সাদার মধ্যে হাল্কা গোলাপি_ বিরল অর্কিড- সৈয়দ সোহরাব
ফুল ছোট দু'অৰরের একটি শব্দ, অথচ কত না
ব্যঞ্জনা তার। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে যার আগমন ভিন্ন ভিন্ন রূপে।
জন্ম-মৃতু্যতে, মিলনে-বিরহে, অভিমান-অভিবাদনে, উৎসবে_এমনই কত কিছুতে রয়েছে
এই ফুলের ব্যবহার।
শীতের শুষ্কতা সরিয়ে প্রকৃতি যখন মেতে
ওঠে নতুন রঙে, তখনই আসে বসন্ত। গাছের শুকনো ডালে ভেসে ওঠে জীবনের ছবি। কচি
সবুজ পাতার চামর দুলিয়ে প্রকৃতি গেয়ে ওঠে নতুন গান। আলো করে ফুটে ওঠে
বাহারি রঙের নানা ফুল। বর্ষার ফুলের যেমন থাকে স্নিগ্ধ সাদা রূপ, বসন্তের
ঠিক তার উল্টো। এ সময় অজস্র বর্ণের ছটায় প্রকৃতির উচ্ছলতার স্বরূপ ফুটিয়ে
তোলে ফুল। লাল, হলুদ, বেগুনী, গোলাপি হাজার রঙের জাদুতে হেসে-খেলে ওঠে
পৃথিবী। সবুজ হচ্ছে প্রকৃতির প্রাণ, আর এই সবুজের হাত ধরে যখন ফুলেরা এসে
দাঁড়ায়, তখন তা হয়ে ওঠে আরও জীবন্ত। নগরীর কর্কশতায় এই সবুজ বসন্তই ছড়িয়ে
দিয়ে যায় রঙের জাদু। গাঁদা, গোলাপ, চন্দ্রমলিস্নকা, কসমস, ফক্স,
ক্যালেন্ডুলা, অর্কিড প্রভৃতি দেশী-বিদেশী রঙিন ফুলে তখন জেগে ওঠে শহরের
বাগান ও বাসাবাড়ি। চেনা-অচেনা ফুলের সৌন্দর্যে মেতে ওঠে নগরবাসীও।
অর্কিডের এমনই এক অচেনা ফুল দেখা গেল হলিক্রস স্কুল এ্যান্ড কলেজের ভাইস
প্রিন্সিপাল রীনা দাসের তেজকুনীপাড়ার বাড়িতে। রীনা দাস বোটানির শিৰক হয়ে
তিনিই বলছেন এটা বিরল প্রজাতির অর্কিড। বাংলাদেশে সচরাচর যেসব অর্কিড দেখা
যায়, তার মধ্যে এই অর্কিড ফুলটি তিনি আগে কখনও দেখেননি। তিনি আরও বলেন,
বাংলাদেশে অর্কিডেসিয়া গোত্রের প্রায় ২০০ প্রজাতি রয়েছে। তার বেশির ভাগই
ডনড্রবিয়াম (উবহফৎড়নরঁস), ভেনডা (ঠধহফধ), ইউলোফিয়া (ঊঁষড়ঢ়যরধ), এ্যারেডিস
(অবৎবফরং), লুইসা (খঁরংধ) ও বুলবোফিলাম (ইঁষনড়ঢ়যুষষঁস) গণের (পর্ব)
অন্তভুক্ত। এই ফুলটি এদের অন্তভুক্ত কিনা এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন বলেও
জানান। সারা বছর অর্কিডে ফুল ফুটলেও, জানুয়ারি-জুন হলো ফুল ফোটার সময়। তবে
সর্বাধিক ফুল ফোটে মর্াচ-এপ্রিলে। তাঁর অর্কিডেও ফুল ফুটেছে মার্চের
শুরুতেই। তিনি আরও বলেন, অর্কিড হলো পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ। গাছের কুঠরিতে বা কোন
কিছুর আশ্রয়ে বেড়ে ওঠে এরা। শীতলতম অঞ্চল ছাড়া গোটা বিশ্বে অর্কিড
বিসত্মৃত। আদ্র-ক্রান্তীয় এলাকাতেই এদের অধিক বেড়ে ওঠা। তবে পরাশ্রয়ী
সদস্যরা প্রধানত ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে, আর ভূমিজ প্রজাতিগুলো
নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে বেশ ভাল বেড়ে ওঠে। এরা নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে
পারে। তবে এদের বর্ণাঢ্য পুষ্পপটসহ বাঁকানো গড়ন অর্কিড ফুলের আকর্ষণীয়
বৈশিষ্ট্য। তাঁর বাড়ির অর্কিড গাছটি প্রসঙ্গে বলেন, এটি তাঁর ননদ জুথিকা
মালাকারের (বরিশালের জোবারপার গ্রাম, থানা-আগলঝরা) বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছেন
তাঁর স্বামী ন্যাথানিয়েল দাস। অর্কিডটিকে তিনি একটি কাঠের পাত্রে রোপণ করে
দেয়ালে ঝুলিয়ে দিয়েছেন। দিনে শুধু একবার পানি দেন। চার বছর আগে নিয়ে আসা এই
অর্কিডটিতে এবার নিয়ে তিনবার ফুল ফুটল। লম্বা একাধিক পুষ্পমঞ্জরি গজায় এই
অর্কিড উদ্ভিদটিতে। পাতা ঝরে গিয়ে লম্বা হতে থাকে পুষ্পমঞ্জরি, আর তাতে
ফুটতে থাকে অসংখ্য ফুল। পুষ্পমঞ্জরির ওপর থেকে নিচ পর্যনত্ম পুরোটাই ছোট্ট
আকারের অসংখ্য ফুলে সজ্জিত। ফুলের রং সাদার মধ্যে হাল্কা গোলাপি।
No comments