ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় কলের লাঙলের ভর্তুকির বড় ভাগ সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের পকেটে by আজাদ রহমান
কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ উৎসাহিত করতে সরকার কৃষকদের কলের লাঙল (পাওয়ার টিলার) কিনতে দামের ২৫ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে। ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলায় ভর্তুকি পাওয়া ১৫ জনের আটজনই যুবলীগের নেতা-কর্মী। বাকি সাতজন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কর্মী।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকার থেকে ভর্তুকির টাকা নিলেও এই ১৫ জনের মধ্যে মাত্র ছয়জন কলের লাঙল কিনেছেন। বাকি নয়জন যন্ত্র না কিনে ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে ভর্তুকির টাকা তুলে নিয়ে গেছেন।
কৃষি বিভাগের ঝিনাইদহ উপপরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পে ঝিনাইদহ জেলায় ৯০টি পাওয়ার টিলার ক্রয়ে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। এই পাওয়ার টিলার ক্রয়ে কৃষক মোট মূল্যের ২৫ শতাংশ ভর্তুকি পাবেন। ঝিনাইদহের ছয়টি উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১৫টি করে এই ৯০টি বিতরণ করা হয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের দিকে কৃষকদের কাছ থেকে আবেদন সংগ্রহ করা হয়। মার্চ মাসে পাওয়ার টিলার ক্রয়ে ভর্তুকি দেওয়া হয়। প্রতিটি পাওয়ার টিলারের জন্য কৃষক ভর্তুকি হিসেবে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়েছেন। প্রথম দফার ৯০টির ভর্তুকি দেওয়া শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১৮৫টি বরাদ্দ এসেছে, যা বিতরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও কলের লাঙল না কিনে ভর্তুকির টাকা তুলে নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ইউনিয়নে কলের লাঙলের বিষয়ে প্রচারণা চালানোর পর প্রকৃত কৃষকেরা ওই যন্ত্র কেনায় ভর্তুকির জন্য আবেদন করবেন। কৃষি বিভাগ ওই আবেদন যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত কৃষককে ভর্তুকির টাকা দেবে। কিন্তু রাজনৈতিক চাপে তারা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নামে ভর্তুকির টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। স্থানীয় সাংসদ নবী নেওয়াজ এবং প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতারা যাঁদের নামে সুপারিশ করেছেন, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা তাঁদের নামেই পাওয়ার টিলারের ভর্তুকির টাকা দিয়েছেন।
কোটচাঁদপুরের কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেছেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের হাতে চলে যাওয়ার ফলে প্রকৃত কৃষকেরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে সরকার কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের যে লক্ষ্য নিয়ে এই ভর্তুকি দিচ্ছে, তা পূরণ হয়নি।
জানতে চাইলে কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাজী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তিনি তালিকা যাচাই-বাছাই করেননি। এর জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রহ্লাদ কুমারকে আহ্বায়ক করে তৈরি করা কমিটির চূড়ান্ত তালিকা দেখে তিনি ভর্তুকির টাকা দিয়েছেন। তবে কেউ টাকা নিয়ে পাওয়ার টিলার না কিনলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রহ্লাদ কুমার বলেন, তালিকায় যাঁদের নাম আছে, তাঁদের বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে তাঁরা যে কৃষক, তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তাঁরা কোনো রাজনীতি করেন কি না, তা দেখার সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সাংসদ নবী নেওয়াজের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
