সাহসিকতার পুরস্কার কী by মানিক রহমান
ক'দিন আগেও আমরা শরীফুলকে চিনতাম না।
অবশ্য তাকে চেনার মতো কোনো কারণও ছিল না। কেউ কেউ নিশ্চয়ই চিনতেন তাকে। তবে
শরীফুলের সঙ্গে আমাদের অধিকাংশেরই হয়তো পরিচয়ের সূত্র অভিন্ন। আমরা তাকে
এমন সময় চিনলাম, যখন সে চিরদিনের জন্য দুনিয়ার মায়া ছেড়ে চলে গেছে।
যদিও
তার এই প্রস্থানটাই তাকে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। পুলিশের এসআই
শরীফুল ইসলামকে এখন কে না চেনেন! যিনি তার পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে
চোরদের হামলায় নিহত হয়েছেন। সমকালসহ দেশের প্রায় প্রতিটি জাতীয় দৈনিকে
গুরুত্ব সহকারে তার ছবিসহ সংবাদটি ছাপা হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে গত রোববার সকালে
রাজধানীর অদূরে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায়। চোরাই ট্রান্সফরমার ভরা ট্রাক তাড়া
করতে গিয়ে চোরদের আঘাতে প্রাণ হারান এই পুলিশ কর্মকর্তা। অপারেশন টিমে মোট
চৌদ্দজন থাকলেও আমরা কেবল তাকেই পেলাম, যিনি কি-না ধাওয়া করা নিজেদের
মাইক্রোবাস ছেড়ে চোরদের ট্রাক থামানোর জন্য ট্রাকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন।
ট্রাকের হাতল ধরে ঝুলে ড্রাইভারকে থামানোর চেষ্টা করেন। চালকের সঙ্গে
ধস্তাধস্তি করেও শেষ পর্যন্ত তিনি কুলিয়ে উঠতে পারেননি। চোরের দল তার মাথায়
আঘাত করলে নিচে পড়ে তিনি মারা যান।
এসআই শরীফুলের এই মৃত্যুর মাধ্যমে আমরা তাকে আবিষ্কার করলাম একজন নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে; দেখলাম দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি কতটা অকুতোভয়; জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় তিনি কতটা তৎপর; জীবন বাজি রেখে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে তিনি কতটা প্রস্তুত। তার এ পরিচয়ের সত্যায়ন করেছেন পুলিশের আইজি। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, শরীফুল একজন সাহসী পুলিশ অফিসার ছিলেন। বিভিন্ন অভিযানে সাহসিকতার জন্য বিভিন্ন পুরস্কারও পেয়েছিলেন।
এর বাইরে তার আরেকটি পরিচয় আমরা পেয়েছি। তিনি লেখক। গল্প-কবিতাসহ নানা বিষয় তিনি লিখতেন। ইতিমধ্যে তার কয়েকটি বইও বাজারে রয়েছে। এমনকি এ বছরও একটি বই চলতি বইমেলায় বের হওয়ার কথা ছিল। গল্প-কবিতা ডটকম নামে গল্প-কবিতার একটি ব্লগে তিনি নিয়মিত লিখতেন। সেখানে সম্প্রতি পোস্টকৃত তার 'বাংলা হবে বিশ্বভাষা' পোস্টটি যে কেউ দেখতে পারেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লেখালেখির প্রতি তার এ অনুরাগ বলাই বাহুল্য।
সবকিছু ছাপিয়ে তার যে পরিচয়টি বড় হয়ে উঠছে সেটা হলো, তিনি একজন পিতা। আদরের দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে তার। যারা বলা চলে শিশু। কারও বয়সই ৮ বছরের বেশি নয়, যাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন তিনি। স্বপ্ন দেখতেন মেয়েদের ডাক্তারি পড়াবেন। তার আরেকটি সন্তান দুনিয়ায় আসার অপেক্ষায়। সন্তানদের নিয়ে তিনি কত না স্বপ্ন দেখতেন! মৃত্যুর মাধ্যমে কি তার স্বপ্নেরও অবসান ঘটবে? তার প্রিয়তমা স্ত্রীর এ উত্তর কে দেবে? স্ত্রীর চোখে এখন দুনিয়াটা হয়তো কেবলই আঁধার। যে সন্তানরা এখনও বোঝেনি মৃত্যু কী; বোঝেনি বাবার আদর কাকে বলে; জানে না বাবা কোথায় গেছে আর তাদেরই বা কী হবে!
