কোনো সাধারণ কাকতালীয় ঘটনা নয় by খুশবন্ত সিং
কয়েক বছর আগের কথা। তখন মুম্বাইয়ে প্রেসিডেন্ট হোটেলে উঠেছি। হোটেলের জানালা দিয়ে অপূর্ব সুন্দর সমুদ্র দেখা যেত। আমাকে হোটেলের টপ ফ্লোরে একটি কামরা দেওয়া হয়েছে। ওই কামরা থেকে পরিষ্কারভাবে সমুদ্রের তটরেখা দেখতে পেতাম। সমুদ্রে ভাসমান নৌকা এবং জাহাজের দৃশ্য উপভোগ করতাম।
এক দুপুরে চিন্তা করলাম, নিচে হোটেলের গ্রাউন্ড ফ্লোরে অবস্থিত বইয়ের দোকানে গিয়ে কিছু বই নিয়ে আসি। কামরা থেকে বের হয়ে যখন করিডর ধরে হাঁটতে শুরু করেছি, তখন দুই বয়স্ক ইউরোপীয় মহিলা আমার পথ আগলে দাঁড়ালেন। তাঁদের একজন বললেন, 'এঙ্কিউজ মি, আপনি কি জানেন এখান থেকে ছাদে যাওয়ার রাস্তা কোনদিকে? আমরা দেখতে চাই, সেখান থেকে মুম্বাইয়ের সমুদ্র সৈকত কেমন দেখা যায়। আমাদের কামরা নিচের ফ্লোরে, ওখান থেকে শুধু ফ্ল্যাটের দেয়ালগুলোই দেখা যায়।'
আমি উত্তরে বললাম, 'আমি জানি না ছাদে যাওয়ার রাস্তা কোনদিকে, কিন্তু আমার কামরা থেকে আপনারা অপূর্ব সুন্দর সৈকত দেখতে পারেন।'
আমি আমার কামরার দরজা খুলে মহিলা দুজনকে ভেতরে ডেকে নিয়ে এলাম। তাঁরা মন ভরে সমুদ্র দেখলেন। এর পর আমি তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলাম। জিজ্ঞেস করলাম, 'আপনারা কোথা থেকে এসেছেন?'
একজন জবাব দিলেন, ইংল্যান্ড।
'ইংল্যান্ডের কোথা থেকে?'
'হার্টফোর্ডশায়ার।'
আমি আবার বললাম, 'হার্টফোর্ডশায়ারের কোন জায়গা থেকে?'
জবাব এল, 'ওয়েলউইন গার্ডেন সিটি। আপনি কি এলাকাটি চেনেন?'
বললাম, শুধু চিনি বললে চলবে না, আমি সেখানে তিন বছর ছিলাম। তখন আমি লন্ডনে আইনের ওপর লেখাপড়া করতাম।'
এবার ওই মহিলা আমাকে বললেন, 'আপনি কি সেখানে ডেলকু টেনিস ক্লাবের সদস্য ছিলেন?'
জি, বাস্তবে গ্রীষ্মের সময়ে অধিকাংশ সন্ধ্যা আমার ডেলকু ক্লাবেই কাটত। এবার বিস্ময় প্রকাশের ভাব করে মহিলা বললেন, 'আপনি কি মিস্টার সিং?'
আমি চমকে উঠলাম। জবাবে বললাম, 'হ্যাঁ, আমি খুশবন্ত সিং। কিন্তু আপনি সেটা কী করে জানলেন?'
দুই মহিলার একজন জবাব দিলেন, 'হয়তো আপনার এখন মনে নেই। আমি আপনার সঙ্গে অনেক টেনিস খেলেছি।'
এই ঘটনাটি আমি আর ভুলতে পারিনি। এটি কোনো সাধারণ কাকতালীয় বিষয় নয়। কাকতালীয় ঘটনার চেয়েও যেন বেশি কিছু। এত বছর পর ওই মহিলার সঙ্গে আমার আবার দেখা হলো। তিনিও ওই হোটেলে উঠেছেন, যেখানে আমি উঠেছি। তিনি ওই করিডর ধরেই হাঁটছেন, যে করিডরে আমি বের হয়েছি নিচ থেকে একটি বই আনার জন্য। আমাদের সাক্ষাৎ হলো, আমরা কথা বলতে বলতে একজন আরেকজনকে চিনলাম। আমাদের সামনে যখন কোনো কাকতালীয় ঘটনা ঘটে, তখন আমরা অনুভব করি এর পেছনে কোনো অজ্ঞাত শক্তি কাজ করছে। এর পেছনে ওপর থেকে আসা কোনো বিষয় আছে বলে আমি মনে করি না। ওপর থেকে কেউ না ঘটালেও কোনো একটি বাহ্যিক সংযোগ এর মধ্যে রয়েছে, যা আমাদের কাছে অজ্ঞাত।
কবি উৎপল দত্ত
১৯৯৩ সালে যখন উৎপল দত্ত মারা যান, তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। তিনি চলচ্চিত্র জগতের এক অভিনেতা, নির্দেশক এবং সংগীতকার হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। কিন্তু খুব অল্পসংখ্যক মানুষই জানেন, তিনি নিভৃতে কবিতাও লিখতেন। মৃত্যুর পর উৎপল দত্তের কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী তাঁর কবিতা বাংলা থেকে ইংরেজিতে ভাষান্তর করেন। ১৯৯৬ সালে প্রথম তাঁর কবিতা ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়। বাংলায় তাঁর কবিতার সংকলনের শিরোনাম ছিল দিনবদলের কবিতা। শংকর সেনের ইংরেজি অনুবাদে কবিতা সংকলনের নাম দেওয়া হয়, পোয়েট্রি অব চেঞ্জিং টাইমস। আমি তাঁর কবিতার মধ্যে সেই কবিতার কথা বলতে পারি, যে কবিতা নিজের শহরকে নিয়ে ভালোবাসা মানুষের মধ্যে নতুন ভাবনা এনে দেবে। উৎপল দত্তের লেখা তেমনি একটি কবিতার শিরোনাম, কলকাতার গীত।
ভারতের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক ভাস্করে প্রকাশিত। হিন্দি থেকে ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
আমি উত্তরে বললাম, 'আমি জানি না ছাদে যাওয়ার রাস্তা কোনদিকে, কিন্তু আমার কামরা থেকে আপনারা অপূর্ব সুন্দর সৈকত দেখতে পারেন।'
আমি আমার কামরার দরজা খুলে মহিলা দুজনকে ভেতরে ডেকে নিয়ে এলাম। তাঁরা মন ভরে সমুদ্র দেখলেন। এর পর আমি তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলাম। জিজ্ঞেস করলাম, 'আপনারা কোথা থেকে এসেছেন?'
