মোল্লার কল্লার জন্য যুদ্ধ by মমতাজউদদীন আহমদ

ট্রাইব্যুনালের রায় হয়েছে। বড় মনোরম রায়। সাড়ে তিনশ' নিরীহ নিষ্পাপ নর-নারীর কল্লা কাটা মোল্লা সাহেবের কল্লা কাটার রায় হয়নি। সাড়ে তিনশ' জীবন হত্যার জন্য মোল্লা সাহেবের যাবজ্জীবন কারাগার হয়েছে। যাক, মোল্লার কল্লা তাহলে কাটা হবে না।
মোল্লা কারাগারে থাকবেন, সশ্রম কারাবাস কি-না তা খোলাসা করা হয়নি। সশ্রম হলেও তাকে দিয়ে চাকু-ছোরা শান দেওয়ার কাজ করানো হবে বলে মনে করা যায়। তাছাড়া মোল্লা সাহেব কারাগারে আর থাকবেনই কয়দিন। তার দলবলের যে হৈহল্লা চালু হয়েছে, গাড়ি ভাঙছে, আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াচ্ছে, জ্বালাও-পোড়াও চলছে চলবে_ এমনি করে একদিন মহাশক্তিধর দেশ আর ওয়াহাবি শক্তির মরুভূমি অঞ্চল ছুটে এসে মোল্লা সাহেবকে খালাস দিয়ে গলায় মোটা মোটা গাঁদার মালা ঝুলিয়ে রাজপথ ঘোরাবে। মোল্লার কল্লা যাওয়া অত সহজ নয়। মোল্লা বড় শক্তিধর। না হয় আরও উপায় আছে। এখন থেকে মোল্লা সাহেবের নানা ধরনের ব্যামো দেখা দেবে। নাকের মধ্যে ফুসকুড়ি হবে, কিডনি কামড় দেবে, বুকে ধরফড় করবে_ তাই মোল্লা সাহেব কারাবাস ছেড়ে হাসপাতাল বাসে চলে আসবে। মোল্লাকে দেখভাল করার জন্য মেলা ব্যাংক আছে, বীমা আছে, উকিল আছে, ব্যারিস্টার আছে।
মোট কথা, মোল্লা নিজে কল্লা কাটবে কিন্তু কল্লা দেবে না। তার কল্লার দাম হীরা-মানিকের দাম। এ কল্লা খোদ আল্লাহতালার বিশেষ দূত গড়ে দিয়েছে। এ কল্লায় দড়ি পড়বে না। কার হিম্মত আছে যে, মোল্লাকে ঝুলিয়ে দেয়। মোল্লারা মনে করে দুনিয়াতে পাকি ভূমিই একমাত্র ভূমি। এমন পবিত্র জমিন দুনিয়া জাহানে আর কোথাও নেই। পাকি ভূমি ছাড়া মোল্লার জান বড় আইঢাই করে। মোল্লা মওদুদির পোষ্যপুত্র। মোল্লার মতো নেকবান্দা দুনিয়া জাহানে আর নাই। বাঙালি তো কিছু বুঝে না, বাঙালি পাপ-পুণ্যের বিচারে অক্ষম। একমাত্র মোল্লারাই জানে পুণ্য কী আর পাপ কী? আহারে মানুষ, তোমরা কাদের মোল্লার কদর জানো না। তোমরা কখনোই বেহেস্তে যেতে পারবে না। মোল্লা তোমাদের সেখানে যাওয়ার সার্টিফিকেট দেবে না। তোমরা দোজখের আগুনে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে দিনরাত ইয়ানাফসি ইয়ানাফসি করে মাতম করবে। বাঙালির কপালে আরও মাতম আছে। এই মাতম থামানোর শক্তি কেবল মোল্লাদের আছে। পরম করুণাময়ের কাছ থেকে মোল্লা কাদেররা এই নসিব সংগ্রহ করেছে। অতএব মোল্লাকে ফাঁসিতে যেতে দেওয়া হবে না।
মোল্লা তো কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হুঙ্কার দিয়ে বলেছে, রোজ কেয়ামতের দিন বিচারকের বিচার সে দেখে নিয়ে ছাড়বে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে সারা বাংলায় আগুন জ্বলে উঠেছে। বাংলার চিত্তজুড়ে যে আগুন সে আগুন দেশের সর্বপ্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলা চায় মোল্লাদের ফাঁসি। কিন্তু কিছু কিছু বাঙালি নামধারী মুখোশ পরা ছলনাকারী মোল্লাদের কল্লা রক্ষার জন্য তলে তলে মহাশক্তিধরের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। মোল্লাদের মতো পুণ্যবানদের বাঁচাতে না পারলে তাদের আরাম হারাম হয়ে যাবে।
মহাশক্তিমানরা তো এই রকম কিছু আহ্বানের সুযোগের অপেক্ষায় আছে। ওরা আসবে। ত্বরিতে আসবে। বঙ্গোপসাগরের তেলের ভাণ্ডারে হাত ঢুকিয়ে দেবে। বাংলাকে চিরতরে বঞ্চিত করে সেই তেলের ভাণ্ডার পাইপলাইন দিয়ে আটলান্টিকের ওপারে চলে যাবে। মোল্লারা, মোল্লার জানের জিগররা খুশিতে ডগমগ হয়ে ন্যাংটো হয়ে নাচবে। মোল্লারা পাকি দোস্তদের কোমর ধরে মুরগির ঠ্যাং খাবে। মোল্লাদের কত সুখ। আর চিরকালের বঞ্চিত সরল বাঙালিরা অসহায় তাকিয়ে কেবল কড়ে আঙুল চুষবে।
আমরা চাইছি মোল্লার কল্লা আর তারা চাইছে মোল্লার মসলা। খেলা তবে জমে উঠেছে। আরও জমবে। সবে তো শুরু। তবে কি মোল্লার পবিত্র কল্লার জন্য আবার মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে। হ্যাঁ হবে। এ ছাড়া ভিন্ন পথ নেই। মোল্লাদের হাত অনেক গভীরে। সেই হাতকে ভেঙে খান খান করার জন্য আবার বাঙালিকে জাগ্রত হতে হবে। আবার রক্তপাত। অনেক রক্ত। ভয় কী? কাকে ভয়? বাংলার ইতিহাস তো রক্তের ইতিহাস। বাঙালি তবে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। আবার যুদ্ধ, এবার মোল্লার কল্লার জন্য যুদ্ধ। তোমাদের যার যা আছে, তাই নিয়ে মোল্লাদের মোকাবেলা করতে হবে।

মমতাজউদদীন আহমদ :শিক্ষাবিদ নাট্যব্যক্তিত্ব

No comments

Powered by Blogger.