সাফল্য- নাটোরের আতিক বিষমুক্ত পেয়ারা চাষ করে তিন বছরে কোটিপতি by মো: শহীদুল হক সরকার
দেশ যখন কীটনাশক ও ফরমালিনে ভাসছে, ঠিক তখন কীটনাশক ও ফরমালিনমুক্ত নিরাপদ
ফল হিসেবে পেয়ারা চাষ করে তিন বছরেই কোটিপতি হয়েছেন নাটোরের যুবক আতিকুর
রহমান আতিক।
উৎপাদিত পেয়ারা কীটনাশক ও ফরমালিনমুক্ত রাখতে
সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনায় তিনি পেয়ার চাষ করছেন। বর্তমানে পেয়ারা
বিক্রি করে প্রতি মাসে তার আয় প্রায় দুই লাখ টাকা।
নাটোর সদর উপজেলার সেনভাগ গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আতিকুর রহমান আতিক জানান, উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ডেন্টাল কোর্স শেষ করেন। তার পরও কোনো কাজ না পেয়ে বেকার ঘুরে বেড়ান। এরই মধ্যে একদিন বাসায় বসে টেলিভিশনে কৃষিবিষয়ক প্রতিবেদন দেখে চাষাবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ নেন। ২০০৯ সালে ১০ বছরের চুক্তিতে ১২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে থাই-৩ জাতের পেয়ারাগাছ লাগান। এ জন্য জমি মালিককে প্রতি বছর বিঘাপ্রতি সাত হাজার টাকা হিসাবে ৮৪ হাজার টাকা দিতে হয়। বাগানের বয়স তিন বছর হয়েছে। প্রতি বছর তার বাগানে শ্রমিকের বেতন, সার, সেচসহ সাত-আট লাখ টাকা উৎপাদন খরচ হয়। বছরে পেয়ারা বিক্রি করে আয় ৩০ লাখ টাকা। প্রতিদিন ২০ কার্টন করে পেয়ারা তোলা হয়। প্রতি কার্টনে ৫০ কেজি করে পেয়ারা রাখা হয়। পেয়ারা বিক্রি হয় কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে। গত তিন বছরে তার বাগানের প্রায় ৯২ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি হয়েছে। ঢাকার ব্যবসায়ীরা তার বাগানেই পেয়ারা কিনতে আসেন। তারা নিজেরাই এখান থেকে পেয়ারা কিনে ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যান। সারা বছরই তার বাগানে পেয়ারা পাওয়া যায়। পেয়ারা উত্তোলনে তার বাগানে ২০-২২ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। তিনি বলেন, কীটনাশক ও ফরমালিনমুক্ত নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের উদ্দেশ্যে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনায় পেয়ারা চাষ করছেন। পাশাপাশি বাগানে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদন করছেন। বাগানে ব্যবহারে উৎকৃষ্ট জৈবসার তৈরির জন্য বাড়িতে গরুর খামার করেছেন। খামারের গরুর গোবর দিয়ে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করে বাড়িতে রান্নার কাজ শেষে ওই গোবর উৎকৃষ্ট সার হিসেবে বাগানে ব্যবহার করছেন। এতে তার খরচও অনেকাংশে কম হচ্ছে।
আতিক বলেন, বাগানের পরিধি বাড়াতে আরো ৫০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে সেখানে ইতোমধ্যে পেয়ারাগাছের চারা বোনা শুরু করেছেন। আতিক জানান, তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। দুই বোনের এক বোনকে অনেক আগেই বিয়ে দিয়েছেন। ছোট বোন আরিফা এলাকার কৃষি কলেজ থেকে ডিপ্লোমা পাস করে ভাইকে এ কাজে সহযোগিতা করছেন।
ঢাকার কারওয়ান বাজারের ফলব্যবসায়ী কিরণ খান জানান, তিনি নিয়মিত আতিকের বাগান থেকে পেয়ারা কিনতে আসেন। কখনো কখনো পেয়ারা কার্টনজাত করে ট্রাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। তার বাগানের পেয়ারা মিষ্টি ও সুস্বাদু। এ ছাড়া কীটনাশক ও ফরমালিনমুক্ত হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে কোনো সমস্যা হয় না। স্থানীয় সেনবাগ লক্ষ্মীকোল গ্রামের কলেজশিক আবদুল হাই জানান, বিদেশে না গিয়েও আতিকুরের মতো ফল চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। বাগানের শ্রমিক সানোয়ার হোসেন ও লিটন জানান, দিন-রাত ভ্যান চালিয়ে তার সংসারের অভাব ঘুচত না। আতিকের পেয়ারা বাগান হওয়ায় সেখানে নিয়মিত কাজ পেয়ে আর অভাব নেই। তিন বছর ধরে বাগানে কাজ করছেন। তার মাসে এখন ছয় থেকে সাত হাজার টাকা আয় হচ্ছে। এই বাগানে প্রতিদিন তার মতো অন্তত ২০-২২ জন শ্রম দিচ্ছেন। এই বাগানে কাজ করে এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন এলাকার অনেকেই।