পুলিশ বাহিনী জাতির নিরাপত্তার সেবক। রাষ্ট্রের জনগণের সেবা করাই তাদের কাজ। তাদের মধ্যে যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে এ দায়িত্ব পালন করেন, তাদের দেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তারা যদি নিজেদের কর্মের যথাযথ স্বীকৃতি না পান, তাদের মনোবল ভেঙে পড়বে। আর যারা এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ দেবেন, তাদের যথাযথ পুরস্কার প্রদানও রাষ্ট্রীয় কর্তব্য। এ রকম একজন বীর শরীফুল ইসলামেরও যথাযথ সম্মান যেন সরকার দেয়। পরিবারকে কিছু টাকা দিয়ে যেন দায়িত্ব শেষ না করে। সরকার যদি তাদের পরিবারের ভার না নেয়; তাদের দেখার আর কে আছে? শরীফুলের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সরকারকেই করতে হবে।
এসআই শরীফুলের এই মৃত্যুর মাধ্যমে আমরা তাকে আবিষ্কার করলাম একজন নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে; দেখলাম দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি কতটা অকুতোভয়; জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় তিনি কতটা তৎপর; জীবন বাজি রেখে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে তিনি কতটা প্রস্তুত। তার এ পরিচয়ের সত্যায়ন করেছেন পুলিশের আইজি। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, শরীফুল একজন সাহসী পুলিশ অফিসার ছিলেন। বিভিন্ন অভিযানে সাহসিকতার জন্য বিভিন্ন পুরস্কারও পেয়েছিলেন।
এর বাইরে তার আরেকটি পরিচয় আমরা পেয়েছি। তিনি লেখক। গল্প-কবিতাসহ নানা বিষয় তিনি লিখতেন। ইতিমধ্যে তার কয়েকটি বইও বাজারে রয়েছে। এমনকি এ বছরও একটি বই চলতি বইমেলায় বের হওয়ার কথা ছিল। গল্প-কবিতা ডটকম নামে গল্প-কবিতার একটি ব্লগে তিনি নিয়মিত লিখতেন। সেখানে সম্প্রতি পোস্টকৃত তার 'বাংলা হবে বিশ্বভাষা' পোস্টটি যে কেউ দেখতে পারেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লেখালেখির প্রতি তার এ অনুরাগ বলাই বাহুল্য।
সবকিছু ছাপিয়ে তার যে পরিচয়টি বড় হয়ে উঠছে সেটা হলো, তিনি একজন পিতা। আদরের দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে তার। যারা বলা চলে শিশু। কারও বয়সই ৮ বছরের বেশি নয়, যাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন তিনি। স্বপ্ন দেখতেন মেয়েদের ডাক্তারি পড়াবেন। তার আরেকটি সন্তান দুনিয়ায় আসার অপেক্ষায়। সন্তানদের নিয়ে তিনি কত না স্বপ্ন দেখতেন! মৃত্যুর মাধ্যমে কি তার স্বপ্নেরও অবসান ঘটবে? তার প্রিয়তমা স্ত্রীর এ উত্তর কে দেবে? স্ত্রীর চোখে এখন দুনিয়াটা হয়তো কেবলই আঁধার। যে সন্তানরা এখনও বোঝেনি মৃত্যু কী; বোঝেনি বাবার আদর কাকে বলে; জানে না বাবা কোথায় গেছে আর তাদেরই বা কী হবে!
পুলিশ বাহিনী জাতির নিরাপত্তার সেবক। রাষ্ট্রের জনগণের সেবা করাই তাদের কাজ। তাদের মধ্যে যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে এ দায়িত্ব পালন করেন, তাদের দেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তারা যদি নিজেদের কর্মের যথাযথ স্বীকৃতি না পান, তাদের মনোবল ভেঙে পড়বে। আর যারা এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ দেবেন, তাদের যথাযথ পুরস্কার প্রদানও রাষ্ট্রীয় কর্তব্য। এ রকম একজন বীর শরীফুল ইসলামেরও যথাযথ সম্মান যেন সরকার দেয়। পরিবারকে কিছু টাকা দিয়ে যেন দায়িত্ব শেষ না করে। সরকার যদি তাদের পরিবারের ভার না নেয়; তাদের দেখার আর কে আছে? শরীফুলের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সরকারকেই করতে হবে।
No comments