দক্ষ জনপ্রশাসন গড়ার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার -আকবর আলি খানের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মত
দেশের
জনপ্রশাসন (আমলাতন্ত্র) যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা কোনোভাবেই কাম্য হতে
পারে না। উন্নয়নের জন্য একটি দক্ষ, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক জনপ্রশাসন
অপরিহার্য। সংস্কারের মাধ্যমে তেমন একটি জনপ্রশাসন গড়ে তোলার জন্য
রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিকল্প নেই।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলি খানের সদ্য প্রকাশিত একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনেরা এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। জনপ্রশাসন নিয়ে ইংরেজি ভাষায় লেখা গ্রেশাম’স ল সিনড্রোম অ্যান্ড বিয়ন্ড, অ্যান অ্যানালাইসিস অব দ্য বাংলাদেশ ব্যুরোক্রেসি বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। বইটি প্রকাশ করেছে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বনানীতে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) কার্যালয়ে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে গওহর রিজভী বলেন, জনপ্রশাসনে সংস্কার অবশ্যই দরকার। সে উদ্যোগও সরকারের আছে। প্রায় ছয় বছর আগে তিনি যখন সরকারে যুক্ত হন, তখন প্রথমেই প্রশাসন সংস্কারের লক্ষ্যে ‘সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট’ প্রণয়নে তাঁকে যুক্ত করা হয়। সেটি প্রণয়ন করাও হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন হয়নি।
গওহর রিজভী বলেন, জনপ্রশাসনে মেধাবীরা আসছেন না বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। কথাটি পুরো ঠিক নয়। তবে আগে যেমন শুধু জনপ্রশাসনেই মেধাবী মুখগুলো দেখা যেত, এখন তেমন নয়। কারণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের সুযোগ অনেক বেড়েছে। তাই আগের দিনের বিবেচনায় কথাটি বলা যায় না।
এর আগে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, উন্নয়নের জন্য একটি দক্ষ ও যোগ্য জনপ্রশাসন অপরিহার্য। এমন একটি জনপ্রশাসন গড়তে সংস্কার যেমন জরুরি, তেমনি কাজের জন্য পুরস্কার ও তিরস্কারের বিধানও থাকতে হবে। বর্তমানে জনপ্রশাসনের মোট বেতন-ভাতার ৭৫ শতাংশ ব্যয় হয় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য। এসব বিষয় ভেবে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে রাজনীতিকদেরই।
জনপ্রশাসন সম্পর্কে বেসরকারি খাতের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন শিল্পোদ্যোক্তা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। তিনি বলেন, জনপ্রশাসন বর্তমানে যেমন হয়েছে, তেমন হওয়া কিংবা থাকা উচিত নয়। জনপ্রশাসন যেহেতু রাষ্ট্রের অপরিহার্য অঙ্গ, সেহেতু তাকে উপযুক্ত করে তোলা প্রয়োজন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ ছাড়া এটা সম্ভব নয়।
প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম ও দক্ষতা হারিয়ে জনপ্রশাসন এখন কার্যত পশ্চাৎগতির বাহক (কাউন্টার প্রোডাকটিভ) হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সালাহউদ্দিন মো. আমিনুজ্জামান। তিনি বলেন, দক্ষতার বিচারে বাংলাদেশের জনপ্রশাসনের অবস্থান পাকিস্তান, এমনকি নেপালেরও নিচে। এখানকার নিয়োগপ্রক্রিয়া পুরোনো। পদোন্নতি মেধাভিত্তিক তো নয়ই, পদের বিপরীতেও নয়। অথচ পদোন্নতির জন্য যে প্রতিবেদন তৈরি হয়, তাতে এক হাজার কর্মকর্তার মধ্যে পাঁচজনকে (দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ) বলা হয় পদোন্নতির অযোগ্য।
সালাহউদ্দিন মো. আমিনুজ্জামান একটি সমীক্ষার ফল উল্লেখ করে বলেন, জনপ্রশাসনের মাত্র ৫ শতাংশ কর্মকর্তা দেশের প্রশিক্ষণে সক্রিয় অংশ নেন। অন্যদের দেখলে মনে হয়, যেন তাঁদের জেলে পাঠানো হয়েছে। বিদেশে প্রশিক্ষণ ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে অকার্যকর। কর্মকর্তাদের কাজের সঙ্গে এই প্রশিক্ষণের কোনো সম্পৃক্ততা থাকে না। এই জনপ্রশাসন সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ। এর সংস্কার অতি জরুরি। এ জন্য জোরদার রাজনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে আকবর আলি খান নিজের বই সম্পর্কে বলেন, ৪৭ বছর ধরে ঘনিষ্ঠভাবে দেখা ও সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে এই গ্রন্থ রচিত। জনপ্রশাসনে নিয়োগের বয়স, পদোন্নতির প্রক্রিয়া, কোটা পদ্ধতি, অবসর প্রভৃতি সবকিছুই ভুলভাবে হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। সঞ্চালনা করেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গবেষক মিজানুর রহমান শেলী, সাবেক আমলা আবদুল লতিফ মণ্ডল।
