মালয়েশিয়ায় গণকবর- কক্সবাজারে মাতম by রাসেল চৌধুরী
থাইল্যান্ডের পর এবার মালয়েশিয়ায় গণকবরের সন্ধান, গণকবর থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে মরদেহ- গার্ডিয়ান |
থাইল্যান্ডের
পর মালয়েশিয়ায়ও গণকবরের সন্ধান পাওয়ার খবরে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায়
চলছে বোবা কান্না। চলছে বুকফাটা আর্তনাত ও আহাজারি। অন্যদিকে দেশব্যাপী
মানব পাচারের বিষয়টি আলোচিত হওয়ার পর পুলিশ-বিজিবি-কোস্টগার্ড-র্যাবসহ
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর অভিযান চালাচ্ছেন। সে থেকে
গা-ঢাকা দিয়েছে মানব পাচারকারীরা।
সম্প্রতি জেলার টেকনাফ ও সদরে ছয়জন শীর্ষ মানব পাচারকারী ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর পাচারকারীর অনেকেই এলাকা ছেড়েছে। পালিয়ে গেছে অন্যত্র। অনেক পাচারকারী ঢাকা-চট্টগ্রাম হয়ে বৈধপথেই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানোর অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের কারণে কক্সবাজার-উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মানব পাচার আপাতত বন্ধ রয়েছে। কিন্তু উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিখোঁজ তরুণ-যুবকদের পরিবারের সদস্যদের কান্না কিছুতেই থামছে না। টেকনাফ ও উখিয়া উপকূলীয় এলাকার শামলাপুর, মনখালী, ছোয়ানখালী, রুপপতি, ছেপটখালী, ইনানী, নিদানিয়া, জালিয়াপালং, সোনারপাড়া, রেজুব্রিজ, রামুর খুনিয়াপালং, হিমছড়ি, শহরের নুনিয়াছড়া, সমিতিপাড়া, খুরুস্কুল, ভারুয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকার সন্তানহারা অনেক পরিবারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তাদের কারও সন্তান, কারও স্বামী নিখোঁজ রয়েছেন দীর্ঘ সময় ধরে। সন্তানহারা ভারুয়াখালীর বুদ্ধ মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, এক বছর ধরে আমার ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহানের খোঁজ নেই। এক বছর ৭ মাস আগে আমার ছেলেকে স্থানীয় দালাল জাহাঙ্গীর আলম কাজের কথা বলে জোর করে নিয়ে গিয়ে পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তারা খুব কান্নাকাটি করছে। এখন নানাজনের মুখে শুনতে পাচ্ছি সে মালয়েশিয়ায় মারা গেছে।
সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় রুমখা কুলালপাড়া গ্রামের আরেক বৃদ্ধা খাদিজা বেগম। ইতিমধ্যে তার স্বামী উন্মাদ হয়ে গেছেন। তিনি বলেন, ৬-৭ মাস আগে আমার ছেলেকে শাহপরীর দ্বীপের দালাল রশিদ আহম্মদ মিস্ত্রি কাজের কথা বলে জোর করে নিয়ে গিয়ে পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। কিছুদিন আগে তাকে পেয়ে ধরে পুলিশে দিয়েছি। কিন্তু আজও ছেলের খোঁজ পায়নি বলেই তিনি ফুপিয়ে কেঁদে ওঠেন।
চকরিয়ায় মানব পাচারকারী দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে ২০১২ সালের পর চলতি বছর পর্যন্ত সাগরপথে অবৈধ পন্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বপ্নের মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়ে নিখোঁজ রয়েছে শতাধিক মানুষ। সেই দেশে পৌঁছার পর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ওই সময় কেউ কেউ মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও এখন হদিস নেই অনেকের। এ অবস্থায় নিখোঁজ এসব মানুষের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়ন থেকে বেশির ভাগ মানুষ মালয়েশিয়া গেছেন। জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, বিগত সময়ে নানা কায়দায় তার ইউনিয়ন থেকে তিন শতাধিক মানুষ মালয়েশিয়া গেছেন। তার মধ্যে নিখোঁজের সংখ্যা থাকতে পারে ৩০ থেকে ৫০ জনের মতো।