জেএসসির অনলাইন রেজিস্ট্রেশনে ভোগান্তি

সারা দেশে প্রায় ২১ লাখ জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষকরা। বোর্ডের ওয়েবসাইটে ঢুকতে না পারা, প্রয়োজনীয় তথ্য না পাওয়া, হেল্পলাইনে কল রিসিভ না করার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষকরা। তাদের অভিযোগ, বোর্ডের আইটি শাখা অনলাইনে কাজটি বাইরের কোম্পানিকে দেয়ার কারণে এই বিপত্তিতে পড়তে হয়েছে।
শিক্ষকরা তাদের ভোগান্তির কথা জানিয়ে বলেন, এপ্রিল মাসে আমাদের জানানো হয় ৫ থেকে ২১শে মে’র মধ্যে স্কুলের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) শিক্ষার্থীদের অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। বোর্ড তা শুরু ১৫ই মে। শিক্ষকরা জানান, ১৫ই মে বলা হলে আমরা কেউ ওইদিন বোর্ডের ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারিনি। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করতে পেরেছি ১৮ই মে। পূর্বঘোষিত তারিখ অনুযায়ী গতকাল রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হওয়া কথা ছিল। কিন্তু অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনে করা যাচ্ছে না এমন অভিযোগে প্রেক্ষিতে রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ বাড়িয়ে ২৮শে মে করা হয়। শিক্ষকদের অভিযোগ, গত তিনদিন ধরে ডাটা এন্ট্রি তো দূরের কথা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করাই যাচ্ছে না। এই অবস্থা থাকলে আগামী ২৮শে মে মধ্যে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করা কোনভাবেই সম্ভব হবে না।
রাজধানীর বাড্ডার শিল বাড়িরটেক ইসলামিয়া স্কুলের কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষক শরিফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ১৮ই মে থেকে রেজিস্ট্রেশন শুরু হলেও মাত্র দুই দিন কাজ করতে পেরেছি। বাকি দিন ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারেনি। আমাদের স্কুলে ১৫০ ছাত্রের মধ্যে মাত্র ২৬ জনের রেজিস্ট্রেশন করাতে পেরেছি। এই সমস্যার সমধান করতে না পারলে নবম ও একাদশ শ্রেণীর রেজিস্ট্রেশনের একই সমস্যায় পড়তে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন, ফরম পূরণের  জন্য মাধ্যমিক বোর্ডের নিজস্ব সুপার সফটওয়ার রয়েছে। এর আওতায় গত কয়েক বছর অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। এবার এই কাজটি বাইরে একটি সফটওয়্যার কোম্পানিকে দিয়েছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। আর এখানেই বিপত্তি। এই সফটওয়্যার কোম্পানি সারা দেশের কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২১ লাখ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের চাপ নিতে পারছে না। কখনও বন্ধ থাকছে। এতে বিপত্তিতে পড়ছেন শিক্ষকরা। ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু বক্কর সিদ্দিক বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমাদের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এ সমস্যা হয়েছে। এটি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। খুব দ্রুত এটির সমাধান হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
বোর্ড সূত্র জানায়, বোর্ডের সুপার সফটওয়ার থাকার পর কেন বাইরের কোম্পানিকে কাজ দিতে হবে সেটি কারও কাছে পরিষ্কার নয়। এখানে আইটি বিভাগ বোর্ড কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে বাইরের কোম্পানিকে কাজ দিয়েছে। তারা সেখান থেকে কমিশন পেয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
শিক্ষকদের অভিযোগ, বোর্ডের ওয়েবসাইটের দেয়ার  ৫টি মোবাইল নম্বর ও একটি টিএনটি হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে কোন দিন কাউকে পাওয়া যায়নি। কখনও কখনও ফোনগুলোকে ইন-অ্যাকটিভ করে রাখা হয়।
ঢাকা বোর্ডের অনলাইন চালু করেছিলেন রাজীব চৌধুরী নামে একটি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বর্তমানে তিনি আইসিটি মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন। বোর্ডের শুরুর দিকে তার নিজম্ব সুপার সফটওয়্যার দিয়ে বোর্ডের বিভিন্ন শ্রেণীর রেজিস্ট্রেশন, ফরম পূরণসহ অনলাইনের কাজ করে দিয়েছেন। পরবর্তীতে বোর্ড তার নিজস্ব সুপার সফটওয়্যার   তৈরি করেছে।
অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে রাজীব চৌধুরী বলেন, বোর্ডের নিজস্ব যে সুপার সফটওয়্যার আছে তাতে এক সপ্তাহের মধ্যে কোটি শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব। বোর্ডের এতো শক্তিশালী ওয়েবসাইট থাকতে কেন বাইরের কোম্পানিকে এ কাজ দিতে হবে- প্রশ্ন তার।
বনানী বিদ্যা নিকেতন স্কুলের এক শিক্ষক জানান, জেএসজি রেজিস্ট্রেশনে ইলেকট্রনিক ফরমে পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর চাওয়া হয়েছে এবং আইডি নম্বর দিলে পিতা-মাতার নাম অটোমেটিক আসার কথা। সব কিছু দেয়ার পর তা হচ্ছে না। এছাড়া বোর্ডের ওয়েবসাইটে অনেক ধীরগতি। তিনি জানান, তার প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৬০০ জন। কিন্তু মাত্র ১০ জনের ডাটা এন্ট্রি করা সম্ভব হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.