ওসমানীতে যে কারণে নামছে না আন্তর্জাতিক ফ্লাইট, প্রবাসে ক্ষোভ by ওয়েছ খছরু
‘গ্রাউন্ড
সার্ভিস’ জটিলতা দূর না হওয়ায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসছে
না ফ্লাই দুবাই ও এয়ার এরাবিয়া। ১লা এপ্রিল মাত্র একটি ফ্লাইট আসার পর
ফ্লাই দুবাই তার ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। কবে নাগাদ এ দুটি ফ্লাইট চালু হবে
তাও অনিশ্চিত। অথচ সিলেটবাসী চাইছেন, নিজের শহর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে
চলাচল করতে। এজন্য বিদেশী বিমান কোম্পানির উড়োজাহাজগুলো ওসমানীতে এসে অবতরণ
করুক এটা চান তারা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রচেষ্টায় ফুয়েল
সিস্টেম চালু হলেও প্রায় দুই মাস হতে চললো ওসমানীতে আসছে না কোনো
আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। এ কারণে বাধ্য হয়ে সড়ক পথে ঢাকা গিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন
দেশে যেতে হচ্ছে সিলেটের যাত্রীদের। ওদিকে, সিলেট থেকে সরাসরি ফ্লাই দুবাইর
ফ্লাইট চালুর দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়েছে আমেরিকায়। জালালাবাদ
এসোসিয়েশন অব আমেরিকা টানা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বর্তমান সরকার
ক্ষমতায় আসার পর সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে চালু করার দাবি ছিল সিলেটবাসীর। সেই দাবির
প্রেক্ষিতে বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রায় ৬৩
কোটি টাকা ব্যয়ে ওসমানীতে রিফুয়েলিং সিস্টেম চালু করেন। গত মার্চ মাসে
পরীক্ষামূলক ফুয়েল সরবরাহের মধ্য দিয়ে সিলেটবাসীর কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ
হয়। এরপর থেকে জানা গিয়েছিল ওসমানীতে এসে পেঁছবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট।
সিলেটবাসীর আশায় বুক বেঁধেছিলেন আর ঢাকা হয়ে নয়, এবার নিজ শহর সিলেট থেকে
সরাসরি যাতায়াত করবেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। সেই অনুযায়ী গত ১লা এপ্রিল
দুবাই থেকে ১৩২ জন যাত্রী নিয়ে ফ্লাই দুবাইর একটি ফ্লাইট সিলেট ওসমানী
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে অবতরণ করে। ওই ফ্লাইটটি আবার ১৬৪ জন যাত্রী
নিয়ে দুবাই ফিরে যায়। ওইদিনই ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ার এরাবিয়ার
একটি ফ্লাইট সিলেটে আসার কথা ছিল। কিন্তু গ্রাউন্ড সার্ভিস জটিলতার কারণে
জেদ্দা থেকে ওই ফ্লাইটটি সিলেটে সরাসরি ফ্লাইট সার্ভিস শুরু করেনি। সিলেট
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড সার্ভিস দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে
বাংলাদেশ বিমানের। প্রতি সপ্তাহে লন্ডন সহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে
বিমানের চারটি সরাসরি ফ্লাইট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে অবতরণ
করে। নিজেদের উড়োজাহাজগুলোকে গ্রাউন্ড সার্ভিস করে বিমান। তবে, সরাসরি এলেও
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরাসরি যাওয়ার
ফ্লাইট চালু করেনি বিমান। এ কারণে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যাত্রীরা ঢাকা
হয়ে যেতে হয়। ফ্লাই দুবাই ও এয়ার এরাবিয়া সূত্র জানিয়েছে, একমাত্র গ্রাউন্ড
সার্ভিস জটিলতার কারণে সিলেটে ফ্লাইট চালু হচ্ছে না। তবে, এ বিষয়টি কাটাতে
ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিমান সিলেটের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওসমানীতে
গ্রাউন্ড সার্ভিস পেতে হলে চুক্তির মাধ্যমে আসতে হবে। অন্যথায় সেটি দেয়া
সম্ভব নয়। তারা জানান, চুক্তি না থাকার কারণে গ্রাউন্ড সার্ভিস দেওয়া সম্ভব
হচ্ছে না। জানা গেছে, ফ্লাই দুবাই ওসমানীতে রিজেন্টের গ্রাউন্ড সার্ভিস
সুবিধা চেয়েছিল। কিন্তু বিমান সেটি দিতে রাজি নয়। এ নিয়ে জটিতার কারণেই
ফ্লাই দুবাই আসছে না। এয়ার এরাবিয়াও সিলেটে আসার জন্য বিমানের সঙ্গে কথা
বলছে। ফ্লাই দুবাই সিলেটের ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, গ্রাউন্ড
সার্ভিস জটিলতা দূর করতে আলোচনা চলছে। এ ব্যাপারে সিদ্বান্ত হওয়ার পর সিলেট
এসে পৌঁছবে ফ্লাই দুবাইয়ের বিমান। সিলেটের ট্রাভেলস ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন,
