তিউনিসিয়ায় বিক্ষোভ-ধর্মঘট-নির্দলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব, এন্নাহদার 'না'

তিউনিসিয়ার প্রধানমন্ত্রী হামাদি জেবালি পার্লামেন্টে ভেঙে দিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। বিরোধীদলীয় নেতা শুখরি বিলুয়াইদের হত্যার প্রতিবাদে দেশজুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চরম আকার ধারণ করায় গত বুধবার রাতে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
তবে দলীয় ফোরামে আলোচনা না করে একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ক্ষমতাসীন দল এন্নাহদা গতকাল বৃহস্পতিবার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিরোধী দলগুলো সরকার পতনের দাবিতে গতকালও ব্যাপক বিক্ষোভ ও ধর্মঘট পালন করে। বিক্ষোভকারীদের হামলায় তিউনিসে এক পুলিশের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কয়েকটি শহরে এন্নাহদার কার্যালয়ে হামলা হয়। তিউনিসিয়ার প্রধান শ্রমিক সংগঠন আজ শুক্রবার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
তিউনিসিয়ার বামপন্থী বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক প্যাট্রিয়টস পার্টির নেতা বিলুয়াইদ গত বুধবার সকালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। রাজধানী তিউনিসে বিলুয়াইদের বাড়ির সামনেই খুব কাছ থেকে তাঁর মাথা ও ঘাড়ে গুলি করে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা। হত্যাকাণ্ডের জন্য বিলুয়াইদের পরিবার ও বিরোধী দলগুলো ক্ষমতাসীন দল এন্নাহদাহকে দায়ী করে। তাঁরা অভিযোগ করেন, বিলুয়াইদকে আগে থেকেই হুমকি দেওয়া হচ্ছিল এবং জানানোর পরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি লারাইদেহ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেন তাঁরা।
তবে বিলুয়াইদকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মোনসেফ মারজুকি ও প্রধানমন্ত্রী হামাদি। এন্নাহদা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দলের প্রধান রাশিদ ঘানৌচি বলেন, রাজনৈতিক হানাহানির পরিণাম এ হত্যাকাণ্ড। হত্যাকারীরা দেশকে আরো রক্তপাতের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানিসহ পশ্চিমা অনেক দেশ বিলুয়াইদ হত্যার সমালোচনা করে।
বিলুয়াইদের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী তিউনিসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হন। রাস্তায় ব্যারিকেড ফেলে তাঁরা শহরের কেন্দ্রে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেন। বিরোধীদলীয় জোট পপুলার ফ্রন্ট ব্লকের চারটি দল পার্লামেন্ট থেকে সদস্যদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। তারা সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
এদিকে বুধবার তিউনিসিয়ার গণতন্ত্রকামী গণআন্দোলনের সূচিকাগার সিদি বৌজিদে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। প্রায় ২০০ লোক পুলিশ সদর দপ্তর ঘেরাওয়ের চেষ্টা করলে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে পুলিশ। একই দিন পাশের শহর মেজজৌনা, মধ্যাঞ্চলীয় শহর গাফসা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর কেফে এন্নাহদার কার্যালয়েও হামলা হয়েছে।
ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী হামাদি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন। যত দ্রুত সম্ভব নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচন আয়োজনেরও ঘোষণা দেন। তবে তিনি নতুন সরকার গঠনের কোনো নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেননি।
এন্নাহদা নির্দলীয় ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন সরকার গঠনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসলামপন্থী দলটি প্রায় দেড় বছর আগে সর্বশেষ পার্লামেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পায়। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.