বিএনপির নেতা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, সাবেক সচিব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সাবেক গভর্নর সালেহ্উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষাবিদ হাফিজ জি এ সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী আনিস-উদ্-দৌলা, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ, ইউপিএলের কর্ণধার মহিউদ্দিন আহমেদ, গবেষক ওসমান হায়দার চৌধুরীসহ বিশিষ্টজনেরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলি খানের সদ্য প্রকাশিত একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনেরা এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। জনপ্রশাসন নিয়ে ইংরেজি ভাষায় লেখা গ্রেশাম’স ল সিনড্রোম অ্যান্ড বিয়ন্ড, অ্যান অ্যানালাইসিস অব দ্য বাংলাদেশ ব্যুরোক্রেসি বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। বইটি প্রকাশ করেছে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বনানীতে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) কার্যালয়ে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে গওহর রিজভী বলেন, জনপ্রশাসনে সংস্কার অবশ্যই দরকার। সে উদ্যোগও সরকারের আছে। প্রায় ছয় বছর আগে তিনি যখন সরকারে যুক্ত হন, তখন প্রথমেই প্রশাসন সংস্কারের লক্ষ্যে ‘সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট’ প্রণয়নে তাঁকে যুক্ত করা হয়। সেটি প্রণয়ন করাও হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন হয়নি।
গওহর রিজভী বলেন, জনপ্রশাসনে মেধাবীরা আসছেন না বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। কথাটি পুরো ঠিক নয়। তবে আগে যেমন শুধু জনপ্রশাসনেই মেধাবী মুখগুলো দেখা যেত, এখন তেমন নয়। কারণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের সুযোগ অনেক বেড়েছে। তাই আগের দিনের বিবেচনায় কথাটি বলা যায় না।
এর আগে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, উন্নয়নের জন্য একটি দক্ষ ও যোগ্য জনপ্রশাসন অপরিহার্য। এমন একটি জনপ্রশাসন গড়তে সংস্কার যেমন জরুরি, তেমনি কাজের জন্য পুরস্কার ও তিরস্কারের বিধানও থাকতে হবে। বর্তমানে জনপ্রশাসনের মোট বেতন-ভাতার ৭৫ শতাংশ ব্যয় হয় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য। এসব বিষয় ভেবে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে রাজনীতিকদেরই।
জনপ্রশাসন সম্পর্কে বেসরকারি খাতের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন শিল্পোদ্যোক্তা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। তিনি বলেন, জনপ্রশাসন বর্তমানে যেমন হয়েছে, তেমন হওয়া কিংবা থাকা উচিত নয়। জনপ্রশাসন যেহেতু রাষ্ট্রের অপরিহার্য অঙ্গ, সেহেতু তাকে উপযুক্ত করে তোলা প্রয়োজন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ ছাড়া এটা সম্ভব নয়।
প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম ও দক্ষতা হারিয়ে জনপ্রশাসন এখন কার্যত পশ্চাৎগতির বাহক (কাউন্টার প্রোডাকটিভ) হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সালাহউদ্দিন মো. আমিনুজ্জামান। তিনি বলেন, দক্ষতার বিচারে বাংলাদেশের জনপ্রশাসনের অবস্থান পাকিস্তান, এমনকি নেপালেরও নিচে। এখানকার নিয়োগপ্রক্রিয়া পুরোনো। পদোন্নতি মেধাভিত্তিক তো নয়ই, পদের বিপরীতেও নয়। অথচ পদোন্নতির জন্য যে প্রতিবেদন তৈরি হয়, তাতে এক হাজার কর্মকর্তার মধ্যে পাঁচজনকে (দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ) বলা হয় পদোন্নতির অযোগ্য।
সালাহউদ্দিন মো. আমিনুজ্জামান একটি সমীক্ষার ফল উল্লেখ করে বলেন, জনপ্রশাসনের মাত্র ৫ শতাংশ কর্মকর্তা দেশের প্রশিক্ষণে সক্রিয় অংশ নেন। অন্যদের দেখলে মনে হয়, যেন তাঁদের জেলে পাঠানো হয়েছে। বিদেশে প্রশিক্ষণ ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে অকার্যকর। কর্মকর্তাদের কাজের সঙ্গে এই প্রশিক্ষণের কোনো সম্পৃক্ততা থাকে না। এই জনপ্রশাসন সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ। এর সংস্কার অতি জরুরি। এ জন্য জোরদার রাজনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে আকবর আলি খান নিজের বই সম্পর্কে বলেন, ৪৭ বছর ধরে ঘনিষ্ঠভাবে দেখা ও সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে এই গ্রন্থ রচিত। জনপ্রশাসনে নিয়োগের বয়স, পদোন্নতির প্রক্রিয়া, কোটা পদ্ধতি, অবসর প্রভৃতি সবকিছুই ভুলভাবে হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। সঞ্চালনা করেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গবেষক মিজানুর রহমান শেলী, সাবেক আমলা আবদুল লতিফ মণ্ডল।
বিএনপির নেতা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, সাবেক সচিব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সাবেক গভর্নর সালেহ্উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষাবিদ হাফিজ জি এ সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী আনিস-উদ্-দৌলা, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ, ইউপিএলের কর্ণধার মহিউদ্দিন আহমেদ, গবেষক ওসমান হায়দার চৌধুরীসহ বিশিষ্টজনেরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
No comments