ফেসবুকে ঘৃণার চাষ by মাহমুদ মানজুর
ফেসবুক।
যোগাযোগের ইতিহাস বদলে দেয়া এক মাধ্যম। দুনিয়া যেন আক্ষরিক অর্থেই পরিণত
হয়েছে এক গ্রামে। ফেসবুক নামের বিশ্বগ্রামে প্রতিদিন নিজেদের মতামত দিচ্ছেন
কোটি কোটি মানুষ। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। মুক্ত মাধ্যমে মুক্ত হাতে
লিখছেন নানা শ্রেণী-পেশার জনগোষ্ঠী। তবে সামাজিক যোগাযোগের এ মাধ্যমে
ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সবসময় সামাজিক থাকছে না। মত প্রকাশের নামে চাষ হচ্ছে
ঘৃণারও। চরিত্র হরণ করা হচ্ছে মানুষের। অনেকটা সুকৌশলে। মিথ্যা আর অশালীন
প্রচারণার মাধ্যম হিসেবে ফেসবুককে ব্যবহার করছে অনেকে। অন্যান্য সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমও এর ব্যতিক্রম নয়। অনেকে হয়তো জানেনও না, তাদের নামে ফেসবুক
অ্যাকাউন্ট খুলে চালানো হচ্ছে ঘৃণ্য প্রচারণা। ব্যক্তিগত, সামাজিক আর
রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ঘায়েল করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফেসবুক। মিথ্যা,
ভিত্তিহীন আর আজগুবি তথ্যের প্রচারণা চলছে। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে
অভিনেতা-অভিনেত্রী, সাধারণ মানুষ কেউই বাদ যাচ্ছেন না ফেসবুক হয়রানি থেকে।
এমনকি ইতিহাসের অনেক মহামানবকে নিয়েও ফেসবুকে রচনা করা হচ্ছে কুৎসার।
২০০৪ সালে মার্ক জুকারবার্গ আর তার চার বন্ধু মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ফেসবুক। যা এখন পৃথিবীর অন্যতম ব্যবসা সফল উদ্যোগও বটে। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী প্রায় ১৪৪ কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করছে। বাংলাদেশেও ৫০ লাখের বেশি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। ধারণা করা হয়, ৫ থেকে ১১ ভাগ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ভুয়া। এসব ভুয়া অ্যাকাউন্ট বাতিল করতে ফেসবুক নানা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এছাড়া, ভুয়া ফেসবুক পেজও খোলা হয়।
বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে একাধিক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দেখা গেলেও এর কোনটিই প্রধানমন্ত্রীর নয়। অজ্ঞাত ব্যক্তিরা এসব অ্যাকাউন্ট খুলেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে তারেক রহমানেরও কোন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। যদিও তাদের নামে খোলা হয়েছে একাধিক অ্যাকাউন্ট। আরও অনেক রাজনীতিবিদের নামেও একাধিক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যাকাউন্টগুলো তাদের নয়। এসব অ্যাকাউন্টের বেশির ভাগেই অবশ্য রাজনীতিবিদদের বক্তব্য প্রচার করা হয়। তবে কিছু কিছু অ্যাকাউন্টে কুৎসাও রচনা করা হয় রাজনীতিবিদদের নামে। তাদের বিরুদ্ধে চালানো হয় অশালীন প্রচারণা। তৈরি করা হয় ব্যঙ্গাত্মক ছিত্র। যার বেশির ভাগই শালীন নয়। তবে ভুয়া অ্যাকাউন্ট সবচেয়ে বেশি খোলা হয়, নায়ক-নায়িকাদের নামে। প্রতিটি নায়ক-নায়িকার নামে আছে একাধিক অ্যাকাউন্ট। তার বেশিরভাগই তাদের নয়। এসব অ্যাকাউন্টে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নানা অশালীন ছবি দেয়া হয়। অনেকের ভুয়া ভিডিও আপলোড করা হয়। ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয় নারীরা। তাদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করা হয়। বানানো অশালীন ছবিও আপলোড করা হয়। ভুয়া অ্যাকাউন্টের বেশির ভাগই খোলা হয় মেয়েদের নামে। অনেক ক্ষেত্রে প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে গেলে ছেলেটি আগের অন্তরঙ্গ ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। একাধিক ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এসব অ্যাকাউন্টে সমাজের বিশিষ্ট অনেক ব্যক্তির নামে কুৎসা রটানো হয়েছে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে আম্পায়ারদের একাধিক ভুল সিদ্ধান্তে পুরো বাংলাদেশ যখন প্রতিবাদমুখর, ঠিক তক্ষুণি কলকাতার জনপ্রিয় শিল্পী রূপম ইসলাম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসের মধ্য দিয়ে দুই বাংলার সম্প্রীতিতে রীতিমতো আগুন ধরিয়ে দেন। তিনি বাংলাদেশকে ‘নতুন পাকিস্তান’ ও বাংলাদেশীদের ‘ছোট লোক’ দাবি করে ফেসবুকে লিখেন, ‘অনেক ম্যাচ জিতেছি, তার চেয়ে অনেক অনেক ম্যাচ হেরেছি। ইন্ডিয়া পাকিস্তানের তথাকথিত বিদ্বেষের গল্প শুনেছি। কিন্তু আমার পরিবেশে তা কখনো ছায়া ফেলেনি। অত্যন্ত লজ্জার সঙ্গে গত কয়েক দিন ধরে এক নতুন পাকিস্তানের অভ্যুদয় সহ্য করছি। আমার অভিজ্ঞতায় যা বিরলতম। আর যাই করি এসব ছোটলোকদের আর কখনোই আমি মানুষের মর্যাদা দিবো না। রেখেছো ছোটলোক করে মানুষ করোনি। একই সময়ে একই বিষয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসে ‘বাঘ’কে ‘বেড়াল’ আখ্যা দিয়ে একই রকম কাণ্ড ঘটিয়েছেন কলকাতার শীর্ষ নায়ক প্রসেনজিৎও।
সমপ্রতি দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্রমশ ঈর্ষা বা হিংসার জন্ম নিচ্ছে। গবেষণার সঙ্গে জড়িত অধ্যাপক মার্গারেট ডাফি বলেন, যেভাবে ফেসবুক ব্যবহার করেন ব্যবহারকারীরা, তার ফলে এর প্রতি নিজেদের প্রতিক্রিয়ার মধ্যেও পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, যদি ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এর ভাল দিকগুলো বেছে নিয়ে নিজের পরিবার ও পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখেন এবং জীবনের মজার ও গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন, তাহলে ফেসবুক হতে পারে বেশ মজার ও স্বাস্থ্যকর কর্মকাণ্ডের জায়গা। তবে পরিচিত কেউ অর্থনৈতিকভাবে কতটা ভাল আছে বা পুরনো কোন বন্ধু তার সম্পর্ক নিয়ে কতটা সুখে আছে, এসব দেখার জন্য যারা ফেসবুক ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে ঈর্ষা বা হিংসার জন্ম নিতে পারে।
তবে মামলা বা আইনি ব্যবস্থার চেয়ে মানুষের দায়িত্ববোধ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘৃণা, হিংসা, প্রতিহিংসা এবং হত্যার চাষাবাদ ক্রমশ বাড়ছে এমন বাস্তবতাকে স্বীকার করে তিনি বলেন, ব্লগ, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব অথবা এ জাতীয় যা আছে তার সবই আমাদের জন্য নতুন একটি মিডিয়া। যে মিডিয়া সবার জন্য স্বাধীন। মানুষ মূলত একা। একটা মানুষ যখন রাতে অথবা দিনে একান্তে তার মনিটরটি সামনে নিয়ে বসে তখন সে নিজের ভেতরের না বলা কথা, দুঃখ, ক্ষোভ, বিশ্বাস, অবিশ্বাসসহ যা মনে আসে তাই প্রকাশ করে। কারণ হয়তো, এর বাইরে মতো প্রকাশের তেমন কোন সুযোগ নেই মানুষটির। এসব কারণেই বৌদ্ধ মন্দির থেকে অপরাজেয় বাংলা, ফেসবুক থেকে ব্লগ পর্যন্ত এখন যাচ্ছেতাই হচ্ছে। রোবায়েত ফেরদৌস আরও বলেন, আমি মনে করি ফ্রিডম ইজ নাথিং, উইদাউট রেসপনসিবিলিটি। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানেই যা খুশি তাই নয়। এই শিক্ষাটা আমাদের মধ্যে এখনও গড়ে ওঠেনি বলেই এমনটা ঘটছে প্রতিনিয়ত। বিশ্লেষকদের মতে ‘স্বাধীনতা এবং আইন’ প্রসঙ্গে ‘সচেতন’ নয় বলেই সমাজে এমন ঘটনা বাড়ছে ক্রমশ। এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের কথা তুলে ধরে বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে ‘নাগরিকের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হয়েছে।’ আপাত দৃষ্টিতে মানুষের প্রতি সংবিধানের এই ‘স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান’-এর মধ্য দিয়ে উপরি-উক্ত বিষয়গুলোর দায়মুক্তি ঘটলেও বাস্তবতা কি তাই? সংবিধানে একই অনুচ্ছেদে এই স্বাধীনতার ব্যাখা হিসেবে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধসাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা অধিকারের এবং সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতা নিশ্চয়তা দান করা হইল।’ অর্থাৎ সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন কোন স্বাধীন মতামত কিংবা কার্যক্রম চালানো যাবে না যার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা, মানহানি কিংবা নৈতিকতার স্বার্থে কারও আঘাত লাগে।
২০০৪ সালে মার্ক জুকারবার্গ আর তার চার বন্ধু মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ফেসবুক। যা এখন পৃথিবীর অন্যতম ব্যবসা সফল উদ্যোগও বটে। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী প্রায় ১৪৪ কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করছে। বাংলাদেশেও ৫০ লাখের বেশি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। ধারণা করা হয়, ৫ থেকে ১১ ভাগ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ভুয়া। এসব ভুয়া অ্যাকাউন্ট বাতিল করতে ফেসবুক নানা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এছাড়া, ভুয়া ফেসবুক পেজও খোলা হয়।
বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে একাধিক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দেখা গেলেও এর কোনটিই প্রধানমন্ত্রীর নয়। অজ্ঞাত ব্যক্তিরা এসব অ্যাকাউন্ট খুলেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে তারেক রহমানেরও কোন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। যদিও তাদের নামে খোলা হয়েছে একাধিক অ্যাকাউন্ট। আরও অনেক রাজনীতিবিদের নামেও একাধিক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যাকাউন্টগুলো তাদের নয়। এসব অ্যাকাউন্টের বেশির ভাগেই অবশ্য রাজনীতিবিদদের বক্তব্য প্রচার করা হয়। তবে কিছু কিছু অ্যাকাউন্টে কুৎসাও রচনা করা হয় রাজনীতিবিদদের নামে। তাদের বিরুদ্ধে চালানো হয় অশালীন প্রচারণা। তৈরি করা হয় ব্যঙ্গাত্মক ছিত্র। যার বেশির ভাগই শালীন নয়। তবে ভুয়া অ্যাকাউন্ট সবচেয়ে বেশি খোলা হয়, নায়ক-নায়িকাদের নামে। প্রতিটি নায়ক-নায়িকার নামে আছে একাধিক অ্যাকাউন্ট। তার বেশিরভাগই তাদের নয়। এসব অ্যাকাউন্টে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নানা অশালীন ছবি দেয়া হয়। অনেকের ভুয়া ভিডিও আপলোড করা হয়। ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয় নারীরা। তাদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করা হয়। বানানো অশালীন ছবিও আপলোড করা হয়। ভুয়া অ্যাকাউন্টের বেশির ভাগই খোলা হয় মেয়েদের নামে। অনেক ক্ষেত্রে প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে গেলে ছেলেটি আগের অন্তরঙ্গ ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। একাধিক ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এসব অ্যাকাউন্টে সমাজের বিশিষ্ট অনেক ব্যক্তির নামে কুৎসা রটানো হয়েছে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে আম্পায়ারদের একাধিক ভুল সিদ্ধান্তে পুরো বাংলাদেশ যখন প্রতিবাদমুখর, ঠিক তক্ষুণি কলকাতার জনপ্রিয় শিল্পী রূপম ইসলাম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসের মধ্য দিয়ে দুই বাংলার সম্প্রীতিতে রীতিমতো আগুন ধরিয়ে দেন। তিনি বাংলাদেশকে ‘নতুন পাকিস্তান’ ও বাংলাদেশীদের ‘ছোট লোক’ দাবি করে ফেসবুকে লিখেন, ‘অনেক ম্যাচ জিতেছি, তার চেয়ে অনেক অনেক ম্যাচ হেরেছি। ইন্ডিয়া পাকিস্তানের তথাকথিত বিদ্বেষের গল্প শুনেছি। কিন্তু আমার পরিবেশে তা কখনো ছায়া ফেলেনি। অত্যন্ত লজ্জার সঙ্গে গত কয়েক দিন ধরে এক নতুন পাকিস্তানের অভ্যুদয় সহ্য করছি। আমার অভিজ্ঞতায় যা বিরলতম। আর যাই করি এসব ছোটলোকদের আর কখনোই আমি মানুষের মর্যাদা দিবো না। রেখেছো ছোটলোক করে মানুষ করোনি। একই সময়ে একই বিষয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসে ‘বাঘ’কে ‘বেড়াল’ আখ্যা দিয়ে একই রকম কাণ্ড ঘটিয়েছেন কলকাতার শীর্ষ নায়ক প্রসেনজিৎও।
