যুদ্ধাপরাধীদের বিচার- এ আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে

বাঙালি জেগে উঠেছে আবার। রাজধানীর শাহবাগে তরুণ প্রজন্মের উদ্যোগে যে প্রতিবাদ সমাবেশ চলছে, তা দ্রুত জাগিয়ে তুলেছে পুরো বাংলাদেশকে। রাজধানী ঢাকা তো বটেই, ঢাকার বাইরে দেশের প্রতিটি শহরে, মফস্বলে আজ নব উদ্যমে জেগে উঠেছে তারুণ্য।
লক্ষ কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে তরুণরা আজ সমস্বরে উচ্চারণ করছে_ 'যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই'। এ কথা সত্য, সাম্প্রতিক অতীতে এ তরুণ প্রজন্মই জোরদার দাবি জানিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি তুলে ধরেছে সর্বাগ্রে। আর এ দাবি বাস্তবায়ন করার জন্য বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে জয়ী করে বিচারের পথও খুলে দিয়েছে তারা। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সরকারও আন্তরিকতা নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরু করেছে। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে এবং ট্রাইব্যুনালের ওপর অর্পিত হয়েছে একাত্তরে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনকারীদের বিচারের গুরুদায়িত্ব। অল্প সময়ের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল আশাব্যঞ্জক সাফল্য দেখিয়েছে। ইতিমধ্যে দু'জনের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। বাকিদের বিচারকাজও এগিয়ে চলেছে। কিন্তু এই বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগী জামায়াত-শিবির চক্র। বিচার প্রক্রিয়ার অগ্রগতির সঙ্গে বেড়েছে তাদের ধ্বংসাত্মক তৎপরতা। তারা মরিয়া হয়ে জ্বালাও-পোড়াও-ভাংচুরের পথ বেছে নিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর চড়াও হয়ে তাদের মারধর করেছে। দেশব্যাপী হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়ে পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হতে পারত, লড়াইটা মোটাদাগে সরকার বনাম জামায়াতের। কিন্তু চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার অপেক্ষাকৃত লঘু দণ্ডের পর লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে সমস্বরে জানিয়ে দিল_ লড়াইটা শুধু সরকার বনাম জামায়াত-শিবিরের নয়, লড়াইটা একাত্তরের বিজয়ী জাতির সঙ্গে পরাজিত পাকিস্তানিদের দোসরদের। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব মানুষ স্বীকার করবেন, খুব প্রয়োজনীয় ছিল তারুণ্যের এ উত্থান। কারণ, দেশব্যাপী জাগ্রত তরুণরা আজ শতকণ্ঠে জানিয়ে দিল_ বিচার প্রক্রিয়ায় সরকার একা নয়, তাদের পাশে মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। আর এ তারুণ্য এ দেশে যুদ্ধাপরাধী সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান দেখতে চায় না। তাদের উত্থানে দেশ ও জাতির পশ্চাৎপদতাও তারা কামনা করে না। আর তাই ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রংপুর, রাজশাহী_ সর্বত্র তরুণরা বেরিয়ে এসেছে ঘর থেকে। কেউ তাদের ডাকেনি। তারা নিজেদের তাগিদেই ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। যোগ দিয়েছে প্রজন্মের মঞ্চে। তরুণরা আজ নেতৃত্বের পতাকা তুলে নিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে প্রকাশ করছেন তাদের কৃতজ্ঞতা ও আশাবাদ। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলো তরুণদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের প্রগতির পথে এ জয়যাত্রাকে স্বাগত জানাচ্ছে। বহুদিন পর বাংলাদেশ বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে নতুন এক দৃশ্য দেখছে। নতুন আশায় বুক বাঁধছে জাতি। আজ প্রগতিশীল, অগ্রসরমান ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের যে স্বপ্ন নতুন করে জাগ্রত হলো, তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বাস্তবের দিকে। তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে গঠনমূলক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে। সবাই চায় যুদ্ধাপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। আজ তারুণ্য জানিয়ে দিল, এর বিকল্প নেই। তবে তারুণ্যের এ বিক্ষোভকে গঠনমূলক পরিণতি দিতে হলে আন্দোলন ও ক্ষোভকেও সংগঠিত করতে হবে। কোনো বিশৃঙ্খলা যাতে আন্দোলনকে স্পর্শ করতে না পারে, কোনো পিছুটান যাতে আন্দোলনের গতিকে কমাতে না পারে, সেদিকেই সবার দৃষ্টি থাকুক। তারুণ্যের দাবি বাস্তবায়িত হোক, দেশ হোক কলঙ্কমুক্ত_ এটাই আজ পুরো বাংলাদেশের চাওয়া।

No comments

Powered by Blogger.