গবেষণা-উচ্চশিক্ষা বিলাসিতা নয়, অত্যাবশ্যক by গোলাম মোহাম্মদ ভূঞা
শিক্ষা নিয়ে অনেক কথা শোনা যায়, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, শিক্ষাই আলো, শিক্ষা সুযোগ নয়, অধিকার। একমাত্র শিক্ষাই দেশকে উন্নয়নের উচ্চমার্গে নিয়ে যেতে পারে। কথাগুলো সবই সত্য, কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখেছি, কী পরিমাণ শিক্ষা আমাদের জ্ঞানের পরিপক্বতা ও পূর্ণ সফলতা এনে দিতে পারে? দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে কয়েকটি ধাপে ভাগ করা যায়—প্রাথমিক, মাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতকোত্তর ইত্যাদি।
উচ্চশিক্ষা বলতে আমরা কী বুঝব? আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুুকু বুঝি, স্নাতকোত্তর থেকে শুরু করে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা পর্যন্ত উচ্চশিক্ষার আওতায় পড়ে। এ পর্যায় পর্যন্ত যথাযথভাবে আসতে পারলে জ্ঞানের সীমান্তরেখার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বিশ্বে নিজের অবস্থা ও অবস্থান—উভয়ই কমপক্ষে উপলব্ধি করা যায়, যা সুন্দর ভবিষ্যৎ সৃষ্টির অনুপ্রেরণা জোগাবে। উচ্চশিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি উন্নয়ন লাভ করতে পারেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জ্ঞানবিজ্ঞানের ভারকেন্দ্র ছিল ইউরোপে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ায় অনেক উচ্চশিক্ষিত লোক (বিজ্ঞানী ও পণ্ডিত) যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং সেখানে উচ্চশিক্ষার প্রসার ঘটাতে থাকেন। ফলে জ্ঞানবিজ্ঞানের ভারকেন্দ্র ইউরোপ থেকে আমেরিকায় স্থানান্তরিত হয় এবং সারা বিশ্বে তাদের প্রতিপত্তি ছড়িয়ে পড়ে।
আমরা কি জাতীয় উন্নয়ন চাই না? নিশ্চয়ই চাই।
কয়েক দশক আগে গ্রামবাংলায় সুপেয় পানির একমাত্র উৎস ছিল কাঁচা বা পাকা কুয়ো। কুয়োর গভীরতা বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন হলেও একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় না যাওয়া পর্যন্ত কোনো স্থানেই পানি পাওয়া যায় না। ঠিক তেমনই—প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা স্নাতক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা অর্জন করলে কিছু জ্ঞান অর্জন করা যায়, তবে জ্ঞানের পরিপক্বতা বা পূর্ণ সফলতা পাওয়া যায় না। ফলে জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।
কিছুদিন আগে সাউদার্ন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের সঙ্গে আলাপ করছিলাম। এক প্রসঙ্গে তিনি বললেন, আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চীনা ছাত্রের আগমন আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। কারণ, চীন বর্তমানে আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের আমেরিকার সমান বেতন-ভাতা দিয়ে চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দিচ্ছে। ফলে চীনা ছাত্রছাত্রীরা নিজ দেশে থেকেই উচ্চশিক্ষায় আমেরিকার সমতুল্য সুযোগ পাচ্ছেন এবং অনেকে পড়াশোনার জন্য আর আমেরিকায় আসছেন না। নিজের দেশে উচ্চশিক্ষার্জনের কারণে চীন আজ জ্ঞানবিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও অর্থনীতিতে বিশ্বের একটি সেরা ও শক্তিধর দেশ হিসেবে ক্রমেই আবির্ভূত হচ্ছে, এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে আমাদের কী করণীয়? স্থূলভাবে বলতে গেলে প্রথমেই নিচের শর্তগুলো পূরণ করা বাঞ্ছনীয়।
১. গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞানার্জন ও জ্ঞান সৃষ্টি করার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দেওয়া;
২. বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ও পড়াশোনা করার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা; এবং
৩. যোগ্য ও সফল গবেষকদের সামাজিক মর্যাদা ও সম্মানজনক আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দিতে হবে। কোনো কোনো দেশে এটা ওই দেশের জিডিপির ৬ শতাংশ। আমাদের দেশে যদি এটা ৬ না হয়ে ৫ শতাংশও হয়, তবু আমরা দ্রুতবেগে উন্নতির দিকে অগ্রসর হতে পারব, সন্দেহ নেই। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। জাতির জন্য মঙ্গলজনক এ রকম কোনো পদক্ষেপ নিতে সব সময় তিনি দৃঢ়প্রত্যয়ী ও নির্ভীক অবস্থান নিয়ে থাকেন। আজ জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে উচ্চশিক্ষা বিস্তারে অর্থ জোগানের নিমিত্তে তাঁর সাহসী পদক্ষেপ কামনা করছি।
