পাঁচ বছরের শিশুর অনন্য মানবিক দৃষ্টান্ত
৫
বছরের শিশু জোসিয়াহ ডানকান। অসহায় এক গৃহহীন ব্যক্তির প্রতি তার অনন্য
মানবিক দৃষ্টান্ত দেখে চোখে পানি এসে যায় উপস্থিত সবার। ঘটনাটি ঘটেছে
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামা অঙ্গরাজ্যের প্র্যাটভিল এলাকায়। রাস্তায় এক
গৃহহীন ব্যক্তিকে দেখে জোসিয়াহ। সঙ্গে ছিলেন তার মা অ্যাভা ফলক। মাকে
জোসিয়াহ জিজ্ঞাসা করে লোকটি কে। অ্যাভা ‘হোমলেস’ বা গৃহহীন মানুষের বিষয়টি
বোঝানোর পর জোসিয়াহ তাকে খাবার কিনে দেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকে। পরে
তাকে রেস্তরাঁর ভেতরে বসিয়ে খাওয়ানোর সময় জোসিয়াহ লোকটির সঙ্গে প্রার্থনা
করে। আর তার মায়াবী কণ্ঠে প্রার্থনা শুনে অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে উপস্থিত ১১
ব্যক্তির চোখ। হৃদয়স্পর্শী এ ঘটনাটি উঠে এসেছে বৃটেনের ডেইলি মেইলের সচিত্র
প্রতিবেদনে। অ্যাভা জানান, প্র্যাটভিলে এক রেস্তঁরার বাইরে এক গৃহহীন
ব্যক্তির ওপর তার ছেলে জোসিয়াহ’র নজরে পড়ে। লোকটির চুল ছিল অবিন্যস্ত,
এলোমেলো। রেস্তরাঁর বাইরে বাইক আর হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে সে দাঁড়িয়ে ছিল।
লোকটিকে দেখে মাকে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে জোসিয়াহ। অ্যাভা তাকে বলেন
লোকটি ‘হোমলেস’। ছোট্ট শিশু জোসিয়াহ পাল্টা প্রশ্ন করে, এর অর্থ কি? অ্যাভা
উত্তর দেন, এর অর্থ হলো, লোকটির কোন বাড়ি নেই। সঙ্গে সঙ্গে জোসিয়াহ’র
পাল্টা প্রশ্ন, তাহলে তার বাসা কোথায়? তার পরিবার কোথায়? সে তার বাজার সদাই
কোথায় রাখে? অ্যাভা জানান, তার ছেলে সবথেকে যে বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত ছিল তা
হলো ওই লোকটির খাবার কিছু নেই। সে লোকটিকে রেস্তরাঁয় খাবার কিনে দেয়ার
জন্য মাকে পীড়াপীড়ি করতে থাকে। এতে সম্মত হন অ্যাভা। কিন্তু লোকটিকে
রেস্তরাঁয় নিয়ে গিয়ে বসানোর পর সেখানের কোন ওয়েটার খাবারের অর্ডার নিতে
আগ্রহ প্রকাশ করে নি। এটা দেখে নিজেই সবকিছু করার সিদ্ধান্ত নেয় জোসিয়াহ।
লোকটির কাছে গিয়ে সে জানতে চায় সে খাবারের মেনুটা দেখতে চায় কিনা। জোসিয়াহ
তাকে এটাও বোঝায় যে, মেনু ছাড়া তো সে অর্ডার দিতে পারবে না। লোকটি
জোসিয়াহকে আশ্বস্ত করে যে, একটা চিজবার্গার হলেই সে সন্তুষ্ট। এদিকে অ্যাভা
লোকটিকে জানিয়ে দেন, রেস্তরাঁ থেকে যা খুশি তাই খেতে পারেন তিনি। এখানেই
শেষ নয়। এরপর টেবিলে খাবার আসলো। লোকটি খাওয়া শুরু করা আগেই জোসিয়াহ তাকে
গিয়ে বলে যে সে খাওয়ার আগের প্রার্থনাটা তার সঙ্গে করতে চায়। জোসিয়াহ যখন
সুরে সুরে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছিল তখন রেস্তরাঁয় উপস্থিত
প্রত্যেকে তা শুনতে পান। জোসিয়াহ প্রার্থনা করে, ‘হে আমাদের সৃষ্টিকর্তা,
হে আমাদের সৃষ্টিকর্তা, আমরা তোমাকে ধন্যবাদ জানাই, আমরা তোমাকে ধন্যবাদ
জানাই। আমাদের প্রতি তোমার সব আশীর্বাদের জন্য, আমাদের প্রতি তোমার সব
আশীর্বাদের জন্য, আমিন, আমিন।’ অ্যাভা জানান, ওই লোকটিসহ উপস্থিত
প্রত্যেকের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। ওই মুহূর্তটি কখনও ভুলবেন না বলে
জানালেন অ্যাভা। তার মন্তব্য, ওয়াফল হাউজ রেস্তরাঁয় আমার ছেলেকে ১১ জন
ব্যক্তির হৃদয় স্পর্শ করতে দেখাটা সারাজীবন একজন মা হিসেবে আমার অন্যতম
অর্জন হয়ে থাকবে। তার ছেলের এ কাজটি ‘ঐশ্বরিক প্রজ্ঞার স্পর্শ’ বলে আখ্যা
দেন তিনি।
No comments