বালিয়ার পীর মাওলানা গিয়াস উদ্দীন (রহ.) by জহির উদ্দিন বাবর

কয়েক মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন শীর্ষ আলেম চলে গেলেন। এই মিছিলে সর্বশেষ যোগ দিলেন বালিয়ার পীর খ্যাত মাওলানা গিয়াস উদ্দীন (রহ.)। গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে তিনি ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি স্ত্রী, ৮ ছেলে, ১২ মেয়েসহ অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী রেখে গেছেন।
তার ইন্তেকালের খবরে সারাদেশের আলেম-ওলামা ও দ্বীনদার মুসলমানের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, একজন আলেমকে হারানো মানে আলমকে (জগত) হারানো। মূলত বালিয়া পীরের মতো আলেমদের ক্ষেত্রেই তা বলা হয়েছে। তার চলে যাওয়ায় ব্যথিত হয়েছে লাখো অন্তর। নীরব অশ্রুতে সিক্ত হয়েছে অগণিত মানুষের চোখ। হাজারো জনতা তাকে হারিয়ে অভিভাবক হারানোর ব্যথা অনুভব করেছে।
১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ছিল ময়মনসিংহের ফুলপুরের বালিয়া মাদ্রাসার ৯৪তম বার্ষিক বড় সভা। এতে লাখ লাখ লোকের উপস্থিতিতে বোখারি শরিফের খতম শেষে রাত ১২টায় মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা গিয়াস উদ্দীন (রহ.)। তার হৃদয়ভেজা মোনাজাতে তৃপ্ত হন হাজার হাজার দ্বীনদার মুসলমান। এক পর্যায়ে সভাস্থলেই তিনি অসুস্থ বোধ করেন। দ্রুত তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার ভোর ৫টার দিকে তিনি ইন্তেকাল করেন। আল্লামা গিয়াস উদ্দীন (রহ.) ছিলেন বৃহত্তর ময়মনসিংহের আলেমদের ঐক্যবদ্ধ পল্গাটফর্ম ইত্তেফাকুল উলামার সভাপতি। শুধু বৃহত্তর ময়মনসিংহ নয়, জাতীয় পর্যায়েও আলেমদের মধ্যে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন। বিভিন্ন ইস্যুতে শীর্ষ আলেমদের মধ্যে তার সরব ভূমিকা থাকত। বিশেষত বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে তিনি ছিলেন আলেমদের অন্যতম অভিভাবক। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখা এবং সঠিক সময়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সবার আস্থার জায়গা। এ অঞ্চলের বিভিন্ন দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বালিয়ার পীর (রহ.)। তিনি তার বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা এবং ইখলাসের গুণে সব সমস্যার সমাধান করতে পারতেন। এজন্য আলেম-ওলামার কাছে তিনি ছিলেন সর্বজনস্বীকৃত মুরবি্ব। মাওলানা গিয়াস উদ্দীন (রহ.) ১৯৩৮ সালে ময়মনসিংহের ফুলপুরের বালিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পরে তিনি নিজের গ্রামের নামে 'বালিয়ার পীর সাহেব' হিসেবে দেশ-বিদেশে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি প্রাথমিক পড়াশোনা সম্পন্ন করেন বালিয়া মাদ্রাসায়। এর পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন সিলেটের গহরপুর মাদ্রাসায়। সর্বজনস্বীকৃত ওলি আল্লামা নূরউদ্দীন গহরপুরী (রহ.) ছিলেন বালিয়া পীরের একান্ত ওস্তাদ ও আধ্যাত্মিক রাহবার। তিনি তার ওস্তাদ ও পীর সম্পর্কে নিজের অনুভূতির কথা লিখেছেন এভাবে, 'আমার জীবনে হজরত নূরউদ্দীন গহরপুরীর (রহ.) অবদান ও অনুগ্রহের কথা আমি বলে শেষ করতে পারব না। আমার জীবন গঠন ও ইলমে দ্বীন হাসিলের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা তার। তিন বছর তার কাছে পড়েছি। এর পর সাত বছর তার অধীনে শিক্ষকতা করেছি। সারাজীবন তার অনুগ্রহ বয়ে চলেছি।' আল্লামা গহরপুরীর (রহ.) ইন্তেকালের পর বালিয়ার পীর (রহ.) ছিলেন তার প্রধান মুখপাত্র। ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলের দ্বীনদার মুসলমানরা তার কাছ থেকে নানাভাবে উপকৃত হয়েছেন। তিনি দরসে হাদিস, ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে মুসলমানদের খেদমত করে গেছেন নিরলসভাবে। দেশের বাইরে লন্ডনে অবস্থানরত বাঙালিরাও তার দ্বারা উপকৃত হতেন। তার বিদায়ে আলেমরা হারিয়েছেন তাদের একজন দরদি অভিভাবককে, আর দ্বীনদার মুসলমানরা বঞ্চিত হয়েছেন একজন সুযোগ্য আলেম-ওলির উপকার থেকে। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন।
zahirbabor@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.