রফতানির সব দুয়ার বন্ধের পথে by জিয়াউল হক মিজান
এক অর্থবছরে ২৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি। কেবল তৈরী পোশাক রফতানি করেই
বছরে ২০ বিলিয়ন ডলার আয়। স্বল্পোন্নত বিশ্বের দেশ হয়েও পোশাকের
বিশ্ববাজারে দ্বিতীয় স্থান দখল।
আগের বছরের চেয়ে
রফতানিতে ৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। রফতানি বাণিজ্যে বাংলাদেশের অনুকূলে এগুলোর
সবই অতীত ঐতিহ্য। গত কয়েক মাসে পাল্টে গেছে পুরো দৃশ্যপট। এককভাবে
সর্ববৃহৎ বাজার আমেরিকা ইতোমধ্যেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ইউরোপিয়ান
ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারও হারানোর পথে। চীন, জাপান, কোরিয়া, ভারতের মতো
প্রত্যাশিত নতুন বাজারেও তেমন সুসংবাদ নেই। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে
বাংলাদেশী পণ্য রফতানির সব দুয়ারই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে
বিশেষজ্ঞদের ধারণা। সরকারের একরোখা মনোভাব এবং বিশ্ব দরবারে প্রকৃত
বন্ধুহীন হয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে তারা মনে
করেন।
গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে মোট ২৪ দশমিক ৩০২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিদেশে রফতানি হয়েছে। এর ৫৮ শতাংশই গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয়। এককভাবে আমেরিকায় রফতানি হয়েছে ২৭ শতাংশ পণ্য। কানাডায় রফতানির পরিমাণ পাঁচ শতাংশের মতো। বাকি ১০ শতাংশ পণ্য রফতানি হয়েছে অপরাপর দেশগুলোয়। ব্রাজিল, চিলি, পেরু, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্য, তুরস্ক, চীন, জাপান, কোরিয়া, ভারত প্রভৃতি বাজারে বর্তমানে যে পরিমাণ রফতানি হচ্ছে তা মোটেই উল্লেখ করার মতো নয়। এ অবস্থায় সরকারের একরোখা মনোভাবের কারণে ইউরোপ-আমেরিকার বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাংলাদেশের রফতানি খাত এবং এর ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা শিল্পসংশ্লিষ্ট কয়েক কোটি মানুষ ফতুর হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এমন একটি পর্যায়ে যেতে বসেছে, যেখানে জাতির অর্থনীতি ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাদের মতে, ড. ইউনূস ইস্যুতে বাংলাদেশ সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি কিনটনকে মুখের ওপর ‘না’ করে দেয়া, শ্রমিকনেতা আমিনুল ইসলামের হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে সরকারের অহেতুক গড়িমসি, টিকফা চুক্তিতে অসম্মতি এবং সবশেষ রাশিয়ার সাথে করা অস্ত্র ও পারমাণবিক চুক্তির কারণে দেশটির সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ইতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এ ক্ষেত্রে তাজরিন ফ্যাশনসের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, কর্মস্থলে শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতা, ইপিজেডগুলোয় শ্রমিক ইউনিয়ন চালুর ব্যাপারে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনগুলোর তৎপরতা, পদ্মা সেতু দুর্নীতি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি প্রভৃতি ইস্যুকে বাংলাদেশকে চাপ দেয়ার মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে হাতের কাছে পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার প্রাপ্তির জন্য এক যুগ ধরে চলমান প্রচেষ্টার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন আর কারো তেমন মাথাব্যথা নেই। কারণ, মোট রফতানির মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ বাংলাদেশী পণ্য যে জিএসপি সুবিধা দীর্ঘ দিন ধরে ভোগ করে আসছিল সেটিও মার্চের পর আর থাকছে না। আমেরিকার পথ ধরে বাংলাদেশের জন্য দরজা বন্ধ করতে যাচ্ছে ইইউভুক্ত দেশগুলোও। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ইইউভুক্ত দেশগুলো যেখানে এত দিন অস্ত্র ছাড়া সব পণ্যে (ইবিএ) শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দিয়ে আসছিল সেই ইইউ পার্লামেন্টে গত সপ্তাহে জোর দাবি ওঠে বাংলাদেশের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার। পার্লামেন্টের উদ্বেগকে আমলে নিয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ সফরে আসছে ইইউ পর্যবেক্ষকদল।
সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, সরকারের ওপর রুষ্ট হয়ে জিএসপি সুবিধা বাতিলের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি নিয়ন্ত্রণে কোটাও আরোপ করতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আগামী জুলাই মাস থেকেই কোটা নির্ধারণ করে দেয়া হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে ব্যবসায়ীদের আভাস দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে যেসব ক্যাটাগরির তৈরী পোশাক অধিক সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয় সেগুলোর সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া হতে পারে বলেও সূত্র জানায়। অন্য দিকে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিতে যাচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। বিশেষ করে যেসব কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন নেই সেগুলো থেকে পণ্য আমদানি বন্ধের ঘোষণা দিতে পারে ইইউ। পাশাপাশি শ্রমিকদের নিরাপত্তার সব ধরনের ব্যবস্থা নেই এমন কারখানাগুলোকেও কালো তালিকাভুক্ত করতে পারে তারা।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের সামনে অন্ধকার ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। বিশ্ববাজারে আমরা মারাত্মক চ্যালেঞ্জিং অবস্থায় আছি। গত তিন বছরে আমাদের অবকাঠামো ব্যয় ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। আমাদের সক্ষমতা অনেক কমে গেছে। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক সঙ্কট। তিনি বলেন, প্রতি বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাজার বাড়ছে। এখন মোট রফতানির ৫৮ শতাংশ ইউরোপে রফতানি হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি জিএসপির সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয় কিংবা সীমিত করে, তাহলে দেশের রফতানি খাতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এমন কিছু হলে আমরা বাজারমূল্যে রফতানি করতে অনেক ক্ষেত্রে সক্ষমতা হারাব। জিএসপি সুবিধা না পেলে গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কট, উচ্চহারের ব্যাংক ঋণের সুদ আর দুর্বল অবকাঠামো নিয়ে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় সমতা হারাবে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে কোনো অঘটন ঘটলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অর্থনীতির স্বার্থে সমস্যাটির সন্তোষজনক সমাধান জরুরি।
গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে মোট ২৪ দশমিক ৩০২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিদেশে রফতানি হয়েছে। এর ৫৮ শতাংশই গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয়। এককভাবে আমেরিকায় রফতানি হয়েছে ২৭ শতাংশ পণ্য। কানাডায় রফতানির পরিমাণ পাঁচ শতাংশের মতো। বাকি ১০ শতাংশ পণ্য রফতানি হয়েছে অপরাপর দেশগুলোয়। ব্রাজিল, চিলি, পেরু, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্য, তুরস্ক, চীন, জাপান, কোরিয়া, ভারত প্রভৃতি বাজারে বর্তমানে যে পরিমাণ রফতানি হচ্ছে তা মোটেই উল্লেখ করার মতো নয়। এ অবস্থায় সরকারের একরোখা মনোভাবের কারণে ইউরোপ-আমেরিকার বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাংলাদেশের রফতানি খাত এবং এর ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা শিল্পসংশ্লিষ্ট কয়েক কোটি মানুষ ফতুর হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এমন একটি পর্যায়ে যেতে বসেছে, যেখানে জাতির অর্থনীতি ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাদের মতে, ড. ইউনূস ইস্যুতে বাংলাদেশ সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি কিনটনকে মুখের ওপর ‘না’ করে দেয়া, শ্রমিকনেতা আমিনুল ইসলামের হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে সরকারের অহেতুক গড়িমসি, টিকফা চুক্তিতে অসম্মতি এবং সবশেষ রাশিয়ার সাথে করা অস্ত্র ও পারমাণবিক চুক্তির কারণে দেশটির সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ইতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এ ক্ষেত্রে তাজরিন ফ্যাশনসের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, কর্মস্থলে শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতা, ইপিজেডগুলোয় শ্রমিক ইউনিয়ন চালুর ব্যাপারে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনগুলোর তৎপরতা, পদ্মা সেতু দুর্নীতি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি প্রভৃতি ইস্যুকে বাংলাদেশকে চাপ দেয়ার মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে হাতের কাছে পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার প্রাপ্তির জন্য এক যুগ ধরে চলমান প্রচেষ্টার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন আর কারো তেমন মাথাব্যথা নেই। কারণ, মোট রফতানির মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ বাংলাদেশী পণ্য যে জিএসপি সুবিধা দীর্ঘ দিন ধরে ভোগ করে আসছিল সেটিও মার্চের পর আর থাকছে না। আমেরিকার পথ ধরে বাংলাদেশের জন্য দরজা বন্ধ করতে যাচ্ছে ইইউভুক্ত দেশগুলোও। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ইইউভুক্ত দেশগুলো যেখানে এত দিন অস্ত্র ছাড়া সব পণ্যে (ইবিএ) শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দিয়ে আসছিল সেই ইইউ পার্লামেন্টে গত সপ্তাহে জোর দাবি ওঠে বাংলাদেশের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার। পার্লামেন্টের উদ্বেগকে আমলে নিয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ সফরে আসছে ইইউ পর্যবেক্ষকদল।
সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, সরকারের ওপর রুষ্ট হয়ে জিএসপি সুবিধা বাতিলের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি নিয়ন্ত্রণে কোটাও আরোপ করতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আগামী জুলাই মাস থেকেই কোটা নির্ধারণ করে দেয়া হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে ব্যবসায়ীদের আভাস দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে যেসব ক্যাটাগরির তৈরী পোশাক অধিক সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয় সেগুলোর সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া হতে পারে বলেও সূত্র জানায়। অন্য দিকে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিতে যাচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। বিশেষ করে যেসব কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন নেই সেগুলো থেকে পণ্য আমদানি বন্ধের ঘোষণা দিতে পারে ইইউ। পাশাপাশি শ্রমিকদের নিরাপত্তার সব ধরনের ব্যবস্থা নেই এমন কারখানাগুলোকেও কালো তালিকাভুক্ত করতে পারে তারা।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের সামনে অন্ধকার ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। বিশ্ববাজারে আমরা মারাত্মক চ্যালেঞ্জিং অবস্থায় আছি। গত তিন বছরে আমাদের অবকাঠামো ব্যয় ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। আমাদের সক্ষমতা অনেক কমে গেছে। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক সঙ্কট। তিনি বলেন, প্রতি বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাজার বাড়ছে। এখন মোট রফতানির ৫৮ শতাংশ ইউরোপে রফতানি হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি জিএসপির সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয় কিংবা সীমিত করে, তাহলে দেশের রফতানি খাতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এমন কিছু হলে আমরা বাজারমূল্যে রফতানি করতে অনেক ক্ষেত্রে সক্ষমতা হারাব। জিএসপি সুবিধা না পেলে গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কট, উচ্চহারের ব্যাংক ঋণের সুদ আর দুর্বল অবকাঠামো নিয়ে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় সমতা হারাবে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে কোনো অঘটন ঘটলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অর্থনীতির স্বার্থে সমস্যাটির সন্তোষজনক সমাধান জরুরি।
No comments