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের উত্তর মেধাকচ্ছপিয়া এলাকার হাজী জয়নাল আবেদিনের ছেলে ওসমান গণির মাধ্যমে পরিবারের অভাব-অনটন দূর করতে গত বছর অল্প খরচে মালয়েশিয়া গেছেন ইউনিয়নের উত্তর মেধাকচ্ছপিয়া এলাকার ফজল করিমের ছেলে আক্তার মিয়া, মৃত সোলেমানের ছেলে নুরুল আবছার, মৃত সোলতান আহমদের ছেলে মোহাম্মদ হোসেন প্রকাশ মাছন, মো. আবদুর ছেলে আবদুল মালেক, মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে হেলাল উদ্দিন, খলিল আহমদের ছেলে মোহাম্মদ কালু, জনু মিয়ার ছেলে ফজল করিম, জয়গুনের ছেলে সালাহ উদ্দিন, রফিক উদ্দিনের ছেলে শাহজাহান, একই এলাকার হাকিম আলী, ইসমাইলসহ অনেকে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় আগে থেকে অবস্থান করা নার্গিস আক্তার নামের এক মহিলার মাধ্যমে ওসমান গনী সাগরপথে এসব মানুষকে মালয়েশিয়া পাঠিয়েছেন। খুটাখালী ইউনিয়নের উত্তর মেধাকচ্ছপিয়া এলাকার একটি বাড়িতে ওসমান গনীর সঙ্গে অবস্থান করেন নার্গিস আক্তারের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার। মূলত ওসমানের মাধ্যমে মেয়ে সুমাইয়া মালয়েশিয়াগামী এসব মানুষ ম্যানেজ করে ট্রলারে তুলে দিতেন। পরে পাঠানো এসব মানুষ মালয়েশিয়ায় সুমাইয়া আক্তারের মা নার্গিস আক্তার রিসিভ করতেন।
খুটাখালী ইউনিয়নের মতো উপজেলার কোনাখালী, বিএমচর, পুর্ববড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কৈয়ারবিল, সাহারবিল ইউনিয়ন ও চকরিয়া পৌরসভা এলাকা থেকে বিপুল নানা বয়সের মানুষ ইতিমধ্যে দালাল চক্রের মাধ্যমে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। তাদের মধ্যে উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ইসলামনগর গ্রামের আবদু ছালামের ছেলে জসিমউদ্দিন রনি, মোক্তার আহমদের ছেলে মনির আহমদ, আনোয়ার হোছাইনের ছেলে মোবারক হোসেন, বাহাদুর আলমের ছেলে মো. চুট্টোসহ চার যুবক মালয়েশিয়া গেলেও তার পরিবারের সদস্যরা দেড় মাস ধরে তাদের সন্ধান পাচ্ছেন না। নিখোঁজ মনির আহমদের বাবা মোক্তার আহমদ জানান, ছেলের চিন্তায় তার হাতে কাজ উঠছে না। তার মা ছেলের শোকে শুধু কান্নাকাটি করছেন। অনেক দিন হচ্ছে খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, মালয়েশিয়া যাওয়ার ২০ দিন পর একটি মোবাইল ফোনে কথা বলে ছেলে মনির। ওই সময় জানায়, তারা একটি ট্রলারে করে একসঙ্গে ৪৬০ জন ইতালির সাগরতীরে রয়েছে। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারির কারণে সেই দেশে ভিড়তে পারছে না তাদের বহন করা ট্রলারটি। মোক্তার আহমদ জানান, মোবাইলে ছেলে পাচারকারী কয়েকজনের নাম বলেছে। কিন্তু সেখানে ছেলেসহ সহপাঠী যুবকদের কোন বিপদ হতে পারে- এমন আশঙ্কা তিনি দালালদের নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে। কথা বলে জেনেছি, আমার ছেলের মতো একই পরিণতিতে আছেন তার সহপাঠী আনোয়ার হোছাইনের ছেলে মোবারক হোসেন, বাহাদুর আলমের ছেলে চুট্টো মিয়া ও আবদু ছালামের ছেলে জসিমউদ্দিন