মতিঝিলে বাস কাউন্টারে দু'জনসহ রাজধানীতে চার জন খুন
রাজধানীতে চারটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এর মধ্যে মতিঝিলে জোড়া খুন হয়েছে। যাত্রাবাড়ীতে এক আইনজীবীকে ছুরিকাঘাতে
হত্যা করেছে ছিনতাইকারীরা।
উত্তরায় ফুটপাথ থেকে পলিথিনে
মোড়া এক ফুটফুটে নবজাতকের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় দু'জন
নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার পুলিশ ও মেডিক্যাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মঙ্গলবার
সকাল সাড়ে ৮টায় পুলিশ মতিঝিল থানাধীন ১৬৭নং আরামবাগের এস আলম পরিবহন
কাউন্টারের কৰ থেকে কাউন্টার পিয়ন ইলিয়াস হোসেনের (১৯) জবাই করা লাশ উদ্ধার
করে। তার পাশেই ব্যবসায়ী এসএমএ সুফিয়ানের (৪০) গলায় ফাঁস লাগানো লাশ ফোর
থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পরে পুলিশ দু'জনের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে
পাঠায়। পুলিশ জানায়, তিন মাস আগে অভাবের তাড়নায় এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ইলিয়াস
হোসেন আরামবাগ এস আলম কাউন্টারে পিয়নের চাকরি নেয়। রাতে সে কাউন্টারে
ঘুমাত। প্রতিদিনের ন্যায় আরামবাগ এস আলম পরিবহন কাউন্টারের সেলস
এক্সিকিউটিভ মনিরুজ্জামান বাইরে থেকে কাউন্টারের তালা মেরে তার হাতে চাবি
দিয়ে চলে যেতেন। ধারণা করা হচ্ছে, রাতের যে কোন সময় ব্যবসায়ী এসএমএ সুফিয়ান
পরিবহন কর্মকর্তাদের অজানত্মে পিয়ন ইলিয়াস হোসেনের কাছ থেকে চাবি নিয়ে
কাউন্টারের দরজা খুলে দু'জন এক সঙ্গে ঘুমাত। সন্ত্রাসীরা সম্ভবত ওই ফাঁকে
ঢুকেছিল। দু'জনকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যার পর পালিয়ে যায়। এস আলম পরিবহনের সেলস
এক্সিকিউটিভ মনিরুজ্জামান জানান, প্রতিদিনের ন্যায় সোমবার রাত ১২টায় পিয়ন
ইলিয়াসকে পরের দিন অন্য গাড়ি আসবে বিধায় তাকে নগদ ৮ হাজার টাকা দিয়ে যাই।
এরপর কাউন্টারের বাইরে দরজায় তালা ঝুলিয়ে পিয়ন ইলিয়াসের হাতে চাবি দিয়ে
যাই। যাতে পরের দিন সকালে গাড়ি এলে ইলিয়াস ভেতর থেকে তাদের চাবি দিলে তালা
খুলে দেয়। কিভাবে কাউন্টারে আরেক ব্যক্তি ঢুকল সে বিষয়ে পুলিশ কিছুই বলতে
পারেনি। তবে নিহত ব্যবসায়ী এসএমএ সুফিয়ানের সহকর্মী ব্যবসায়ী শাহিন পুলিশকে
জানায়, সুফিয়ানের গুলিস্তান সুন্দরবন মার্কেটে আধুনিক টেলিকম সেন্টার নামে
একটি মোবাইলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যবসায়িক কারণে সে ঋণগ্রস্ত হয়ে
পড়ে। ব্যাংকেও তার ঋণ রয়েছে। প্রায়ই দেনাদাররা তাকে খোঁজাখুঁজি করত। এজন্য
সম্প্রতি ঢাকার বাসা ছেড়ে স্ত্রী ও সন্তানকে দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে রাতে
দেওয়ানবাগ দরবারে ঘুমাত। তবে সুফিয়ান এস আলম কাউন্টারে কিভাবে এলো তা কেউ
নিশ্চিত করে বলতে পারেনি। তবে জোড়া খুনের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা
মতিঝিল থানার এসআই মোকাররম হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে
রাতের যে কোন সময় ব্যবসায়ী সুফিয়ান আরামবাগ এস আলম পরিবহন কাউন্টারে এলে
পিয়ন ইলিয়াস ভেতর থেকে তাকে চাবি দেয়। পরে ব্যবসায়ী সুফিয়ান দরজা খুলে
ভেতরে ঢুকলে সন্ত্রাসীরাও সেখানে ঢুকে পড়ে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সুযোগে
সন্ত্রাসীরা প্রথমে সুফিয়ানকে গলা টিপে হত্যা করে। পরে পিয়ন ইলিয়াসকে জবাই
করে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ দু'টি কাউন্টারের কৰে ফেলে পালিয়ে যায়। তিনি
জানান, সন্ত্রাসীদের টার্গেট ছিল ব্যবসায়ী সুফিয়ান। আর সন্ত্রাসীদের চিনে
ফেলায় পিয়ন ইলিয়াসকেও খুন করা হয়। এখনও পর্যনত্ম কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর একাধিক টিম হত্যাকারীদের চিহ্নিত
করার জন্য মাঠে নেমেছে। নিহত পিয়ন ইলিয়াসের পিতার নাম মোঃ শাহজাহান মিয়া।
গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার উত্তর মতলব থানার মায়াজনে। ৫ ভাই, ২ বোনের
মধ্যে সে তৃতীয়। এছাড়া নিহত ব্যবসায়ী সুফিয়ানের পিতার নাম মৃত আঃ রউফ।
গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সেনবাগ থানার বাটাকান্দিতে। এদিকে সোমবার গভীর
রাতে যাত্রাবাড়ী থানাধীন দয়াগঞ্জ রেল ব্রিজ সংলগ্ন নির্জন স্থানে
ছিনতাইকারীরা বিক্সাযাত্রী আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল ফারুককে (৪০) গতিরোধ করে।
এ সময় ছিনতাইকারীরা তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে নগদ টাকা ও মোবাইল সেট
ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পথচারীরা তাকে রক্তাক্ত আহত অবস্থায় উদ্ধার
করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা
করেন। নিহতের মামাশ্বশুর রাকিব হাসান খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে এ্যাডভোকেট
আব্দুলস্নাহ আল ফারুকের লাশ শনাক্ত করেন। তিনি জানান, নিহত আব্দুল্লাহ আল
ফারুক বিক্রমপুর মুন্সীগঞ্জ জেলা আদালতের আইনজীবী।
No comments