প্রতিদিন ঢাকা থেকে যে পরিমাণ যাত্রী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলাচল করেন তার
বেশির ভাগই হচ্ছে সিলেটের। যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে। পাশাপাশি নির্ধারিত
সময়েও অনেকেই কর্মস্থলে যোগ দিতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে যাত্রীদের অভিযোগের
অন্ত নেই। তারা বলেন, সিলেটে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলো
সিলেটবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে। আর এই সুবিধা নিতে মুখিয়ে আছেন সিলেটবাসী।
সিলেটের শিপার এয়ারওয়েজের স্বত্বাধিকারী খন্দকার শিপার আহমদ জানিয়েছেন,
যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনা করে ওসমানীতে আমরা আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চাই। আর
এটি যত তাড়াতাড়ি হবে ততই সিলেটের যাত্রীদের মঙ্গল। এদিকে, জালালাবাদ
এসোসিয়েশন অব আমেরিকার এক মতবিনিময় সভা থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দরে আমিরাত এয়ার লাইন্সের সরাসরি ‘ফ্লাই দুবাই’ ফ্লাইট পুনঃচালুর
দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়েছে। সভায় দাবি আদায়ে কর্মসূচি ঘোষণা করা
হয়েছে। নিউ ইয়র্কের এস্টোরিয়ার জালালাবাদ এসোসিয়েশনের অফিসে রোববার রাতে
সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন- এসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল হোসেন
খান। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চৌধুরী। সভায় নিউ
ইয়র্কে বসবাসরত বৃহত্তর সিলেটের সর্বস্তরের প্রবাসী বাংলাদেশী ও কমিউনিটি
নেতারা অংশ নেন। সভায় কমিউনিটি নেতারা দুবাই-সিলেট রুটের ‘ফ্লাই দুবাই’
বন্ধ থাকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে তা চালুর দাবি জানান।
সভায় নেতারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত নিউ ইয়র্ক সফররত সরকারের মন্ত্রীদের
কালো পতাকা প্রদর্শন, দাবির সমর্থনে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ করে
সহযোগিতা কামনার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি বৃহত্তর সিলেটের সংসদ সদস্যসহ দেশ ও
প্রবাসের জালালাবাদ এসোসিয়েশনের নেতাদের সহযোগিতা কামনা করে ‘ফ্লাই দুবাই’
ফ্লাইট চালুর দাবিতে স্বোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। সভায় প্রয়োজনে বিশ্বের
বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ কন্সুলেটের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করারও সিদ্ধান্ত
নেয়া হয়। এ ছাড়া দাবির সমর্থনে ওয়েবসাইট ও ফেসবুক চালুসহ সকল প্রকার
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জালালাবাদবাসীর সহযোগিতা কামনা করা হয়। সভায়
আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্ক নিউইয়র্কের সভাপতি আজমল
হোসেন কুনু ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম হাওলাদার, সোসাইটির সদস্য মোহাম্মদ
ফখর উদ্দীন, ব্রঙ্কস বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আবদুুস শহীদ, জালালাবাদ
এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা তোফায়েল আহমদ চৌধুরী, প্রাক্তন সভাপতি আবদুল বাসিত,
অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দীন, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মুকিত চৌধুরী ও গিয়াস উদ্দীন,
কমিউনিটি নেতা নুরুল ইসলাম বতা, লোকমান হোসেইন লুকু, মোহাম্মদ আব্দুল
মতিন, একলিমুজ্জামান নুনু, মাহবুব আহমদ চৌধুরী, বদরুজ্জামান চৌধুরী, আবদুল
বাছির খান, মিজানুর রহমান চৌধুরী, মোহাম্মদ বেলাল আহমদ, আকবর হোসেন, আতাউল
গনি আসাদ, শেরওয়ান আহমদ চৌধুরী, এবাদ চৌধুরী, শেখ আতিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ
হেলিম উদ্দীন, সিটির কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার,
জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি বিলাল চৌধুরী প্রমুখ। সভায়
বক্তারা বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে ‘ফ্লাই দুবাই’ বন্ধ
রয়েছে বলে অভিযোগ করেন এবং দাবি আদায়ে সবাইকে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ
হওয়ার আহ্বান জানান।
No comments