কোন দিকে যাচ্ছে থাইল্যান্ড? by দাউদ ইসলাম
থাইল্যান্ডে সরকার উৎখাতের লক্ষ্যে ছয় সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভের নেতারা সেনা অভিযানের মুখে তিষ্ঠোতে না পেরে পিঠটান দিলেও রাজনৈতিক সংকটের আশু কোনো সমাধান নেই বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। অচলাবস্থা নিরসনে নেওয়া হয়েছিল নানামুখী উদ্যোগ।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত দৃশ্যত সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণেই সব উদ্যোগ ভেস্তে যায়। আলোচনার বদলে শক্তি প্রয়োগের কৌশল নেয় সরকার। গত বুধবার ব্যাংককের কেন্দ্রস্থলে বিক্ষোভকারীদের আস্তানায় পূর্ণশক্তিতে হামলা করে তা গুঁড়িয়ে দেয় সেনারা। এদিনও নিহত হয় কমপক্ষে পাঁচজন। এ নিয়ে গত দুই সপ্তাহের বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা ৪০ ছাড়িয়ে যায়।
নেতাদের গ্রেপ্তার করে বিক্ষোভকারীদের মূল অবস্থান থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং কারফিউ বলবৎ করার পর সরকার বলেছে, রাজধানীতে নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তারা আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু বিক্ষোভ দমনে সেনা অভিযান দেশের অন্যান্য অংশে ক্ষোভ উসকে দিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। অন্যান্য কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে খবর পাওয়া গেছে, বিক্ষোভকারীরা সেখানে সরকারি ভবনগুলোয় হামলা চালায়। উদন শহরে বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় টাউন হলে আগুন ধরিয়ে দেয়। উত্তরাঞ্চলীয় শহর চিয়াংমাই থেকেও উত্তেজনার আঁচ পাওয়া গেছে। দেশের অন্যান্য জায়গায় বিক্ষোভের সমর্থকেরা জড়ো হতে শুরু করেছেন। ব্যাংককে বিক্ষোভকারীদের একটি দল ইতিমধ্যেই নিজেদের মূল লাল শার্ট আন্দোলন থেকে আলাদা ঘোষণা করে বলে দিয়েছে, তাঁরা লড়াই চালিয়ে যাবেন।
সরকারি একজন মুখপাত্র স্বীকার করে নিয়েছেন বিচ্ছিন্নভাবে এখনো বেশ কিছু বিক্ষোভকারী প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
আত্মসমর্পণের আগে ‘লাল শার্ট’ নামে পরিচিত বিক্ষোভকারীদের নেতারা বলেন তাঁরা আর রক্তপাত চাইছেন না। কিন্তু তাঁরা না চাইলেও রক্তপাত যে আরও ঘটবে তার ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে।
বিক্ষোভকারীরা পিছু হটে যাওয়ায় সংকটের সমাধান হয়ে গেছে—এমন ভবিষ্যদ্বাণী করতে ভরসা পাচ্ছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। অনেক বিশ্লেষকের মতে, অচলাবস্থার অবসান হয়নি। হয়তো আরও বড় গোলযোগের শুরু হতে যাচ্ছে মাত্র।
হাজার হাজার ‘লাল শার্ট’ বিক্ষোভকারী ব্যাংককের বাণিজ্যিক কেন্দ্র দখল করে রেখেছিল প্রায় দুই মাস ধরে। তাদের দাবি, অবিলম্বে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন দিতে হবে। বামপন্থী বেশ কিছু সংগঠনের শিথিল একটি জোট এই লাল শার্টরা। তারা মূলত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ। এদের অনেকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার সমর্থক। তাদের দাবি প্রধানমন্ত্রী আপিসিত ভেজ্জাজিওয়া অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছেন। তাঁকে সরে যেতে হবে।
সংকটের সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে থাই সরকারের ওপর। সংঘাতের পথ ছেড়ে আলোচনার টেবিলে বসার জন্য জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও আঞ্চলিক জোট আসিয়ান—সবাই দুই পক্ষের প্রতি আহ্বান জানায়। আসিয়ানের কোনো কোনো দেশ থাইল্যান্ডের পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশ্যেই তাদের অসন্তোষ ব্যক্ত করা শুরু করেছে।