ভর্তুকি পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা: ভর্তুকি পাওয়া নেতা-কর্মীরা হলেন এলাঙ্গী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আবদুল খালেক, যুবলীগের সহসভাপতি তাইজুল ইসলাম, বলুহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আকিমুল ইসলামের ছেলে যুবলীগ নেতা তানভির আহম্মদ এবং যুবলীগ কর্মী আজিজুল হক, সিরাজুল ইসলাম, ফিরোজ আলম, আতিয়ার রহমান, গোলাম কিবরিয়া।
তবে আবদুল খালেক, ফারুক আহমেদ, ফিরোজ আলম ও আজিজুল ইসলামের বাড়িতে এবং কৃষিজমিতে গিয়ে কোথাও পাওয়ার টিলারের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এই নেতারা যেসব দোকানের বিল-ভাউচার কৃষি অফিসে জমা দিয়েছেন, সেসব দোকানে গিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তাঁরা পাওয়ার টিলার কেনেননি। তবে দোকান থেকে বানানো বিল-ভাউচার নিয়ে গেছেন।
এ ব্যাপারে ফারুক আহম্মদ ও আজিজুল হক বলেন, তাঁরা রাজনীতি করলেও কৃষক। তাই চাষের প্রয়োজনে পাওয়ার টিলার ক্রয় করেছেন। আদৌ পাওয়ার টিলার ক্রয় করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঠে ব্যবহৃত হচ্ছে, প্রয়োজনে দেখাতে পারবেন।
কুল্ল্যাগাছা গ্রামের বাসিন্দা ও এলাঙ্গী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আবদুল খালেক স্বীকার করেন, তিনি ভর্তুকির টাকা নিয়েছেন। দ্রুত পাওয়ার টিলার কিনবেন। বলুহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আকিমুল ইসলাম ভর্তুকি নিয়েছেন ছেলে তানভির আহম্মদের নামে। তিনি পাওয়ার টিলার ক্রয় করেছেন বলে জানান। তবে ওই গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, আকিমুলের চেয়ে অনেক দরিদ্র কৃষক রয়েছেন। যাঁদের পুরো টাকা দিয়ে পাওয়ার টিলার কেনার ক্ষমতা নেই।
আসাননগর গ্রামের বাসিন্দা এলাঙ্গী ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি তাইজুল ইসলাম নিয়েছেন ভর্তুকির টাকা। পেয়েছেন লক্ষ্মীকুণ্ডু গ্রামের বাসিন্দা ইউনিয়ন যুবলীগের কার্যকরী সদস্য সিরাজুল ইসলামও। তিনি বলেন, তাঁর চাষ আছে, তাই টাকা নিয়েছেন। তিনি কোনো অবৈধ কাজ করেননি।
নাম প্রকাশ না করে সলেমানপুর গ্রামের এক কৃষক জানান, তিনি এই পাওয়ার টিলারের জন্য কৃষি অফিসে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সুপারিশ ছাড়া তাঁদের কিছু করার নেই।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকার থেকে ভর্তুকির টাকা নিলেও এই ১৫ জনের মধ্যে মাত্র ছয়জন কলের লাঙল কিনেছেন। বাকি নয়জন যন্ত্র না কিনে ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে ভর্তুকির টাকা তুলে নিয়ে গেছেন।
কৃষি বিভাগের ঝিনাইদহ উপপরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পে ঝিনাইদহ জেলায় ৯০টি পাওয়ার টিলার ক্রয়ে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। এই পাওয়ার টিলার ক্রয়ে কৃষক মোট মূল্যের ২৫ শতাংশ ভর্তুকি পাবেন। ঝিনাইদহের ছয়টি উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১৫টি করে এই ৯০টি বিতরণ করা হয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের দিকে কৃষকদের কাছ থেকে আবেদন সংগ্রহ করা হয়। মার্চ মাসে পাওয়ার টিলার ক্রয়ে ভর্তুকি দেওয়া হয়। প্রতিটি পাওয়ার টিলারের জন্য কৃষক ভর্তুকি হিসেবে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়েছেন। প্রথম দফার ৯০টির ভর্তুকি দেওয়া শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১৮৫টি বরাদ্দ এসেছে, যা বিতরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও কলের লাঙল না কিনে ভর্তুকির টাকা তুলে নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ইউনিয়নে কলের লাঙলের বিষয়ে প্রচারণা চালানোর পর প্রকৃত কৃষকেরা ওই যন্ত্র কেনায় ভর্তুকির জন্য আবেদন করবেন। কৃষি বিভাগ ওই আবেদন যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত কৃষককে ভর্তুকির টাকা দেবে। কিন্তু রাজনৈতিক চাপে তারা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নামে ভর্তুকির টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। স্থানীয় সাংসদ নবী নেওয়াজ এবং প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতারা যাঁদের নামে সুপারিশ করেছেন, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা তাঁদের নামেই পাওয়ার টিলারের ভর্তুকির টাকা দিয়েছেন।
