সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনে বেজিংয়ের সহায়তা চাইবে ঢাকা- প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফর সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্রিফিং

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফরে চট্টগ্রাম থেকে ইয়াঙ্গুন হয়ে কুনমিং পর্যনত্ম সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনে বেজিংয়ের সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ।
এছাড়া দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা, সারকারখানা নিমর্াণ এবং সপ্তম মৈত্রী সেতু নিমর্াণ নিয়ে তিনটি চুক্তি স্বাৰরিত হবে। এর বাইরে সড়ক ও রেল অবকাঠামো, কৃষি ও বিনিয়োগ, টেলিযোগাযোগ, বিদু্যত, অষ্টম মৈত্রী সেতু এবং দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নিমর্াণে চীনের সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন সম্পর্কে সরাসরি কোন মনত্মব্য না করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিগত দু'টি সরকারের আমলে দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের প্রাক্কালে রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ সকল তথ্য জানান। চারদিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১৭ মার্চ চীন সফরে যাচ্ছেন। ২০০৯ সালের শুরম্নতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি তাঁর প্রথম চীন সফর। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনা প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও এবং প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাওয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ ছাড়া তিনি ইউনানা প্রদেশের রাজধানী কুনমিং সফর করবেন।
ডা. দীপু মনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের তিনটি চুক্তি স্বাৰরের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই চূড়ানত্ম হয়েছে। চুক্তি তিনটি_ অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা চুক্তি, শাহজালাল সারকারখানা লিমিটেড নিমর্াণের ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি এবং সপ্তম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নিমর্াণ চুক্তি। আরও কয়েটি বিষয়ে দ্বিপাৰিক চুক্তি স্বাৰরের বিষয় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, সড়ক ও রেলযোগাযোগ, টেলিযোগাযোগ এবং পর্যটন খাতে চীনের সহযোগিতা চাইবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করতে চীনের প্রতি অনুরোধ জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বাংলাদেশ-চীন অষ্টম মৈত্রী সেতু নিমর্াণ, ২য় পদ্মা সেতুতে অথর্ায়ন এবং চীনের ন্যাশনাল হাইব্রিড সেন্টারের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে সহযোগিতার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হবে। তিনি জানান, বিদু্যত খাত বিশেষ করে সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের গ্রামীণ শিৰাব্যবস্থার উন্নয়নে চীনের সহযোগিতা চাওয়া হবে। তবে পারমাণবিক বিদু্যত কেন্দ্র নিমর্াণে চীনের সহযোগিতা চাইবে না বাংলাদেশ। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক খাতে দীর্ঘদিনের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বিদ্যমান । ভবিষ্যতেও এই সমর্্পক অব্যাহত থাকবে। তবে জোটনিরপেৰ আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। তিনি বলেন, একটি দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরালো হলে অন্যদের সঙ্গে বৈরিতা হবে, এমন কোন কথা নেই। সকল ৰেত্র সবার সঙ্গে সহযোগিতার এই সম্পর্ককে আমরা কাজে লাগাতে চাই। তিনি বলেন, ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের একইভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে লুক ইস্ট পলিসি গ্রহণ করা হয়েছিল, তবে তা বাসত্মবায়নে কার্যকর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বাংলাদেশ দৰিণ এশিয়া ও দৰিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে চায়। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরকে আমরা বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। এছাড়া চট্টগ্রামে আমরা একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নিমর্াণ করতে চাই। এই বন্দর নিমর্াণ তখনই লাভজনক হবে যখন এর ব্যবহারের জন্য আমরা একটি বড় কায়েন্ট পাব। আর এজন্য বাংলাদেশের চীনের সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি জানান, মিয়ানমারের সঙ্গে বিভিন্ন অমীমাংসিত সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ চীনের সহযোগিতা চাইতে পারে। তিনি জানান, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে দেশটি বিনা শুল্কে বাংলাদেশী পণ্য প্রবেশ এবং বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগের অনুরোধ জানানো হবে। বর্তমানে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দুই দেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিবাদ মীমাংসায় আইনগত পদৰেপের পাশাপাশি দ্বিপাৰিক আলোচনা অব্যাহত আছে। আগামী ১৭ ও ১৮ মার্চ মিয়ানমারের সঙ্গে ষষ্ঠ রাউন্ডের আলোচনা শুরম্ন করবে বাংলাদেশ। এছাড়া ভারতের সঙ্গে বিরোধ মীমাংসায় জাতিসংঘ আরবিট্রেশন কাউন্সিল গঠনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি জানান, আইনগত প্রক্রিয়ায় ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ মীমাংসায় ৪ থেকে ৫ বছর এবং মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ মীমাংসায় দুই থেকে আড়াই বছর সময় লাগবে।
সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির উদ্বেগ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার রৰার ব্যাপারে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার অত্যনত্ম স্বচ্ছ। কোন ৰেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এলে তদনত্ম করার পাশাপাশি তা বন্ধ করার উদোগ্য গ্রহণ করা হচ্ছে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের উদ্বেগ প্রসঙ্গে তিনি সরাসরি কোন মনত্মব্য না করে বলেন, এর সঙ্গে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সংশিস্নষ্টতা রয়েছে। আনত্মঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিবেদনের বস্তুনিষ্ঠতা দেখে আনুষ্ঠানিক মতামত দেয়া হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ২০০১ সালের অক্টোবরের পর থেকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যনত্ম দেশে শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়নি, এ ব্যাপারে অভিযোগ করার অধিকারও কারও ছিল না। তিনি বলেন, এ সময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে না, বিশ্বে এমন কোন দেশ নেই। উন্নত বিশ্বেও মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার আইনের শাসনে বিশ্বাস করে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন করার পাশাপাশি খুনীদের দ- কার্যকর করা হয়েছে। সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার ব্যাপারেও অঙ্গীকারাবদ্ধ। সরকার গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব মিজারম্নল কায়েস, মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রকার অনুবিভাগের মহাপরিচালক সাইদা মুনা তাননিম ও মনিরম্নল ইসলামসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.