একজন জবাব দিলেন, ইংল্যান্ড।
'ইংল্যান্ডের কোথা থেকে?'
'হার্টফোর্ডশায়ার।'
আমি আবার বললাম, 'হার্টফোর্ডশায়ারের কোন জায়গা থেকে?'
জবাব এল, 'ওয়েলউইন গার্ডেন সিটি। আপনি কি এলাকাটি চেনেন?'
বললাম, শুধু চিনি বললে চলবে না, আমি সেখানে তিন বছর ছিলাম। তখন আমি লন্ডনে আইনের ওপর লেখাপড়া করতাম।'
এবার ওই মহিলা আমাকে বললেন, 'আপনি কি সেখানে ডেলকু টেনিস ক্লাবের সদস্য ছিলেন?'
জি, বাস্তবে গ্রীষ্মের সময়ে অধিকাংশ সন্ধ্যা আমার ডেলকু ক্লাবেই কাটত। এবার বিস্ময় প্রকাশের ভাব করে মহিলা বললেন, 'আপনি কি মিস্টার সিং?'
আমি চমকে উঠলাম। জবাবে বললাম, 'হ্যাঁ, আমি খুশবন্ত সিং। কিন্তু আপনি সেটা কী করে জানলেন?'
দুই মহিলার একজন জবাব দিলেন, 'হয়তো আপনার এখন মনে নেই। আমি আপনার সঙ্গে অনেক টেনিস খেলেছি।'
এই ঘটনাটি আমি আর ভুলতে পারিনি। এটি কোনো সাধারণ কাকতালীয় বিষয় নয়। কাকতালীয় ঘটনার চেয়েও যেন বেশি কিছু। এত বছর পর ওই মহিলার সঙ্গে আমার আবার দেখা হলো। তিনিও ওই হোটেলে উঠেছেন, যেখানে আমি উঠেছি। তিনি ওই করিডর ধরেই হাঁটছেন, যে করিডরে আমি বের হয়েছি নিচ থেকে একটি বই আনার জন্য। আমাদের সাক্ষাৎ হলো, আমরা কথা বলতে বলতে একজন আরেকজনকে চিনলাম। আমাদের সামনে যখন কোনো কাকতালীয় ঘটনা ঘটে, তখন আমরা অনুভব করি এর পেছনে কোনো অজ্ঞাত শক্তি কাজ করছে। এর পেছনে ওপর থেকে আসা কোনো বিষয় আছে বলে আমি মনে করি না। ওপর থেকে কেউ না ঘটালেও কোনো একটি বাহ্যিক সংযোগ এর মধ্যে রয়েছে, যা আমাদের কাছে অজ্ঞাত।
কবি উৎপল দত্ত
১৯৯৩ সালে যখন উৎপল দত্ত মারা যান, তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। তিনি চলচ্চিত্র জগতের এক অভিনেতা, নির্দেশক এবং সংগীতকার হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। কিন্তু খুব অল্পসংখ্যক মানুষই জানেন, তিনি নিভৃতে কবিতাও লিখতেন। মৃত্যুর পর উৎপল দত্তের কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী তাঁর কবিতা বাংলা থেকে ইংরেজিতে ভাষান্তর করেন। ১৯৯৬ সালে প্রথম তাঁর কবিতা ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়। বাংলায় তাঁর কবিতার সংকলনের শিরোনাম ছিল দিনবদলের কবিতা। শংকর সেনের ইংরেজি অনুবাদে কবিতা সংকলনের নাম দেওয়া হয়, পোয়েট্রি অব চেঞ্জিং টাইমস। আমি তাঁর কবিতার মধ্যে সেই কবিতার কথা বলতে পারি, যে কবিতা নিজের শহরকে নিয়ে ভালোবাসা মানুষের মধ্যে নতুন ভাবনা এনে দেবে। উৎপল দত্তের লেখা তেমনি একটি কবিতার শিরোনাম, কলকাতার গীত।
ভারতের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক ভাস্করে প্রকাশিত। হিন্দি থেকে ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
No comments