রনির। স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার উপকূলীয় সমুদ্র চ্যানেল হয়ে গত কয়েক বছরে যারা সমুদ্রপথে অবৈধ পন্থায় মালয়েশিয়ায় মানুষ পাঠিয়েছে, তাদের মধ্যে খুটাখালী ছড়িবিল এলাকার হাসু প্রকাশ বর্মাইয়া হাসু, বদরখালী এলাকার আলম বাহাদুরের ছেলে সাহাব উদ্দিন বাহাদুর, কোরালখালী এলাকার জোবাইর, ইদমনি এলাকার আবদুল মালেক, আহমদ হোসেন, কোনাখালী এলাকার সফিউল আলম, মোজাম্মেল, আবদুর রহিম, নুরুজ্জামান, ইসমাইল, বকুল ও সুরাজপুর ভিলেজারপাড়ার সফিউল্লাহসহ অনেকের নাম জনগণের মুখে মুখে থাকলেও থানা পুলিশের তালিকায় তাদের নাম নেই।
এদিকে পেকুয়ায় উপজেলার পাহাড়ি জনপদ টইটংয়ের দরগাহ মুরা নামক এলাকার মনজুর আলম নামের এক অসহায় বৃদ্ধ অভিযোগ করেছেন, প্রায় ৫ মাস আগে তার একমাত্র পুত্র সাইফুল ইসলামকে (২৪) প্রতিবেশী বারবাকিয়া ইউনিয়নের কাদিমাকাটা এলাকার জনৈক বদিউল আলমের স্ত্রী তার মালয়েশিয়া প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে কাজ পাইয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফুসলিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে যান। পরে ধনিয়াকাটা স্টেশন এলাকার কলা ব্যবসায়ী মিজান নামের এক যুবক তার ছেলে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাড়ি জমিয়েছেন জানিয়ে ওই বৃদ্ধার কাছ থেকে দফায় দফায় ২ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়েও নেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই বৃদ্ধা মনজুর আলমের পুত্র সাইফুলের কোন খোঁজ পাননি। উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই গ্রামের বকশিয়াঘোনা এলাকার নুরুল ইসলামের পুত্র বাদশা (২০), নূর আহমদের পুত্র হেলাল উদ্দিন (২৩), ছৈয়দ হোছনের পুত্র জাফর আলম (২৫), বকশিয়াঘোনায় নানার বাড়িতে পালিত মোজাম্মেলের পুত্র আবদুল মান্নানসহ (২০) অনেকে স্থানীয় দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমালেও আজও তাদের কোন খোঁজখবর নেই।
সম্প্রতি জেলার টেকনাফ ও সদরে ছয়জন শীর্ষ মানব পাচারকারী ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর পাচারকারীর অনেকেই এলাকা ছেড়েছে। পালিয়ে গেছে অন্যত্র। অনেক পাচারকারী ঢাকা-চট্টগ্রাম হয়ে বৈধপথেই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানোর অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের কারণে কক্সবাজার-উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মানব পাচার আপাতত বন্ধ রয়েছে। কিন্তু উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিখোঁজ তরুণ-যুবকদের পরিবারের সদস্যদের কান্না কিছুতেই থামছে না। টেকনাফ ও উখিয়া উপকূলীয় এলাকার শামলাপুর, মনখালী, ছোয়ানখালী, রুপপতি, ছেপটখালী, ইনানী, নিদানিয়া, জালিয়াপালং, সোনারপাড়া, রেজুব্রিজ, রামুর খুনিয়াপালং, হিমছড়ি, শহরের নুনিয়াছড়া, সমিতিপাড়া, খুরুস্কুল, ভারুয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকার সন্তানহারা অনেক পরিবারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তাদের কারও সন্তান, কারও স্বামী নিখোঁজ রয়েছেন দীর্ঘ সময় ধরে। সন্তানহারা ভারুয়াখালীর বুদ্ধ মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, এক বছর ধরে আমার ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহানের খোঁজ নেই। এক বছর ৭ মাস আগে আমার ছেলেকে স্থানীয় দালাল জাহাঙ্গীর আলম কাজের কথা বলে জোর করে নিয়ে গিয়ে পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তারা খুব কান্নাকাটি করছে। এখন নানাজনের মুখে শুনতে পাচ্ছি সে মালয়েশিয়ায় মারা গেছে।
সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় রুমখা কুলালপাড়া গ্রামের আরেক বৃদ্ধা খাদিজা বেগম। ইতিমধ্যে তার স্বামী উন্মাদ হয়ে গেছেন। তিনি বলেন, ৬-৭ মাস আগে আমার ছেলেকে শাহপরীর দ্বীপের দালাল রশিদ আহম্মদ মিস্ত্রি কাজের কথা বলে জোর করে নিয়ে গিয়ে পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। কিছুদিন আগে তাকে পেয়ে ধরে পুলিশে দিয়েছি। কিন্তু আজও ছেলের খোঁজ পায়নি বলেই তিনি ফুপিয়ে কেঁদে ওঠেন।
চকরিয়ায় মানব পাচারকারী দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে ২০১২ সালের পর চলতি বছর পর্যন্ত সাগরপথে অবৈধ পন্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বপ্নের মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়ে নিখোঁজ রয়েছে শতাধিক মানুষ। সেই দেশে পৌঁছার পর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ওই সময় কেউ কেউ মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও এখন হদিস নেই অনেকের। এ অবস্থায় নিখোঁজ এসব মানুষের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়ন থেকে বেশির ভাগ মানুষ মালয়েশিয়া গেছেন। জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, বিগত সময়ে নানা কায়দায় তার ইউনিয়ন থেকে তিন শতাধিক মানুষ মালয়েশিয়া গেছেন। তার মধ্যে নিখোঁজের সংখ্যা থাকতে পারে ৩০ থেকে ৫০ জনের মতো।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের উত্তর মেধাকচ্ছপিয়া এলাকার হাজী জয়নাল আবেদিনের ছেলে ওসমান গণির মাধ্যমে পরিবারের অভাব-অনটন দূর করতে গত বছর অল্প খরচে মালয়েশিয়া গেছেন ইউনিয়নের উত্তর মেধাকচ্ছপিয়া এলাকার ফজল করিমের ছেলে আক্তার মিয়া, মৃত সোলেমানের ছেলে নুরুল আবছার, মৃত সোলতান আহমদের ছেলে মোহাম্মদ হোসেন প্রকাশ মাছন, মো. আবদুর ছেলে আবদুল মালেক, মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে হেলাল উদ্দিন, খলিল আহমদের ছেলে মোহাম্মদ কালু, জনু মিয়ার ছেলে ফজল করিম, জয়গুনের ছেলে সালাহ উদ্দিন, রফিক উদ্দিনের ছেলে শাহজাহান, একই এলাকার হাকিম আলী, ইসমাইলসহ অনেকে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় আগে থেকে অবস্থান করা নার্গিস আক্তার নামের এক মহিলার মাধ্যমে ওসমান গনী সাগরপথে এসব মানুষকে মালয়েশিয়া পাঠিয়েছেন। খুটাখালী ইউনিয়নের উত্তর মেধাকচ্ছপিয়া এলাকার একটি বাড়িতে ওসমান গনীর সঙ্গে অবস্থান করেন নার্গিস আক্তারের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার। মূলত ওসমানের মাধ্যমে মেয়ে সুমাইয়া মালয়েশিয়াগামী এসব মানুষ ম্যানেজ করে ট্রলারে তুলে দিতেন। পরে পাঠানো এসব মানুষ মালয়েশিয়ায় সুমাইয়া আক্তারের মা নার্গিস আক্তার রিসিভ করতেন।
খুটাখালী ইউনিয়নের মতো উপজেলার কোনাখালী, বিএমচর, পুর্ববড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কৈয়ারবিল, সাহারবিল ইউনিয়ন ও চকরিয়া পৌরসভা এলাকা থেকে বিপুল নানা বয়সের মানুষ ইতিমধ্যে দালাল চক্রের মাধ্যমে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। তাদের মধ্যে উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ইসলামনগর গ্রামের আবদু ছালামের ছেলে জসিমউদ্দিন রনি, মোক্তার আহমদের ছেলে মনির আহমদ, আনোয়ার হোছাইনের ছেলে মোবারক হোসেন, বাহাদুর আলমের ছেলে মো. চুট্টোসহ চার যুবক মালয়েশিয়া গেলেও তার পরিবারের সদস্যরা দেড় মাস ধরে তাদের সন্ধান পাচ্ছেন না। নিখোঁজ মনির আহমদের বাবা মোক্তার আহমদ জানান, ছেলের চিন্তায় তার হাতে কাজ উঠছে না। তার মা ছেলের শোকে শুধু কান্নাকাটি করছেন। অনেক দিন হচ্ছে খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, মালয়েশিয়া যাওয়ার ২০ দিন পর একটি মোবাইল ফোনে কথা বলে ছেলে মনির। ওই সময় জানায়, তারা একটি ট্রলারে করে একসঙ্গে ৪৬০ জন ইতালির সাগরতীরে রয়েছে। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারির কারণে সেই দেশে ভিড়তে পারছে না তাদের বহন করা ট্রলারটি। মোক্তার আহমদ জানান, মোবাইলে ছেলে পাচারকারী কয়েকজনের নাম বলেছে। কিন্তু সেখানে ছেলেসহ সহপাঠী যুবকদের কোন বিপদ হতে পারে- এমন আশঙ্কা তিনি দালালদের নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে। কথা বলে জেনেছি, আমার ছেলের মতো একই পরিণতিতে আছেন তার সহপাঠী আনোয়ার হোছাইনের ছেলে মোবারক হোসেন, বাহাদুর আলমের ছেলে চুট্টো মিয়া ও আবদু ছালামের ছেলে জসিমউদ্দিন রনির। স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার উপকূলীয় সমুদ্র চ্যানেল হয়ে গত কয়েক বছরে যারা সমুদ্রপথে অবৈধ পন্থায় মালয়েশিয়ায় মানুষ পাঠিয়েছে, তাদের মধ্যে খুটাখালী ছড়িবিল এলাকার হাসু প্রকাশ বর্মাইয়া হাসু, বদরখালী এলাকার আলম বাহাদুরের ছেলে সাহাব উদ্দিন বাহাদুর, কোরালখালী এলাকার জোবাইর, ইদমনি এলাকার আবদুল মালেক, আহমদ হোসেন, কোনাখালী এলাকার সফিউল আলম, মোজাম্মেল, আবদুর রহিম, নুরুজ্জামান, ইসমাইল, বকুল ও সুরাজপুর ভিলেজারপাড়ার সফিউল্লাহসহ অনেকের নাম জনগণের মুখে মুখে থাকলেও থানা পুলিশের তালিকায় তাদের নাম নেই।
এদিকে পেকুয়ায় উপজেলার পাহাড়ি জনপদ টইটংয়ের দরগাহ মুরা নামক এলাকার মনজুর আলম নামের এক অসহায় বৃদ্ধ অভিযোগ করেছেন, প্রায় ৫ মাস আগে তার একমাত্র পুত্র সাইফুল ইসলামকে (২৪) প্রতিবেশী বারবাকিয়া ইউনিয়নের কাদিমাকাটা এলাকার জনৈক বদিউল আলমের স্ত্রী তার মালয়েশিয়া প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে কাজ পাইয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফুসলিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে যান। পরে ধনিয়াকাটা স্টেশন এলাকার কলা ব্যবসায়ী মিজান নামের এক যুবক তার ছেলে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাড়ি জমিয়েছেন জানিয়ে ওই বৃদ্ধার কাছ থেকে দফায় দফায় ২ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়েও নেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই বৃদ্ধা মনজুর আলমের পুত্র সাইফুলের কোন খোঁজ পাননি। উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই গ্রামের বকশিয়াঘোনা এলাকার নুরুল ইসলামের পুত্র বাদশা (২০), নূর আহমদের পুত্র হেলাল উদ্দিন (২৩), ছৈয়দ হোছনের পুত্র জাফর আলম (২৫), বকশিয়াঘোনায় নানার বাড়িতে পালিত মোজাম্মেলের পুত্র আবদুল মান্নানসহ (২০) অনেকে স্থানীয় দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমালেও আজও তাদের কোন খোঁজখবর নেই।
No comments