স্বাস্থ্য সড়ক ও ওয়াসার সব টেন্ডার যুবলীগ নেতার দখলে

রাজধানীতে আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে টেন্ডার সন্ত্রাসীরা। একের পর এক ঘটেই চলেছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। গত এক বছরে শুধু ঢাকা ওয়াসাতেই ৫০টিরও বেশি টেন্ডার সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে।
এ কাজে জড়িতরা অধিকাংশই সরকারি দলের সমর্থক। ওয়াসা ছাড়াও স্বাস্থ্য ও সড়ক খাতের সব টেন্ডার আওযামী যুবলীগের এক নেতার দখলে চলে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুস্পষ্ট অভিযোগ পাওয়ার পরও এদের বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে না কোনো আইনি ব্যবস্থা।

সরকারি দলের একটি প্রভাবশালী অঙ্গসংগঠনের ক্যাডাররা ওয়াসা ভবনে অবস্থান নিয়েছে, যাতে কেউ টেন্ডারপত্র জমা দিতে না পারে। রাজধানীর ফকিরাপুল পানির ট্যাঙ্ক মডস জোন-৬ অফিসে প্রকাশ্য দিবালোকে টেন্ডার ছিনতাই করা হয়েছে কয়েক দিন আগে। যুবলীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো: রফিকুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি সশস্ত্রদল মডস জোন-৬ অফিসের কর্মকর্তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৪৮টি শিডিউল ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, গত ২০ জানুয়ারি যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা ঢাকা ওয়াসার ঠিকাদার সমিতির সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন আহম্মেদ ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মানিক হোসেন মিন্টুকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর হস্তেেপ বিকেলে তাদের উদ্ধার করা হয়। ওই দিনই এ চক্রের সদস্যরা শাহবাগস্থ টেনিস কমপ্লেক্সের ভেতরে ঢুকে সব টেন্ডারের শিডিউল বিক্রি ও ড্রপ বন্ধ করে দেয়। অভিযোগ রয়েছে, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ও তার সহযোগীরা ঢাকা ওয়াসা কারওয়ানবাজারস্থ পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর ও ঢাকা সড়ক ভবনসহ বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানেরও সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করছে।

সশস্ত্র ক্যাডাররা বিভিন্ন ব্যাংকে অবস্থান নিয়েছে যাতে কেউ শিডিউল কিনতে না পারে। এতে সাধারণ ঠিকাদাররা শিডিউল কিনতে পারছেন না। কোনো ব্যাংক ওই যুবলীগ নেতার কথা ছাড়া বাইরের কারো কাছে শিডিউল বিক্রি করতে পারছে না। রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে বিজি প্রেসের মধ্যে রংধনু নামে একটি অফিস ওই নেতা ব্যবহার করছেন। রংধনু অফিসটি ঘিরে রয়েছে নেতাকর্মীদের আগমন। এসব ঘটনার আগে ঢাকা সড়ক ভবনেও টেন্ডার ছিনতাইয়ের ঘটনায় দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সে ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা হলেও এ চক্রের কোনো সদস্য আজো গ্রেফতার হয়নি। মামলাটি বর্তমানে হিমাগারে পড়ে আছে।

সূত্র জানায়, ঢাকা ওয়াসার চার কোটি টাকার টেন্ডার গত ৩০ জানুয়ারি ও চার কোটি টাকার আরো একটি টেন্ডার আগামীকাল ৪ ফেব্রুয়ারি দরপত্র আহ্বান করার কথা থাকলেও অতি গোপনে ৪৮টি শিডিউল বিক্রি করা হয়। এই শিডিউলগুলো জমা হওয়ার খবর শুনে যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম দু’দিন আগে ১৫-২০ জনের সশস্ত্র একটি দল সংশ্লিষ্ট অফিসে ঢুকে কর্মকর্তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৪৮টি শিডিউল ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনার পর ঢাকা ওয়াসার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করলেও শেষ পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি।

এর আগে গত ২০ জানুয়ারি টেন্ডার নিয়ে রাজধানীর শাহবাগ ও কারওয়ানবাজারে মতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাদের মধ্যে গোলাগুলি ও অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। ১৯ জানুয়ারি রাত ৩টায় যুবলীগ কর্মীরা র‌্যাব পরিচয়ে শাহবাগ টেনিস কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা অফিসে ঢুকে অতর্কিত গুলি ও ভাঙচুর চালিয়েছে। অন্য দিকে কারওয়ানবাজার ওয়াসা ভবনের সামনে থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ পরিচয়ে ১০টি মোটরসাইকেলে করে একদল সন্ত্রাসী ওয়াসার ঠিকাদার মহিউদ্দিন ও মিন্টুকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তুলে নিয়ে বেদম মারধর করে।

অপর দিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৮০ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে এই যুবলীগ নেতা ও স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদফতরের ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হকের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই চলছিল। পাঁচটি জেলায় নতুন ভবন নির্মাণ ও সংস্কারের এই টেন্ডার নিয়ে দুর্বৃত্তরা টেনিস কমপ্লেক্সে ঢুকে গুলি চালায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতর, ঢাকা ওয়াসা ও সড়ক ভবনসহ বেশির ভাগ অফিসের যাবতীয় টেন্ডার যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম ছাড়া অন্য কেউ যাতে কোনোভাবেই টেন্ডার ড্রপ না করে সে জন্য সেই অফিসগুলোতে রয়েছে করা নজরদারি। গোপনে কেউ শিডিউল কিনলেও তা নির্ধারিত সময়ে সন্ত্রাসীদের ভয়ে ড্রপ করতে পারছে না। যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো সমন্বয় না থাকায় শাহবাগ টেনিস কমপ্লেক্সের ভেতরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জিয়াউল হকের অফিসে ঢুকে গুলি চালায় এবং অফিসের পিওনকে মারধর করে। এ ঘটনার আগে সন্ত্রাসীরা ওই দিন ঢাকা ওয়াসার ঠিকাদার সমিতির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মিন্টুকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। ওই দিন তারা প্রায় অর্ধশত ফাঁকা গুলি চালায় ঢাকা ওয়াসা ভবনের সামনে।

ঢাকা ওয়াসার খুব শিগগিরই আরো কয়েকটি বড় অঙ্কের টেন্ডার আহ্বান করার কথা রয়েছে। কিন্তু যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে যারা টেন্ডার আহ্বান করবে তারাই শিডিউল কিনতে পারবে। অন্য কেউ ঢাকা ওয়াসার শিডিউল কিনলে তাকে অপহরণ করার হুমকি দিচ্ছে ওই নেতাকর্মীরা। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসাসহ সরকারের কয়েকটি অফিস এখন টেন্ডারবাজদের হাতে জিম্মি।
       

No comments

Powered by Blogger.