বঙ্গবন্ধু পরিবারের ৭ সদস্য নিরাপত্তাসহ যেসব সুবিধা পাবেন
জাতির
পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সাত সদস্যের সার্বক্ষণিক
নিরাপত্তা এবং সরকারি খরচে তারা কী কী সুযোগ-সুবিধা পাবেন, ওই বিষয়ে ১৯টি
সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সোমবার জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু
পরিবারের সদস্যরা সরকারি খরচে তাদের সরকারি বা ব্যক্তিগত আবাসস্থলে
সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা, তেলসহ গাড়ি, টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও
ইন্টারনেট সুবিধা পাবেন। সরকারি খরচে দেশ-বিদেশে চিকিৎসা সুবিধা ছাড়াও
ব্যক্তিগত সহকারী এবং পরিচারক পাবেন তারা। তাদের আবাসস্থলের মেরামত,
সমপ্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেবে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা। এসব বাসভবনের আশপাশে
সুউচ্চ ভবনের বাসিন্দাদের ওপর নজরদারি এবং কোন স্থাপনা হুমকি বলে মনে হলে
তা অপসারণও করতে বলেছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা-৪
থেকে ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন-২০০৯’ এর ৪ (৩) ধারা
অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ
করে এ আদেশ জারি করা হয়েছে। এর আগে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যকে নৃশংসভাবে
হত্যা করা হয়। ওই সময় দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা
ও শেখ রেহানা। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর
দায়িত্ব পালন করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়
প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। একমাত্র
মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির চেয়ারম্যান।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানার বড় মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক সমপ্রতি
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের একটি আসন থেকে এমপি নির্বাচিত
হয়েছেন। ছোট মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীও যুক্তরাজ্যে থাকেন। আর শেখ
রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক আওয়ামী লীগের সেন্টার ফর রিসার্চ
অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) দায়িত্বে রয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
আদেশে বলা হয়েছে, জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের আবাসস্থলে সার্বক্ষণিক
প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত রাখতে হবে। সরকার বরাদ্দকৃত বা
নিজেদের মালিকানাধীন আবাসস্থলের প্রয়োজনীয় মেরামত, সমপ্রসারণ ও
রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তর যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। বঙ্গবন্ধু
পরিবারের সদস্যরা একজন ড্রাইভার ও প্রয়োজনীয় পেট্রলসহ গাড়ি পাবেন। তারা
সরকারি খরচে টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন
ইন্টারনেট সুবিধাও পাবেন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের তাৎক্ষণিক
চিকিৎসার জন্য আবাসস্থলে সব সময় স্বয়ংসম্পূর্ণ চিকিৎসা অ্যাম্বুলেন্স রাখতে
বলা হয়েছে। এ ছাড়া দেশে এবং প্রয়োজনে বিদেশে সরকারি খরচে চিকিৎসা সুবিধা
পাবেন তারা। সরকারি খরচে একজন ব্যক্তিগত সহকারী, দুইজন বেয়ারা, একজন
বাবুর্চি, একজন মালী ও একজন ঝাড়ুদার পাবেন। জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের
নিরাপত্তার লক্ষ্যে অন্য কোন প্রকার সহায়তা বা আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম বা
দ্রব্যের প্রয়োজন হলে সরকারের অন্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা তা দেবে। এ
পরিবারের সদস্যদের আবাসস্থলে ‘হুমকি ও অন্তর্ঘাতমূলক অবস্থা’ মোকাবিলায়
সুরক্ষিত ও নিরাপদ বেষ্টনী প্রস্তুত রাখা ছাড়াও আবাসস্থলের চারদিকে
নিরাপত্তাকর্মীদের অবস্থান নিশ্চিত করতে প্রজ্ঞাপনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ
ছাড়া তাদের আবাসস্থলের আশপাশের কোন ভবন, স্থাপনা বা অবস্থান থেকে কোন
প্রকার হুমকি সৃষ্টির মতো অবস্থা থাকলে তা অপসারণ বা পরিবর্তন করে দিতে বলা
হয়েছে। আদেশ অনুযায়ী, এদের আবাসস্থলের আশাপাশে সুউচ্চ ভবনে বসবাসকারীদের
উপর সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি রাখতে হবে। এ ছাড়া আবাসস্থলে যাতায়াতের
পথ সব ধরনের আক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখার ব্যবস্থাও করতে হবে। আবাসস্থলে সব
সময় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রস্তুত রাখা এবং
আবাসস্থলের ভেতরে যেসব স্থানে তারা (জাতির পিতার পরিবারের সদস্যরা) চলাফেরা
করেন সেসব স্থানে সব সময় ‘সুইপিং’ নিরাপত্তা রাখতে বলা হয়েছে। এসব
আবাসস্থল সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা ছাড়াও ভেতরে-বাইরে নিরাপত্তা এলার্ম
বসানো, আবাসস্থলে প্রবেশের সময় সবাইকে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে পরীক্ষা
করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। এ ছাড়া
আবাসস্থলে যে কোন বস্তু, দ্রব্য বা সরঞ্জাম ঢোকানোর আগে স্ক্যান করতে হবে
এবং আবাসস্থল থেকে তাৎক্ষণিক নির্গমণের জন্য এক বা একাধিক বিশেষ পথের
ব্যবস্থা রাখতে বলেছে সরকার। এদিকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার
আগে ২০শে জুন সংসদে জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন-২০০১ পাস
করে। পরে চারদলীয় জোট সরকার এসে ওই বছর ২রা ডিসেম্বর আইন বাতিল করে। ২০০৯
সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা এবং তাদের সন্তানদের
নিরাপত্তায় নতুন করে আইন পাস করেছে। ওই আইনের বিভিন্ন ধারা উল্লেখ করে
নিরাপত্তা আরও যেসব সরকারি সুবিধা পাবেন তা উল্লেখ করা হয়েছে।
No comments