আসিয়ানের দেশগুলো থাইল্যান্ডের পরিস্থিতি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে কম্বোডিয়া অভিযোগ করছে, থাইল্যান্ডের এই রাজনৈতিক সংকট পুরো আসিয়ানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। সদস্য দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সাধারণত কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে আসিয়ান। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই খারাপের দিকে গেছে যে শেষ পর্যন্ত তারাও মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছে। আসিয়ানের বর্তমান সভাপতি দেশ ভিয়েতনাম থাইল্যান্ডের পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি শান্তি আলোচনা শুরুর আহ্বান জানিয়েছে।
একজন বিশ্লেষক বলেছেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে দুই পক্ষই যেন সংঘাতের দিকেই যাচ্ছে। তিনি বলেন, থাইল্যান্ডে এ রকম রাজনৈতিক সহিংসতা আগেও হয়েছে। তবে বরাবরই যেটা দেখা গেছে, এ রকম সংঘাত যখনই গৃহযুদ্ধে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে, তখনই দুই পক্ষ কিছুটা সংযত হয়ে আলোচনার টেবিলে ফিরে এসেছে। কিন্তু এবার দুই পক্ষের মধ্যে তিক্ততা আর অবিশ্বাস যে রকম পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে করে মনে হচ্ছে, কেউই ছাড় দিতে রাজি নয়।
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার আগে তাঁদের অবরুদ্ধ তাঁবুতে গিয়েছিলেন বিবিসির সংবাদদাতা। তাঁর বর্ণনায় তাঁবুর ভেতরের চিত্র ছিল এ রকম—মাদুরের ওপর ঘুমাচ্ছে নারী-পুরুষ ও শিশুরা। কেউ কেউ তৈরি করছে খাবার। অনেকে বিশেষভাবে তৈরি মঞ্চ থেকে নেতাদের জ্বালাময়ী ভাষণ শুনছে।
তাঁবুতে অবস্থানরত বিক্ষোভকারীদের বিনা পয়সায় খাবার সরবরাহ করা হয়েছিল। তাঁবুর ভেতরে স্থাপন করা হয়েছিল বহনযোগ্য টয়লেট। এমনকি নাপিতের দোকানও ছিল সেখানে।
বিবিসির সংবাদদাতা র্যাচেল হার্ভি জানান, সকালে অফিসে যাওয়ার পথে তিনি প্রতিদিন একবার ঢুঁ মারতেন বিক্ষোভকারীদের তাঁবুতে। আর সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফেরার পথে বেশ কয়েকবার ট্রেনে তাঁর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দেখা হয়েছিল।
একদিন তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল এক নারীর। তাঁর পরনে ছিল কেতাদুরস্ত পোশাক। কিন্তু কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে দেখা গেল, পরিপাটিভাবে ভাঁজ করা লাল টি-শার্ট!
এতদিন সরকারি ও অধিকাংশ গণমাধ্যমই লাল শার্টধারীদের সাধারণ গ্রাম্য মানুষ হিসেবে চিত্রিত করে আসছিল। কিন্তু প্রমাণ মিলল, শহুরে মানুষও তাদের সঙ্গে আছে।
নেতাদের গ্রেপ্তার করে বিক্ষোভকারীদের মূল অবস্থান থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং কারফিউ বলবৎ করার পর সরকার বলেছে, রাজধানীতে নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তারা আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু বিক্ষোভ দমনে সেনা অভিযান দেশের অন্যান্য অংশে ক্ষোভ উসকে দিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। অন্যান্য কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে খবর পাওয়া গেছে, বিক্ষোভকারীরা সেখানে সরকারি ভবনগুলোয় হামলা চালায়। উদন শহরে বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় টাউন হলে আগুন ধরিয়ে দেয়। উত্তরাঞ্চলীয় শহর চিয়াংমাই থেকেও উত্তেজনার আঁচ পাওয়া গেছে। দেশের অন্যান্য জায়গায় বিক্ষোভের সমর্থকেরা জড়ো হতে শুরু করেছেন। ব্যাংককে বিক্ষোভকারীদের একটি দল ইতিমধ্যেই নিজেদের মূল লাল শার্ট আন্দোলন থেকে আলাদা ঘোষণা করে বলে দিয়েছে, তাঁরা লড়াই চালিয়ে যাবেন।
সরকারি একজন মুখপাত্র স্বীকার করে নিয়েছেন বিচ্ছিন্নভাবে এখনো বেশ কিছু বিক্ষোভকারী প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
আত্মসমর্পণের আগে ‘লাল শার্ট’ নামে পরিচিত বিক্ষোভকারীদের নেতারা বলেন তাঁরা আর রক্তপাত চাইছেন না। কিন্তু তাঁরা না চাইলেও রক্তপাত যে আরও ঘটবে তার ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে।