স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, পেয়ারা চাষের মাধ্যমে কৃষিকাজে আতিকুর রহমান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে সময়মতো সার, সেচ ও পরিচর্যা করে তার বাগানে পেয়ারার ফলন ভালো হয়েছে। বাগানের পরিধি বাড়াতে তাকে সার্বিকভাবে কৃষি বিভাগের প থেকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি মওসুমে নাটোর জেলায় ৩১৭ হেক্টর জমিতে থাই-৩ জাতের পেয়ারা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় রয়েছে ৬০ হেক্টর। গত বছর জেলায় ২৯৭ হেক্টরে থাই-৩ জাতের পেয়ারা চাষ হয়েছিল। এ জাতের পেয়ারার চারা প্রধানত মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য আশ্বিন মাসে বোনা করা হয়। জীবনকাল পাঁচ থেকে ছয় বছর। তবে সঠিক পরিচর্যা করা গেলে এবং গাছে কোনো রোগবালাই না হলে আরো দু-এক বছর পর্যন্ত এ গাছ ব্যবহার করা যায়। সাধারণত রোপণ থেকে ১৬-১৭ মাস পর গাছে ফল ধরে এবং বাজারে তা বিক্রি করা যায়। অতিরিক্ত বর্ষা বাদে সারা বছরই এ জাতের পেয়ারা পাওয়া যায়। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোজদার হোসেন জানান, আতিকের পেয়ারা চাষের সাফল্য দেখে এলাকার অনেকেই পেয়ারা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কৃষি বিভাগের প থেকে চাষিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। নাটোরে পেয়ারা চাষের পরিধি দিন দিন বাড়ছে। তিনি বলেন, এখানকার পেয়ারা ঢাকার মার্কেট দখল করে রেখেছে। ঢাকার বৃহত্তম কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটের চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ নাটোর ও আশপাশের এলাকা থেকে সরবরাহ করা হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক রহমত উল্লাহ সরকার জানান, পেয়ারা একটি দ্রুত বর্ধনশীল গ্রীষ্মকালীন ফল। দেশের সর্বত্র কমবেশি এ ফলের চাষ হয়। তবে থাই-৩ জাতের পেয়ারা সারা বছরই হয়। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে কৃষকেরা অবশ্যই লাভবান হবেন। স্থানভেদে একরপ্রতি ফলন হয় প্রায় দুই টন। খরচ বাদে কৃষকের আয় হয় ৬০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে সেনভাগ গ্রামের আতিক পেয়ারা চাষে সেই দৃষ্টান্ত রেখেছেন। তিনি দেশের বেকার যুবকদের কাছে হতে পারেন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। আতিকের মতো কেউ পেয়ারা চাষে এগিয়ে এলে কৃষি বিভাগ থেকে আধুুনিক প্রযুক্তিগত সব সহযোগিতা দেয়া হবে।
নাটোর সদর উপজেলার সেনভাগ গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আতিকুর রহমান আতিক জানান, উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ডেন্টাল কোর্স শেষ করেন। তার পরও কোনো কাজ না পেয়ে বেকার ঘুরে বেড়ান। এরই মধ্যে একদিন বাসায় বসে টেলিভিশনে কৃষিবিষয়ক প্রতিবেদন দেখে চাষাবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ নেন। ২০০৯ সালে ১০ বছরের চুক্তিতে ১২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে থাই-৩ জাতের পেয়ারাগাছ লাগান। এ জন্য জমি মালিককে প্রতি বছর বিঘাপ্রতি সাত হাজার টাকা হিসাবে ৮৪ হাজার টাকা দিতে হয়। বাগানের বয়স তিন বছর হয়েছে। প্রতি বছর তার বাগানে শ্রমিকের বেতন, সার, সেচসহ সাত-আট লাখ টাকা উৎপাদন খরচ হয়। বছরে পেয়ারা বিক্রি করে আয় ৩০ লাখ টাকা। প্রতিদিন ২০ কার্টন করে পেয়ারা তোলা হয়। প্রতি কার্টনে ৫০ কেজি করে পেয়ারা রাখা হয়। পেয়ারা বিক্রি হয় কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে। গত তিন বছরে তার বাগানের প্রায় ৯২ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি হয়েছে। ঢাকার ব্যবসায়ীরা তার বাগানেই পেয়ারা কিনতে আসেন। তারা নিজেরাই এখান থেকে পেয়ারা কিনে ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যান। সারা বছরই তার বাগানে পেয়ারা পাওয়া যায়। পেয়ারা উত্তোলনে তার বাগানে ২০-২২ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। তিনি বলেন, কীটনাশক ও ফরমালিনমুক্ত নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের উদ্দেশ্যে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনায় পেয়ারা চাষ করছেন। পাশাপাশি বাগানে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদন করছেন। বাগানে ব্যবহারে উৎকৃষ্ট জৈবসার তৈরির জন্য বাড়িতে গরুর খামার করেছেন। খামারের গরুর গোবর দিয়ে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করে বাড়িতে রান্নার কাজ শেষে ওই গোবর উৎকৃষ্ট সার হিসেবে বাগানে ব্যবহার করছেন। এতে তার খরচও অনেকাংশে কম হচ্ছে।