সমপ্রতি দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্রমশ ঈর্ষা বা হিংসার জন্ম নিচ্ছে। গবেষণার সঙ্গে জড়িত অধ্যাপক মার্গারেট ডাফি বলেন, যেভাবে ফেসবুক ব্যবহার করেন ব্যবহারকারীরা, তার ফলে এর প্রতি নিজেদের প্রতিক্রিয়ার মধ্যেও পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, যদি ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এর ভাল দিকগুলো বেছে নিয়ে নিজের পরিবার ও পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখেন এবং জীবনের মজার ও গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন, তাহলে ফেসবুক হতে পারে বেশ মজার ও স্বাস্থ্যকর কর্মকাণ্ডের জায়গা। তবে পরিচিত কেউ অর্থনৈতিকভাবে কতটা ভাল আছে বা পুরনো কোন বন্ধু তার সম্পর্ক নিয়ে কতটা সুখে আছে, এসব দেখার জন্য যারা ফেসবুক ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে ঈর্ষা বা হিংসার জন্ম নিতে পারে।
তবে মামলা বা আইনি ব্যবস্থার চেয়ে মানুষের দায়িত্ববোধ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘৃণা, হিংসা, প্রতিহিংসা এবং হত্যার চাষাবাদ ক্রমশ বাড়ছে এমন বাস্তবতাকে স্বীকার করে তিনি বলেন, ব্লগ, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব অথবা এ জাতীয় যা আছে তার সবই আমাদের জন্য নতুন একটি মিডিয়া। যে মিডিয়া সবার জন্য স্বাধীন। মানুষ মূলত একা। একটা মানুষ যখন রাতে অথবা দিনে একান্তে তার মনিটরটি সামনে নিয়ে বসে তখন সে নিজের ভেতরের না বলা কথা, দুঃখ, ক্ষোভ, বিশ্বাস, অবিশ্বাসসহ যা মনে আসে তাই প্রকাশ করে। কারণ হয়তো, এর বাইরে মতো প্রকাশের তেমন কোন সুযোগ নেই মানুষটির। এসব কারণেই বৌদ্ধ মন্দির থেকে অপরাজেয় বাংলা, ফেসবুক থেকে ব্লগ পর্যন্ত এখন যাচ্ছেতাই হচ্ছে। রোবায়েত ফেরদৌস আরও বলেন, আমি মনে করি ফ্রিডম ইজ নাথিং, উইদাউট রেসপনসিবিলিটি। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানেই যা খুশি তাই নয়। এই শিক্ষাটা আমাদের মধ্যে এখনও গড়ে ওঠেনি বলেই এমনটা ঘটছে প্রতিনিয়ত। বিশ্লেষকদের মতে ‘স্বাধীনতা এবং আইন’ প্রসঙ্গে ‘সচেতন’ নয় বলেই সমাজে এমন ঘটনা বাড়ছে ক্রমশ। এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের কথা তুলে ধরে বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে ‘নাগরিকের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হয়েছে।’ আপাত দৃষ্টিতে মানুষের প্রতি সংবিধানের এই ‘স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান’-এর মধ্য দিয়ে উপরি-উক্ত বিষয়গুলোর দায়মুক্তি ঘটলেও বাস্তবতা কি তাই? সংবিধানে একই অনুচ্ছেদে এই স্বাধীনতার ব্যাখা হিসেবে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধসাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা অধিকারের এবং সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতা নিশ্চয়তা দান করা হইল।’ অর্থাৎ সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন কোন স্বাধীন মতামত কিংবা কার্যক্রম চালানো যাবে না যার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা, মানহানি কিংবা নৈতিকতার স্বার্থে কারও আঘাত লাগে।
No comments