বিক্ষোভকারীরা পিছু হটে যাওয়ায় সংকটের সমাধান হয়ে গেছে—এমন ভবিষ্যদ্বাণী করতে ভরসা পাচ্ছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। অনেক বিশ্লেষকের মতে, অচলাবস্থার অবসান হয়নি। হয়তো আরও বড় গোলযোগের শুরু হতে যাচ্ছে মাত্র।
হাজার হাজার ‘লাল শার্ট’ বিক্ষোভকারী ব্যাংককের বাণিজ্যিক কেন্দ্র দখল করে রেখেছিল প্রায় দুই মাস ধরে। তাদের দাবি, অবিলম্বে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন দিতে হবে। বামপন্থী বেশ কিছু সংগঠনের শিথিল একটি জোট এই লাল শার্টরা। তারা মূলত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ। এদের অনেকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার সমর্থক। তাদের দাবি প্রধানমন্ত্রী আপিসিত ভেজ্জাজিওয়া অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছেন। তাঁকে সরে যেতে হবে।
সংকটের সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে থাই সরকারের ওপর। সংঘাতের পথ ছেড়ে আলোচনার টেবিলে বসার জন্য জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও আঞ্চলিক জোট আসিয়ান—সবাই দুই পক্ষের প্রতি আহ্বান জানায়। আসিয়ানের কোনো কোনো দেশ থাইল্যান্ডের পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশ্যেই তাদের অসন্তোষ ব্যক্ত করা শুরু করেছে।
আসিয়ানের দেশগুলো থাইল্যান্ডের পরিস্থিতি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে কম্বোডিয়া অভিযোগ করছে, থাইল্যান্ডের এই রাজনৈতিক সংকট পুরো আসিয়ানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। সদস্য দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সাধারণত কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে আসিয়ান। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই খারাপের দিকে গেছে যে শেষ পর্যন্ত তারাও মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছে। আসিয়ানের বর্তমান সভাপতি দেশ ভিয়েতনাম থাইল্যান্ডের পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি শান্তি আলোচনা শুরুর আহ্বান জানিয়েছে।
একজন বিশ্লেষক বলেছেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে দুই পক্ষই যেন সংঘাতের দিকেই যাচ্ছে। তিনি বলেন, থাইল্যান্ডে এ রকম রাজনৈতিক সহিংসতা আগেও হয়েছে। তবে বরাবরই যেটা দেখা গেছে, এ রকম সংঘাত যখনই গৃহযুদ্ধে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে, তখনই দুই পক্ষ কিছুটা সংযত হয়ে আলোচনার টেবিলে ফিরে এসেছে। কিন্তু এবার দুই পক্ষের মধ্যে তিক্ততা আর অবিশ্বাস যে রকম পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে করে মনে হচ্ছে, কেউই ছাড় দিতে রাজি নয়।
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার আগে তাঁদের অবরুদ্ধ তাঁবুতে গিয়েছিলেন বিবিসির সংবাদদাতা। তাঁর বর্ণনায় তাঁবুর ভেতরের চিত্র ছিল এ রকম—মাদুরের ওপর ঘুমাচ্ছে নারী-পুরুষ ও শিশুরা। কেউ কেউ তৈরি করছে খাবার। অনেকে বিশেষভাবে তৈরি মঞ্চ থেকে নেতাদের জ্বালাময়ী ভাষণ শুনছে।
তাঁবুতে অবস্থানরত বিক্ষোভকারীদের বিনা পয়সায় খাবার সরবরাহ করা হয়েছিল। তাঁবুর ভেতরে স্থাপন করা হয়েছিল বহনযোগ্য টয়লেট। এমনকি নাপিতের দোকানও ছিল সেখানে।
বিবিসির সংবাদদাতা র্যাচেল হার্ভি জানান, সকালে অফিসে যাওয়ার পথে তিনি প্রতিদিন একবার ঢুঁ মারতেন বিক্ষোভকারীদের তাঁবুতে। আর সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফেরার পথে বেশ কয়েকবার ট্রেনে তাঁর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দেখা হয়েছিল।
একদিন তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল এক নারীর। তাঁর পরনে ছিল কেতাদুরস্ত পোশাক। কিন্তু কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে দেখা গেল, পরিপাটিভাবে ভাঁজ করা লাল টি-শার্ট!
এতদিন সরকারি ও অধিকাংশ গণমাধ্যমই লাল শার্টধারীদের সাধারণ গ্রাম্য মানুষ হিসেবে চিত্রিত করে আসছিল। কিন্তু প্রমাণ মিলল, শহুরে মানুষও তাদের সঙ্গে আছে।
No comments