কৃতজ্ঞ বান্দাকে আল্লাহ ভালোবাসেন by মুফতি এনায়েতুল্লাহ

আল্লাহতায়ালা কর্তৃক প্রদত্ত যাবতীয় নিয়ামতের শোকরিয়া আদায় তথা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন হচ্ছে এমন একটি কাজ, যা আল্লাহতায়ালা ভালোবাসেন। যে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে না আল্লাহ তার মুখাপেক্ষী নন। বরং শোকরিয়া আদায়ে রয়েছে প্রভূত কল্যাণ। কৃতজ্ঞতা মানব চরিত্রের এক উত্তম গুণ।
এ মহৎ গুণ মানুষকে সমাজে শ্রেষ্ঠত্বের আসন দিয়ে থাকে। ইহকালীন শান্তি, নিরাপত্তা ও পরকালীন জীবনে শান্তি ও অফুরন্ত নিয়ামত লাভের জন্য এই গুণ অর্জন করা একান্ত প্রয়োজন।
কৃতজ্ঞতার অপরিসীম তাৎপর্য রয়েছে। মানুষ আল্লাহতায়ালার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তিনি মানুষের প্রতি অগণিত নিয়ামত দান করেছেন। অতএব মানুষের কর্তব্য এ নিয়ামতরাজির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। মানুষ হিসেবে সর্বাবস্থায় আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে আল্লাহতায়ালার দরবারে। কেননা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও সচ্ছলতা_ সবই আল্লাহতায়ালার দান। অপরদিকে দুঃখ-কষ্ট, আপদ-বিপদ, এমনকি ক্ষয়ক্ষতিও তার সৃষ্টি। কৃতজ্ঞতা প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, 'যদি তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর তবে অবশ্যই তার নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, যা তিনি তোমাদের দান করেছেন।' তিনি আরও বলেন, 'তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না।' _সূরা বাকারা। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ মনকে প্রশান্ত করে তোলে। চিন্তার জগতকে বদলে দেয়। আল্লাহতায়ালা কর্তৃক অগণিত নিয়ামত আমরা অকাতরে ভোগ করছি। আমরা কি পেরেছি তার প্রতি যথাযথ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে? অনেকেই মনে করেন, কৃতজ্ঞতা আদায়ের অর্থ হলো, শুধু মুখে আলহামদুলিল্লাহ উচ্চারণ করা। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। সত্যিকারের কৃতজ্ঞতা হলো, আল্লাহতায়ালার সব বিধান মেনে বর্তমান কাজ ও অবস্থানের ওপর সন্তুষ্ট থাকা।
শারীরিকভাবে আমরা কান, চোখ, জিহ্বা, হাত, পা, রগ, হাড্ডি ও স্নায়ুর সুবিধা ভোগ করছি। কিন্তু এসব কোন কাজে ব্যবহার করার কথা আর আমরা কোন কাজে ব্যবহার করছি তা ভাবছি না। আমরা আল্লাহ প্রদত্ত নানা ধরনের খাবার খাচ্ছি। প্রকৃতির মনোরম ও সুন্দর দৃশ্য দেখে রোমাঞ্চিত হচ্ছি। পাহাড়-মরুভূমি, বন-জঙ্গল, নদী-নালা, বিভিন্ন ফল ও শস্যদানা, শাকসবজি ছাড়াও আরও অনেক নিয়ামত দ্বারা উপকৃত হচ্ছি। এসব নিয়ামতের মহত্ত্ব কী শুধু একটি বাক্য আলহামদুলিল্লাহ বলেই শেষ হয়ে যাবে? আল্লাহতায়ালা কি শুধু এভাবে মুখের বুলিতেই সন্তুষ্ট?
বস্তুত আল্লাহতায়ালা মানুষকে এসব উপকরণ দিয়েছেন_ যেন মানুষ এসব উপায়-উপকরণ ভোগ করে দুনিয়ায় আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয়। ইবাদত-বন্দেগিতে আত্মনিয়োগ করে পরকালীন সফলতা অর্জন করতে পারে। নিজেকে ইসলাম, মুসলমান ও মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত করতে পারে। হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করতে পারে। এসব কাজই হলো সত্যিকারের কৃতজ্ঞতা আদায়।
মানুষ হিসেবে আমরা নিজের দিকে না তাকিয়ে অন্যের দিকে তাকাতেই বেশি স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করি। অন্যের কী আছে, অন্যে কী বলল, কীভাবে চলল, কী করল_ এ নিয়েই বেশি ভাবি। কিন্তু অন্যের দিকে তাকাতে গিয়ে নিজের কী আছে সেটা ভুলে যাই। অন্যের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। আপনাকে তাকাতে হবে নিজের দিকে। যত নিজের দিকে তাকাবেন ততই বিস্মিত হবেন। দেখবেন যাদের সাফল্য আপনাকে ক্ষণিকের জন্য হলেও ঈর্ষান্বিত করে তোলে_ তাদের প্রাপ্তির পেছনের সব উপকরণই রয়েছে আপনার মাঝে। এই প্রাপ্তি ও অবস্থানের জন্য আপনাকে অবশ্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে।
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় সেজদায় লুটিয়ে পড়ূন। ভাবুন, আল্লাহ আপনার মতো আর কাউকে সৃষ্টি করেননি। তিনি আপনাকে এমন কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য ও মেধা দিয়েছেন যা আর কাউকে দেননি। এরপরও কি আপনি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হবেন না? আপনি কেন কৃতজ্ঞ হবেন না? আপনি কী ভেবেছেন_ আপনি এখন শ্বাস নিতে পারছেন, এখনও বেঁচে আছেন। এটাই হতে পারে কৃতজ্ঞতা আদায়ের অন্যতম কারণ। আপনি বেঁচে আছেন_ মানে আপনার সুযোগ রয়েছে কাজে-কর্মে ইহকাল ও পরকালের সফলতার পাথেয় অর্জনের।
আপনি কৃতজ্ঞতাপ্রবণ হলে আপনার যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবেন। নিজের সাফল্যে বিনয়ী হবেন। অন্যের সাফল্যে আনন্দিত হবেন। অন্যের বিপদ আপনাকে সমব্যথী করে তুলবে। দুঃসংবাদ ও দুর্দিনেও ভাববেন_ আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। কোনো প্রশংসা বা নিন্দা আপনাকে প্রভাবিত করবে না। অনিচ্ছাকৃত ভুলে অনুতপ্ত হবেন। এভাবেই আপনার মনের প্রশান্তি চারপাশের মানুষকে আকৃষ্ট করবে, আপনার সংস্পর্শ অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে। এসব আচরণ হলো কৃতজ্ঞতা আদায়ের প্রকাশ মাত্র।
আরেকটি কথা, প্রবাদে আছে_ যে মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করে না। তাই আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায়ের পাশাপশি মানুষের কৃতজ্ঞতাও আদায় করুন। এ বিষয়ে হাদিসেও বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে।
এটা উম্মতকে নবী করিম (সা.) শিখিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে_ হজরত উসামা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'তোমার প্রতি যদি কেউ কৃতজ্ঞতার আচরণ করে তখন যদি তুমি তাকে জাযাকাল্লাহু খাইরান (আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন) বল, তাহলেই তুমি তার যথাযোগ্য প্রশংসা করলে।' _তিরমিযি।
muftianaet@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.