমার্ক গ্রুপের তিনটি ইউনিট এই ইউডি নিচ্ছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এই ইউনিটগুলো ১১৭টি ইউডি নিয়েছে, যাতে রপ্তানি মূল্যের পরিমাণ প্রায় দুই কোটি ২১ লাখ ডলার বা টাকার অঙ্কে মাত্র ১৮৮ কোটির মতো।
এর কয়েক দিন পর এই তিন প্রতিষ্ঠান থেকে পুরো টাকাই হলমার্ককে দিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ব্যাংকও এই তিন প্রতিষ্ঠানের হিসাব থেকে অর্থ কেটে হলমার্কের হিসাবে জমা করে নতুন নজির তৈরি করেছে।
ব্যাংকটিতে এসব নজিরবিহীন কাজে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ও উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এ কে এম আজিজুর রহমান এবং সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) সাইফুল হাসানের সরাসরি যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে। এভাবে ঋণ দেওয়া এবং স্থানীয় এলসি খুলে (ব্যাংকিং ভাষায় ইনল্যান্ড বিল পারচেজ বা আইবিপি) হাজার কোটি টাকার ব্যাংকের দায় সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতিই অনুসরণ করা হয়নি। হলমার্ক গ্রুপের কর্ণধার হচ্ছেন তানভীর মাহ্মুদ। গ্রুপের কোনো কোনো কোম্পানিতে তিনি নিজে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আর তাঁর স্ত্রী জেসমিন ইসলাম চেয়ারম্যান। জানা যায়, মাত্র ১৫ দিন আগে হলমার্ক স্পিনিং মিলস নামে বিটিএমএ থেকে সদস্যপদ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
তানভীর মাহ্মুদের সঙ্গে কথা বলতে তাঁর মুঠোফোনে খুদেবার্তাও পাঠানো হয়। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমেদ বলেন, ‘হয়তো কিছু অনিয়ম হয়ে থাকতে পারে। সেগুলোর বিষয়ে ব্যাংকের নিরীক্ষা চলছে। আমরা সবকিছু নিয়মিত করে নিতে চাই। ইতিমধ্যেই ঋণের বিপরীতে বেশ কিছু নতুন জামানত রেখেছি।’ তিনি বলেন, তাঁদের গ্রুপে এখন ৩০টি প্রতিষ্ঠান। ৩০ থেকে ৩৫ হাজার লোকবল কাজ করছে।
সোনালী ব্যাংকের নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, রূপসী বাংলা শাখায় হলমার্ক গ্রুপের ফান্ডেড ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি। এর ৭০-৮০ ভাগই একসময় এলসি-জাতীয় বা নন-ফান্ডেড দায় ছিল। অন্যদিকে অনিষ্পন্ন নন-ফান্ডেড (এলসি-জাতীয়) দায়ের পরিমাণ ৭০০ কোটি টাকার মতো।
যোগাযোগ করা হলে রূপসী বাংলা শাখার ব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হলমার্ক গ্রুপ খুব ভালো করছে। আর কিছু সমস্যা থাকতে পারে, সেগুলো নিয়ে সোনালী ব্যাংকের অডিট কাজ করছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নন-ফান্ডেড দায় সম্পর্কে তিনি বলেন, এগুলো সব ব্যাংকেই আছে। হলমার্কের এই দায় থেকে ১০০ কোটি টাকা ইতিমধ্যে আদায়ও হয়েছে।
এলসি দায়: স্থানীয় এলসি খুলে যে দায় সৃষ্টি করা হয়েছে তা হয়েছে এভাবে: হলমার্ক সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখায় সুতা কিনতে ঋণপত্র খুলেছে। বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান একই শাখার গ্রাহক। এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মালমাল সরবরাহ করার প্রমাণাদি ক্ষেত্রবিশেষে দেওয়া হয়েছে আবার দেওয়া হয়নি, কিন্তু ক্রেতা প্রতিষ্ঠান হলমার্কের পক্ষে একই শাখা মূল্য পরিশোধে ব্যাংক নিশ্চয়তা বা একসেপটেন্স দিয়েছে। এই একসেপটেন্স বিলের বিপরীতে অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে বিক্রেতাকে।