আতিক বলেন, বাগানের পরিধি বাড়াতে আরো ৫০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে সেখানে ইতোমধ্যে পেয়ারাগাছের চারা বোনা শুরু করেছেন। আতিক জানান, তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। দুই বোনের এক বোনকে অনেক আগেই বিয়ে দিয়েছেন। ছোট বোন আরিফা এলাকার কৃষি কলেজ থেকে ডিপ্লোমা পাস করে ভাইকে এ কাজে সহযোগিতা করছেন।
ঢাকার কারওয়ান বাজারের ফলব্যবসায়ী কিরণ খান জানান, তিনি নিয়মিত আতিকের বাগান থেকে পেয়ারা কিনতে আসেন। কখনো কখনো পেয়ারা কার্টনজাত করে ট্রাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। তার বাগানের পেয়ারা মিষ্টি ও সুস্বাদু। এ ছাড়া কীটনাশক ও ফরমালিনমুক্ত হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে কোনো সমস্যা হয় না। স্থানীয় সেনবাগ লক্ষ্মীকোল গ্রামের কলেজশিক আবদুল হাই জানান, বিদেশে না গিয়েও আতিকুরের মতো ফল চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। বাগানের শ্রমিক সানোয়ার হোসেন ও লিটন জানান, দিন-রাত ভ্যান চালিয়ে তার সংসারের অভাব ঘুচত না। আতিকের পেয়ারা বাগান হওয়ায় সেখানে নিয়মিত কাজ পেয়ে আর অভাব নেই। তিন বছর ধরে বাগানে কাজ করছেন। তার মাসে এখন ছয় থেকে সাত হাজার টাকা আয় হচ্ছে। এই বাগানে প্রতিদিন তার মতো অন্তত ২০-২২ জন শ্রম দিচ্ছেন। এই বাগানে কাজ করে এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন এলাকার অনেকেই।
স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, পেয়ারা চাষের মাধ্যমে কৃষিকাজে আতিকুর রহমান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে সময়মতো সার, সেচ ও পরিচর্যা করে তার বাগানে পেয়ারার ফলন ভালো হয়েছে। বাগানের পরিধি বাড়াতে তাকে সার্বিকভাবে কৃষি বিভাগের প থেকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি মওসুমে নাটোর জেলায় ৩১৭ হেক্টর জমিতে থাই-৩ জাতের পেয়ারা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় রয়েছে ৬০ হেক্টর। গত বছর জেলায় ২৯৭ হেক্টরে থাই-৩ জাতের পেয়ারা চাষ হয়েছিল। এ জাতের পেয়ারার চারা প্রধানত মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য আশ্বিন মাসে বোনা করা হয়। জীবনকাল পাঁচ থেকে ছয় বছর। তবে সঠিক পরিচর্যা করা গেলে এবং গাছে কোনো রোগবালাই না হলে আরো দু-এক বছর পর্যন্ত এ গাছ ব্যবহার করা যায়। সাধারণত রোপণ থেকে ১৬-১৭ মাস পর গাছে ফল ধরে এবং বাজারে তা বিক্রি করা যায়। অতিরিক্ত বর্ষা বাদে সারা বছরই এ জাতের পেয়ারা পাওয়া যায়। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোজদার হোসেন জানান, আতিকের পেয়ারা চাষের সাফল্য দেখে এলাকার অনেকেই পেয়ারা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কৃষি বিভাগের প থেকে চাষিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। নাটোরে পেয়ারা চাষের পরিধি দিন দিন বাড়ছে। তিনি বলেন, এখানকার পেয়ারা ঢাকার মার্কেট দখল করে রেখেছে। ঢাকার বৃহত্তম কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটের চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ নাটোর ও আশপাশের এলাকা থেকে সরবরাহ করা হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক রহমত উল্লাহ সরকার জানান, পেয়ারা একটি দ্রুত বর্ধনশীল গ্রীষ্মকালীন ফল। দেশের সর্বত্র কমবেশি এ ফলের চাষ হয়। তবে থাই-৩ জাতের পেয়ারা সারা বছরই হয়। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে কৃষকেরা অবশ্যই লাভবান হবেন। স্থানভেদে একরপ্রতি ফলন হয় প্রায় দুই টন। খরচ বাদে কৃষকের আয় হয় ৬০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে সেনভাগ গ্রামের আতিক পেয়ারা চাষে সেই দৃষ্টান্ত রেখেছেন। তিনি দেশের বেকার যুবকদের কাছে হতে পারেন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। আতিকের মতো কেউ পেয়ারা চাষে এগিয়ে এলে কৃষি বিভাগ থেকে আধুুনিক প্রযুক্তিগত সব সহযোগিতা দেয়া হবে।
No comments