সীমানা নিয়ে তোপের মুখে ইসির কর্মকর্তারা by হামিদ সরকার

আওয়ামী লীগের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী জাতীয় সংসদের আসন সীমানা পুনর্বিন্যাস করে এখন চরম বিপাকে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বিষয়টি নিয়ে এখন ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তোপের মুখে পড়েছেন ইসির কর্মকর্তারা। সরকারি দলের অনেক বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য ুব্ধ। তাদের অভিযোগ আসন বিন্যাসে সংলাপে দেয়া প্রস্তাবকে কোনো আমলেই নেয়নি। এখানে কমিশনারদের নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে বলে রাজনীতিবিদদের অভিযোগ। এমনকি ইসির কমিশনারের আত্মীয়র স্বার্থে আসন তছনছ করা হয়েছে বলেও বাদল খন্দকার নামে একজন অভিযোগ করেছেন।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, সব পক্ষের মতামত উপক্ষো করে ৮৭টি আসনে ব্যাপক বা আংশিক পরির্বতন এনে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ খসড়ায় জেলাওয়ারী আসন সংখ্যায় কোনো পরির্বতন না এলেও অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন এসেছে ব্যাপক। ভোটার সংখ্যাকে এখানে আমলে নেয়া হয়নি। ফলে কোনো কোনো এলাকায় ভোটার সংখ্যা অস্বাভাবিক রাখা হয়েছে। কোনো আইনের তোয়াক্কা না করে, জনসংখ্যা বা ভোটার বৃদ্ধির বিষয়টিতে গুরুত্ব না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বেশির ভাগ আসনে পরির্বতন আনা হয়েছে। আর এ ধরনের অসামঞ্জস্যতার কারণে গতকাল দিনভর এই আসনগুলোর রাজনীতিবিদদের তোপের মুখে ছিলেন ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

দেখা যায়, ঢাকা-১৫ আসন ছিল ওয়ার্ড নং ৪, ১৩, ১৪ ও ১৬ নিয়ে। এখন করা হয়েছে ৭, ৮, ১১, ১২, ১৩ এবং সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে। ঢাকা-১৯ আসন সাভার উপজেলাকে নিয়ে করা হয়েছে। এই আসন থেকে বাদ দেয়া হয়েছে কাউন্দিয়া ইউনিয়ন। ফলে ওই এলাকার সাধারণ ভোটারেরা এখন ুব্ধ। তাদের বক্তব্য হলো আমরা কেন সাতসমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে ওপারে যাবো। কার স্বার্থে ইসি এই বিভাজন করল? ইসির খসড়ায় নবাবগঞ্জ-দোহার উপজেলার পরিবর্তে শুধু দোহার উপজেলা নিয়ে ঢাকা-১ আসন করা হয়েছে। নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে ঢাকা-২ আসন করা হয়েছে। কেরানীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে ঢাকা-৩ আসন করা হয়েছে। বিদ্যমান সীমানায় ঢাকা-২ এর কেরানীগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নকে ঢাকা-৩ এ দেয়া হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪, ১৪, ১৫ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকা নিয়ে ঢাকা-১৬ আসন করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড, উত্তরা, তুরাগ, বিমানবন্দর, উত্তরখান, দক্ষিণ খান, হরিরামপুর ও ডুমনি ইউনিয়ন নিয়ে ঢাকা-১৮ আসন করা হয়েছে। এই বিভাজন নিয়ে সরকারের অনেক মন্ত্রী ইসির কর্মকর্তাদের ফোন করছেন। যেভাবে আসন বিন্যাস করা হয়েছে এতে কোনো আসনে ভোটার তিন লাখ ও কোনো এলাকায় ভোটার ৫০ হাজারও হয়েছে।

চিত্র পরিচালক বাদল খন্দকারের অভিযোগ কুড়িগ্রাম-৩ আসনকে ভেঙে তছনছ করা হয়েছে কমিশনার আবু হাফিজের স্বার্থে। ওই এলাকায় তার বাড়ি। ওই কমিশনারের ভাগ্নি জামাই আগামী সংসদ নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের হয়ে নির্বাচন করবেন। তাই তার স্বার্থে আসন পুনর্বিন্যাসের নামে তছনছ করা হয়েছে। তিনি শিগগিরই ইসির কাছে আপিল জানাবেন।

আওয়ামী লীগের ঢাকা-১৫ আসনের এমপি কামাল আহমেদ মজুমদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার নির্বাচনী এলাকা থেকে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বাদ দিয়ে অহেতুক একটি ইউনিয়নকে যুক্ত করা হয়েছে। কোথায় সাভার আর কোথায় মিরপুর। কাউন্দিয়া ইউনিয়নের সাথে এই আসনের কী সম্পর্ক আমার বুঝে আসে না। তিনি এই আসন বিন্যাসের ব্যাপারে ইসিতে আপিল করবেন। তাকে কাউন্দিয়ায় যেতে হলে ঢাকা-১৪ আসনের ওপর দিয়ে যেতে হবে। তার প্রশ্ন কোন যৌক্তিকতায় এটা করা হয়েছে?

No comments

Powered by Blogger.