বাকরুদ্ধ স্ত্রী, বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা

স্ত্রী সঞ্চিতার সঙ্গে নীলকণ্ঠ। এই ছবি এখন কেবলই স্মৃতি
আফ্রিকান দেশ মালিতে বিদ্রোহীদের গুলিতে নিহত সৈনিক নীলকণ্ঠ হাজংয়ের পরিবারের সদস্যরা দিশাহারা। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সঞ্চিতা হাজং বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তার মা অবন্তি হাজং। নীলকণ্ঠের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার উত্তর বংশিকুণ্ডা ইউনিয়নের গিলাগড়া ও স্ত্রী সঞ্চিতা হাজংয়ের গ্রামের বাড়ি একই জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কাইতকোনা গ্রামে শোকের মাতম চলছে। আত্মীয়স্বজন ও আশে পাশের লোকজন শোকে মুহ্যমান।
নীলকণ্ঠ হাজংয়ের বাবা রিজেন্দ্র হাজং জানান, ১৮ই মে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যায় নীলকণ্ঠ হাজং। এর তিন দিন আগে বাড়িতে এসে সকলের আশীর্বাদ নিয়ে যায় নীলকণ্ঠ। মালিতে নিরাপদে পৌঁছে ফোন করে জানায়। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে জানতে পারি আমার ছেলে আর নেই। নীলকণ্ঠের স্ত্রী সঞ্চিতা হাজং ঢাকার সেনাসদর দপ্তর থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে একটি  ফোন পান। সেই সঙ্গে দুঃসংবাদটিও। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে থাকা স্বামী সেনাসদস্য নীলকণ্ঠ হাজং বিদ্রোহীদের গুলিতে মারা গেছেন। স্বামী মারা গেছে এ খবরটি পেয়েই বাকরুদ্ধ সঞ্চিতা হাজং। স্বামীর জন্য আহাজারি করছেন। তার এ অবস্থায় শোকে কাতর সবাই।
পুত্রের মৃত্যুর খবরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন নীলকণ্ঠ হাজংয়ের মা অবন্তি হাজং। ছেলের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন তিনি। নীলকণ্ঠ ও সঞ্চিতার বিয়ে হয় ২০১৩ সালে। স্বামী মালিতে পৌঁছার পর বেড়াতে আসেন বাবার বাড়ি। এখানেই সবচেয়ে দুঃসংবাদটি শুনতে হয় সঞ্চিতা হাজংকে।
নীলকণ্ঠ হাজংয়ের মামা ধর্মপাশা উপজেলার ট্রাইবাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আশুতোষ হাজং বলেন, ২০০৩ সালে সেনাবাহিনীতে  সৈনিক হিসেবে যোগ দেন নীলকণ্ঠ। তারা চার ভাই ও এক বোন। সকালে তার বাবা রিজেন্দ্র হাজংকে ছেলের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে। কিন্তু মা অসুস্থ থাকায় প্রথমে তাকে বলা হয়েছে, নীলকণ্ঠ হঠাৎ সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এই খবরেই তিনি বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। বিকালে তাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। রিজেন্দ্র হাজং আরও জানান, ৪ দিন আগে  ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। আর কোন কথা হয়নি।
সঞ্চিতার মা মনোরমা হাজং বলেন, ‘কিভাবে কি হইছে আমরা কিচ্ছু জানি না। খবর পাওয়ার পর  থেকে মেয়েটা কারো সঙ্গে কোন কথা কয় না। যেন পাথর হয়ে আছে।’
এদিকে, খবর পেয়ে সঞ্চিতার বড় ভাই সঞ্জয় হাজং সিলেট থেকে বাড়িতে ছুটে আসেন। সিলেট এমসি কলেজে পড়েন তিনি। সঞ্জয় হাজং জানান, পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সঞ্চিতা চতুর্থ। বাবা স্বপন কুমার হাজং বেঁচে নেই। খবর পাওয়ার পর থেকে কারো সঙ্গেই কোন কথা বলছে না সঞ্চিতা হাজং।

No comments

Powered by Blogger.