মনির বান্ধবীর খোঁজে পুলিশ by মহিউদ্দীন জুয়েল

চট্টগ্রামে আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইলিং করতে গিয়ে ধরা পড়া তরুণী মনির সহযোগী আরেক সুন্দরী কাজলকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, শহরের অভিজাত এলাকায় বাসাভাড়া নিয়ে কাজল ও মনি দুই বান্ধবী মিলে প্রতারণার ফাঁদ পেতে আসছিল।
গতকাল সকালে মনিকে চট্টগ্রাম আদালতে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ। এর আগে থানা হেফাজতে তার কাছ থেকে বেরিয়ে আসে আরও নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। মনির সঙ্গে ধরা পড়া রনি ও লিটন নামের অপর দুই ব্যক্তি পুলিশকে জানায়, সারা দেশের বিভিন্ন লোকজনকে এভাবে ফোনে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গোপন ক্যামেরায় বিবস্ত্র করার ছবি ভিডিও করতো তারা। এই কাজের জন্য মনি পেতো সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা।
সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিল মাসে হালিশহর এলাকায় ধনাঢ্য খাতুনগঞ্জের এক ব্যবসায়ীকে ডেকে এনে ব্ল্যাকমেইলিং করে মনি। এর আগের মাসে খুলশী এলাকার ওয়্যারলেস গেইট এলাকার একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে নানা ধরনের অপকর্ম করে আসছিলো তারা দুইজন। সুন্দরী কাজল ধরা পড়লে এ ব্যাপারে আরও নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে খুলশী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুকান্ত চক্রবর্তী মানবজমিনকে বলেন, মনিকে আদালতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা তার আরেক সহযোগী কাজলকে খুঁজছি। সোমবার মনিকে গ্রেপ্তারের পর সে পুলিশকে নানা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় কাজলের খোঁজে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ফোন করে বাসায় ডেকে এনে আপত্তিকর ছবি তুলতা সুন্দরী মনি। কখনো নিজের নাম গোপন করে, আবার কখনো ছদ্ম নামে।
চট্টগ্রাম সহ সারা দেশের অন্তত ১০০ ব্যক্তিকে এভাবে ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে আসছে মনি। তার সঙ্গে রয়েছে আরও ১০ জনের একটি সিন্ডিকেট। নগরীর হালিশহর ও খুলশী এলাকায় দীর্ঘদিন এমন অপকর্মের ফাঁদ পাতে সে। সর্বশেষ গত রোববার গভীর রাতে এক ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সে। এরপর বেরিয়ে আসে নানা চাঞ্চল্যকর কাহিনী।
শান্তিবাগ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই সময় তার সঙ্গে সিন্ডিকেট চক্রের দুই সদস্য রনি ও লিটন নামের আরও দুই যুবক গ্রেপ্তার হয়। ২৩ বছরের মনি আক্তার সব সময় তার বয়স দিয়ে পুরুষদের আকর্ষণ করতে চাইতো।
সুযোগ পেলেই বিছানায় নিয়ে যাওয়ার অফার করতো। তবে গত রোববার শাহাদাত নামের এক ব্যক্তিকে কম টাকায় প্লট বিক্রির লোভ দেখিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে কাজল নামের সেই রমণী। সেই কাজলও মনির সঙ্গে সিন্ডিকেটে কাজ করতো। প্রথমে শাহাদাতকে প্রতারক মনির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।
মনি কথা বলার ছলে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে শাহাদাতকে কাপড় খুলতে বাধ্য করে। একই সঙ্গে তার সহকর্মীরা মনির সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলতে থাকে। শাহাদাত এই ঘটনা থেকে বাঁচার আকুতি জানালে তারা দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
শাহাদাত বিষয়টি তার পরিবারকে জানালে তারা প্রাথমিকভাবে ২০,০০০ টাকা পাঠায় বিকাশের মাধ্যমে। কিন্তু মনি ও তার চক্রের সদস্যরা তাকে ওই বাড়িতে আটকে রাখে। এই ঘটনায় স্থানীয় থানায় মামলা করার পর পুলিশ তদন্তে নামে। তারা কৌশলে মনির সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা পরিশোধ করার কথা জানায়। টাকার লোভে রনি নামের প্রতারক চক্রের আরেক সদস্য বড়পুল এলাকায় তাসফিয়া কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এলে পুলিশ তাকে আটক করে। এরপর রনির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মনির বাসা থেকে শাহাদাতকে উদ্ধার করে মনি ও লিটনকে  গ্রেপ্তার করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.