কোটচাঁদপুরের কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেছেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের হাতে চলে যাওয়ার ফলে প্রকৃত কৃষকেরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে সরকার কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের যে লক্ষ্য নিয়ে এই ভর্তুকি দিচ্ছে, তা পূরণ হয়নি।
জানতে চাইলে কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাজী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তিনি তালিকা যাচাই-বাছাই করেননি। এর জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রহ্লাদ কুমারকে আহ্বায়ক করে তৈরি করা কমিটির চূড়ান্ত তালিকা দেখে তিনি ভর্তুকির টাকা দিয়েছেন। তবে কেউ টাকা নিয়ে পাওয়ার টিলার না কিনলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রহ্লাদ কুমার বলেন, তালিকায় যাঁদের নাম আছে, তাঁদের বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে তাঁরা যে কৃষক, তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তাঁরা কোনো রাজনীতি করেন কি না, তা দেখার সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সাংসদ নবী নেওয়াজের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
ভর্তুকি পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা: ভর্তুকি পাওয়া নেতা-কর্মীরা হলেন এলাঙ্গী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আবদুল খালেক, যুবলীগের সহসভাপতি তাইজুল ইসলাম, বলুহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আকিমুল ইসলামের ছেলে যুবলীগ নেতা তানভির আহম্মদ এবং যুবলীগ কর্মী আজিজুল হক, সিরাজুল ইসলাম, ফিরোজ আলম, আতিয়ার রহমান, গোলাম কিবরিয়া।
তবে আবদুল খালেক, ফারুক আহমেদ, ফিরোজ আলম ও আজিজুল ইসলামের বাড়িতে এবং কৃষিজমিতে গিয়ে কোথাও পাওয়ার টিলারের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এই নেতারা যেসব দোকানের বিল-ভাউচার কৃষি অফিসে জমা দিয়েছেন, সেসব দোকানে গিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তাঁরা পাওয়ার টিলার কেনেননি। তবে দোকান থেকে বানানো বিল-ভাউচার নিয়ে গেছেন।
এ ব্যাপারে ফারুক আহম্মদ ও আজিজুল হক বলেন, তাঁরা রাজনীতি করলেও কৃষক। তাই চাষের প্রয়োজনে পাওয়ার টিলার ক্রয় করেছেন। আদৌ পাওয়ার টিলার ক্রয় করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঠে ব্যবহৃত হচ্ছে, প্রয়োজনে দেখাতে পারবেন।
কুল্ল্যাগাছা গ্রামের বাসিন্দা ও এলাঙ্গী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আবদুল খালেক স্বীকার করেন, তিনি ভর্তুকির টাকা নিয়েছেন। দ্রুত পাওয়ার টিলার কিনবেন। বলুহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আকিমুল ইসলাম ভর্তুকি নিয়েছেন ছেলে তানভির আহম্মদের নামে। তিনি পাওয়ার টিলার ক্রয় করেছেন বলে জানান। তবে ওই গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, আকিমুলের চেয়ে অনেক দরিদ্র কৃষক রয়েছেন। যাঁদের পুরো টাকা দিয়ে পাওয়ার টিলার কেনার ক্ষমতা নেই।
আসাননগর গ্রামের বাসিন্দা এলাঙ্গী ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি তাইজুল ইসলাম নিয়েছেন ভর্তুকির টাকা। পেয়েছেন লক্ষ্মীকুণ্ডু গ্রামের বাসিন্দা ইউনিয়ন যুবলীগের কার্যকরী সদস্য সিরাজুল ইসলামও। তিনি বলেন, তাঁর চাষ আছে, তাই টাকা নিয়েছেন। তিনি কোনো অবৈধ কাজ করেননি।
নাম প্রকাশ না করে সলেমানপুর গ্রামের এক কৃষক জানান, তিনি এই পাওয়ার টিলারের জন্য কৃষি অফিসে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সুপারিশ ছাড়া তাঁদের কিছু করার নেই।
No comments