আবার জানা যায়, রূপসী বাংলা শাখায় অভ্যন্তরীণ বিল কেনার ক্ষেত্রে ম্যাক্স স্পিনিং ও আনোয়ারা স্পিনিং মিলসকে কাগজপত্র ছাড়াই কেবল ভাউচারের মাধ্যমেই বিপুল অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। ২০১২ সালের মার্চ পর্যন্ত এমন বকেয়া অর্থের পরিমাণ হয়েছে ম্যাক্স স্পিনিংয়ের ৫২৫ টাকা ও আনোয়ারা স্পিনিংয়ের ৪৬০ কোটি টাকা। আবার এই বিল কিনতে শাখা ব্যবস্থাপক নানা ধরনের কৌশলও করেছেন, যাতে কোনোভাবেই এটি খেলাপি দায় না হয়। এ ক্ষেত্রে একটি হিসাব বন্ধ করে নতুনভাবে আরেক হিসাব খুলে এই দায় সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তথ্যটি সবার জানা: সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখায় হলমার্ক গ্রুপকে এভাবে ঋণ ও ঋণপত্র খুলে পরবর্তী সময়ে ফান্ডেড দায় সৃষ্টির বিষয়টি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ ঢাকার বিভিন্ন বড় শাখার জানা ও আলোচিত বিষয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
আবার স্থানীয় এলসি খুলে অর্থ বের করার কাজে হলমার্ক গ্রুপ অন্তত ১০টি ব্যাংককে জড়িয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে বেসরকারি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের বেশ কয়েকটি শাখা, বিশেষত ইস্কাটন, মতিঝিল, নারায়ণগঞ্জ শাখা এবং রাষ্ট্র খাতের অগ্রণী ব্যাংকের আমিনকোর্ট শাখা। জানা যায়, এই ব্যাংকগুলো একপর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অর্থ আদায়ে সালিসি দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক একদফা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে ২৮ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ কেটে ব্যাংকগুলোকে পরিশোধও করেছে।
রপ্তানি আয়ের সঙ্গে অসংগতি: গত ডিসেম্বরে হলমার্ক গ্রুপের রপ্তানির বিপরীতে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখায় প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট (পিসি) বা প্রাক্-জাহাজীকরণ অর্থায়নের পরিমাণ ছিল ২৩৬ কোটি টাকা। মার্চ শেষে এটি কমে হয়েছে ১৯০ কোটি টাকার মতো। এই পিসি অর্থায়নের সুদের হার সরকার-নির্ধারিত ৭ শতাংশ। প্রশ্ন উঠেছে, হলমার্ক কীভাবে এত টাকা অত্যন্ত কম সুদের ঋণ পেতে পারে। পিসি দেওয়া হয় মোট রপ্তানি মূল্যের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশের ওপর মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংকের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ২৩৬ কোটি টাকা পিসি পেতে হলে আড়াই হাজার কোটি টাকার রপ্তানি থাকতে হবে। যেখানে দেশের সবচেয়ে বড় পোশাক রপ্তানিকারক গোষ্ঠীর বার্ষিক রপ্তানির পরিমাণ এক হাজার ৭০০ কোটি টাকার মতো।
রূপসী বাংলা শাখার ব্যবস্থাপক আজিজুর রহমানও স্বীকার করেন যে অনেক বেশি পিসি দেওয়া হয়েছিল। তবে তিনি দাবি করেন, অনেক সময় শ্রমিক অসন্তোষ কিংবা হঠাৎ কোম্পানির টাকা প্রয়োজন হলে ব্যাংকগুলো এই জাতীয় ঋণ বেশি দিয়ে থাকে।
পোশাক রপ্তানির বিপরীতে সরকার নগদ সহায়তা দেয়। ব্যাক টু ব্যাক অর্থাৎ রপ্তানির বিপরীতে বিদেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রেও কর ছাড় দেওয়া হয়। এ জন্য রপ্তানিতে কী পরিমাণ কাপড়-সুতা লাগবে, তার একটি ঘোষণা অর্থাৎ ইউটিলাইজেশন ডিক্লিয়ারেশন বা ইউডি থাকতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের মে মাস থেকে হলমার্ক গ্রুপের তিনটি ইউনিট এই ইউডি নিচ্ছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এই ইউনিটগুলো ১১৭টি ইউডি নিয়েছে, যাতে রপ্তানি মূল্যের পরিমাণ প্রায় দুই কোটি ২১ লাখ ডলার বা টাকার অঙ্কে মাত্র ১৮৮ কোটির মতো।
No comments