দ্বিতীয় শর্তানুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে জ্ঞানচর্চা ও গবেষণাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। অর্থাৎ, পরিবেশ এমন রাখতে হবে যেন প্রত্যেক শিক্ষক বা গবেষক স্বাধীন ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে শিক্ষা ও গবেষণাসহ অন্যান্য কাজ নির্বিঘ্নে করতে পারেন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা জানি না, তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন এ ব্যাপারে কিছুটা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পেরেছে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ, বিগত তিন বছরে এক দিনও বিশ্ববিদ্যালয়কে কোনো অনির্ধারিত বন্ধ দিতে হয়নি। ফলে অনেক অনুষদে সেশনজট প্রায় শূন্যে এসে পড়েছে এবং অন্যান্য অনুষদে ক্রমাগত কমে আসছে। এ ছাড়া বর্তমান প্রশাসন নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রশাসন চালাতে সচেষ্ট রয়েছে। যেমন, সরকার বদলের পর হলের প্রভোস্ট, বিভিন্ন কমিটির চেয়ারম্যান ইত্যাদি আগের মতো ইচ্ছামাফিক পরিবর্তন করা হয়নি। অন্য দলের হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যেকে নিজেদের মেয়াদকাল শেষ না হওয়া অবধি নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করেন। এর ধারাবাহিকতা সব ক্ষেত্রে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিজেদের রাজনৈতিক বলয়ের বাইরে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে খুঁজে পাবেন, এটা আমার দৃঢ়বিশ্বাস।
এ ছাড়া বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রথমবারের মতো বোস সেন্টারের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার অন্যতম স্তর পোস্ট ডক্টরাল গবেষণার জন্য কিছু ফান্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই প্রয়াস অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়কেও অনুপ্রাণিত করবে। বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশে সফল গবেষণাকর্মের জন্য সামাজিক মর্যাদা ও আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়ে থাকে। আমার জানামতে, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় এ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধের সংখ্যা যদিও দেশীয় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেশি, কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিসরে এ সংখ্যা খুবই কম। গড়ে প্রতিবছর কয়েক শ মাত্র, যা এক হাজার ৬০০ শিক্ষকের প্রতিষ্ঠানের জন্য নিতান্তই অল্প। কাজেই আরও অধিক প্রবন্ধ প্রকাশের লক্ষ্যে গবেষকদের সম্মানজনক আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হোক। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে ৫০ লাখ টাকার বেশি লাগবে না। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানকে এর আওতায় নিয়ে এলে বর্তমানে মাত্র পাঁচ থেকে ১০ কোটি টাকা খরচ হবে। হাজার কোটি টাকার শিক্ষা বাজেটে এই পরিমাণ অতিনগণ্য। এখানে শুধুই উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি ও সদিচ্ছার প্রয়োজন।
জ্ঞানবিজ্ঞান ও নিজস্ব প্রযুক্তিতে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে উচ্চশিক্ষার বিকল্প নেই। এর প্রসার ঘটানো অত্যাবশ্যক, মোটেও বিলাসিতা নয়। উচ্চশিক্ষাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে আগামী ৪০ বছরে বাংলাদেশ জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ভারত ও চীনের মতো বিশ্বে মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
ড. গোলাম মোহাম্মদ ভূঞা: অধ্যাপক, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আমরা কি জাতীয় উন্নয়ন চাই না? নিশ্চয়ই চাই।
কয়েক দশক আগে গ্রামবাংলায় সুপেয় পানির একমাত্র উৎস ছিল কাঁচা বা পাকা কুয়ো। কুয়োর গভীরতা বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন হলেও একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় না যাওয়া পর্যন্ত কোনো স্থানেই পানি পাওয়া যায় না। ঠিক তেমনই—প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা স্নাতক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা অর্জন করলে কিছু জ্ঞান অর্জন করা যায়, তবে জ্ঞানের পরিপক্বতা বা পূর্ণ সফলতা পাওয়া যায় না। ফলে জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।
কিছুদিন আগে সাউদার্ন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের সঙ্গে আলাপ করছিলাম। এক প্রসঙ্গে তিনি বললেন, আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চীনা ছাত্রের আগমন আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। কারণ, চীন বর্তমানে আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের আমেরিকার সমান বেতন-ভাতা দিয়ে চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দিচ্ছে। ফলে চীনা ছাত্রছাত্রীরা নিজ দেশে থেকেই উচ্চশিক্ষায় আমেরিকার সমতুল্য সুযোগ পাচ্ছেন এবং অনেকে পড়াশোনার জন্য আর আমেরিকায় আসছেন না। নিজের দেশে উচ্চশিক্ষার্জনের কারণে চীন আজ জ্ঞানবিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও অর্থনীতিতে বিশ্বের একটি সেরা ও শক্তিধর দেশ হিসেবে ক্রমেই আবির্ভূত হচ্ছে, এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে আমাদের কী করণীয়? স্থূলভাবে বলতে গেলে প্রথমেই নিচের শর্তগুলো পূরণ করা বাঞ্ছনীয়।
১. গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞানার্জন ও জ্ঞান সৃষ্টি করার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দেওয়া;
২. বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ও পড়াশোনা করার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা; এবং
৩. যোগ্য ও সফল গবেষকদের সামাজিক মর্যাদা ও সম্মানজনক আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দিতে হবে। কোনো কোনো দেশে এটা ওই দেশের জিডিপির ৬ শতাংশ। আমাদের দেশে যদি এটা ৬ না হয়ে ৫ শতাংশও হয়, তবু আমরা দ্রুতবেগে উন্নতির দিকে অগ্রসর হতে পারব, সন্দেহ নেই। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। জাতির জন্য মঙ্গলজনক এ রকম কোনো পদক্ষেপ নিতে সব সময় তিনি দৃঢ়প্রত্যয়ী ও নির্ভীক অবস্থান নিয়ে থাকেন। আজ জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে উচ্চশিক্ষা বিস্তারে অর্থ জোগানের নিমিত্তে তাঁর সাহসী পদক্ষেপ কামনা করছি।
দ্বিতীয় শর্তানুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে জ্ঞানচর্চা ও গবেষণাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। অর্থাৎ, পরিবেশ এমন রাখতে হবে যেন প্রত্যেক শিক্ষক বা গবেষক স্বাধীন ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে শিক্ষা ও গবেষণাসহ অন্যান্য কাজ নির্বিঘ্নে করতে পারেন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা জানি না, তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন এ ব্যাপারে কিছুটা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পেরেছে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ, বিগত তিন বছরে এক দিনও বিশ্ববিদ্যালয়কে কোনো অনির্ধারিত বন্ধ দিতে হয়নি। ফলে অনেক অনুষদে সেশনজট প্রায় শূন্যে এসে পড়েছে এবং অন্যান্য অনুষদে ক্রমাগত কমে আসছে। এ ছাড়া বর্তমান প্রশাসন নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রশাসন চালাতে সচেষ্ট রয়েছে। যেমন, সরকার বদলের পর হলের প্রভোস্ট, বিভিন্ন কমিটির চেয়ারম্যান ইত্যাদি আগের মতো ইচ্ছামাফিক পরিবর্তন করা হয়নি। অন্য দলের হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যেকে নিজেদের মেয়াদকাল শেষ না হওয়া অবধি নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করেন। এর ধারাবাহিকতা সব ক্ষেত্রে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিজেদের রাজনৈতিক বলয়ের বাইরে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে খুঁজে পাবেন, এটা আমার দৃঢ়বিশ্বাস।
এ ছাড়া বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রথমবারের মতো বোস সেন্টারের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার অন্যতম স্তর পোস্ট ডক্টরাল গবেষণার জন্য কিছু ফান্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই প্রয়াস অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়কেও অনুপ্রাণিত করবে। বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশে সফল গবেষণাকর্মের জন্য সামাজিক মর্যাদা ও আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়ে থাকে। আমার জানামতে, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় এ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধের সংখ্যা যদিও দেশীয় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেশি, কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিসরে এ সংখ্যা খুবই কম। গড়ে প্রতিবছর কয়েক শ মাত্র, যা এক হাজার ৬০০ শিক্ষকের প্রতিষ্ঠানের জন্য নিতান্তই অল্প। কাজেই আরও অধিক প্রবন্ধ প্রকাশের লক্ষ্যে গবেষকদের সম্মানজনক আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হোক। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে ৫০ লাখ টাকার বেশি লাগবে না। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানকে এর আওতায় নিয়ে এলে বর্তমানে মাত্র পাঁচ থেকে ১০ কোটি টাকা খরচ হবে। হাজার কোটি টাকার শিক্ষা বাজেটে এই পরিমাণ অতিনগণ্য। এখানে শুধুই উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি ও সদিচ্ছার প্রয়োজন।
জ্ঞানবিজ্ঞান ও নিজস্ব প্রযুক্তিতে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে উচ্চশিক্ষার বিকল্প নেই। এর প্রসার ঘটানো অত্যাবশ্যক, মোটেও বিলাসিতা নয়। উচ্চশিক্ষাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে আগামী ৪০ বছরে বাংলাদেশ জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ভারত ও চীনের মতো বিশ্বে মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
ড. গোলাম মোহাম্মদ ভূঞা: অধ্যাপক, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments